জাতীয়রাজনীতি

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সিআইএ’র স্বরুপ: প্রসঙ্গ ১৫ আগস্ট

সুদীপ্ত শাহিন:  মার্কিন সেনাবাহিনী ১৯৬৮ সালের ১৬ মার্চ ভিয়েতনামের ‘মাই লাই’ গ্রামে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তারা গুলি ও বেয়োনেট চার্জ করে ৫০৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে; তার মধ্যে ১৮২ জন মহিলা যাদের ১৭ জনই ছিল গর্ভবতী এবং ১৭৩ জন শিশু-কিশোর যার মধ্যে ৫৪ জন ছিল কোলের শিশু। মার্কিন কর্তৃপক্ষ এই লোমহর্ষক ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। সেইমুর হার্শ নামে এক অনুসন্ধানী সাংবাদিকই প্রথম তার রিপোর্টে এই ভয়ঙ্কর বিভীষিকাময় ঘটনা উন্মোচন করে বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত ও শিহরিত করেছিলেন।

লরেন্স লিফশুলজ একজন মার্কিন সাংবাদিক। যিনি ফার ইস্টার্ন ইকনোমিক রিভিউ, দ্য গার্ডিয়ান, ইকনোমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি ও দ্য ন্যাশন নামক পত্রিকায় তদন্ত সাংবাদিক ও দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ‘আবু তাহেরের সাক্ষ্যঃ বাংলাদেশ- একটি অসমাপ্ত বিপ্লব’ নামক বইয়ের জন্য তিনি আমাদেও দেশে বহুল পরিচিত। এই বইতে তিনি বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ও তার পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্পর্শকাতর ইতিহাস কর্নেল আবু তাহেরের ভাষ্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

১৯৭৫ নিয়ে প্রথম হাটে হাঁড়ি ভাঙেন সেইমুর হার্শ । ফলে সিআইএ’র অপকর্মের তদন্তে চার্চ ও পাইক কমিটি গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালের ২২ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস-এ হার্শের রিপোর্ট ঝড় তুলেছিল। হার্শ প্রথম এ ব্যাপারটি উন্মোচন করেছিলেন যে সিআইএ মার্কিন নাগরিকদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছে। তারা আড়ি পাতছে। এ তথ্যে মার্কিন নাগরিকেরা বিস্মিত হয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৫ সালকে তাই বলা হয় ইয়ার অব ইন্টেলিজেন্স বা গোয়েন্দাবর্ষ।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর যাত্রা শুরু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে, সাতচল্লিশের সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের হাত ধরে। এই ট্রুম্যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানিদের আত্মসমর্পণ ত্বরান্বিত করতে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ট্রুম্যান সৃষ্ট এই সিআইএ জন্মলগ্ন থেকেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক গোলযোগ সৃষ্টি করছে, সামরিক অভ্যুত্থান ঘটাচ্ছে, অনেক দেশের নির্বাচিত সরকারগুলোকে উৎখাত করছে। এমনকি স্বাধীনতা ও মুক্তি আন্দোলনের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করে নিজেদের পছন্দসই সরকার প্রতিষ্ঠা করছে। সিআইএ’র গোপনীয়তার দেয়াল এতই শক্তিশালী যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তেমন কোনো অভিযোগ উত্থাপন করা যায় না। যেকোনো অভিযোগই অস্বীকার করতে পারে সংস্থাটি। সিআইএ’র অবসরপ্রাপ্ত এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা টম ডনোহ-ই স্বয়ং এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সিআইএ এমন কিছুই করে না, যা অস্বীকারের ক্ষমতা তার নেই।’ তবে সিআইএ’র অনেক অপকর্ম সচিত্র তুলে ধরেছেন উপরেল্লিখিত প্রথিতযশা দুই মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক সেইমুর হার্শ ও লরেন্স লিফশুলজ ।

সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে শেখ মুজিবের সরকারের সময় নাকি তাদের ২০ জন এজেন্ট সক্রিয় ছিলো; দুজন রীতিমতো শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায়। সেই কেজিবি ১৯৭৫ সালে বলেছিল, ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ে সিআইএ সরাসরি জড়িত নয়। পরবর্তীতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং বা র’-এর সাবেক কর্মকর্তা আর কে যাদব তাঁর বই মিশন আর অ্যান্ড আ ডব্লিউতে লিখেছেন, ‘তারা সরাসরি জড়িত না থাকলেও অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া কারও কারও ওপর ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সিআইএ কর্তাদের আশীর্বাদ ছিল।’
১৯৭৫-এ সিআইএর পরিচালক ছিলেন উইলিয়াম কলবি, কেজিবির চেয়ারম্যান ইউরি আন্দ্রোপভ। ১৫ আগস্ট সম্পর্কে তাঁদের তেমন কোনো ভাষ্য জানা যায় না। সেদিক থেকে কাও (প-িত জওহরলাল নেহরুর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কাও সিআইএ ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোশাদের ছাঁচে গড়ে তুলেছিলেন ‘র’) ব্যতিক্রম। সানডে’র ২৩-২৯ এপ্রিল ১৯৮৯ সংখ্যায় তিনি এ সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলেন। কাও লিখেছেন, ডিসেম্বর ১৯৭৪-এ তিনি নিজে ঢাকায় এসে মুজিবকে এ ষড়যন্ত্রের খবর দেন। কিন্তু মুজিব সেটি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘ওরা আমার সন্তান। আমার কোনো ক্ষতি ওরা করবে না।’

কাও আরও লিখেছেন, ‘প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে মার্চ ১৯৭৫-এ আমি ঢাকায় পাঠাই। শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে তিনি জানান যে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া ও গোলন্দাজ অংশের দুটি ইউনিটে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এসব সতর্কবার্তায় তিনি কান দেননি।’

অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের খবর কাও কীভাবে পেয়েছিলেন? মুজিবের খুব ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন, ‘এসব তথ্য পাওয়া গেছে নাজুকভাবে রোপণ করা এক সূত্র থেকে। যেকোনো মূল্যে তার গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে।’

কেজিবির এক সপক্ষত্যাগী কর্মকর্তা ছিলেন ভাসিলি মিত্রোখিন। অতি গোপনীয় মহাফেজখানা থেকে হাতে নথি লিখে, জুতার ভেতরে করে এনে, রাত জেগে পরিত্যক্ত দুধের কার্টনে টাইপ করে, বাগানের মাটিতে তিনি পুঁতে রেখেছিলেন। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্সের সাহায্যে ১৯৯২ সালে সেসব ব্রিটেনে আনেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্চিল আর্কাইভস সেন্টারে মিত্রোখিনের নথিগুলো ৩৩টি বাক্সে সংরক্ষিত। এখন দেখা যাবে তার মধ্য থেকে ১৯টি।

১৯৭৫-এর ১৫ ও ১৬ আগস্টে প্রস্তুত সিআইএ’র দুটি নথি পাওয়া যায় সিআইএ’র মেরিল্যান্ড মহাফেজখানায়। অভ্যুত্থানের বিবরণ সেখানে মামুলি। তবু সেখানেও কিছু অংশ অপ্রকাশিত। ১৫ আগস্ট সিআইএ বলেছে, ‘সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান করেছে।’ ২১ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালেই তারা বলেছিল, ‘মুজিব সরকারের পরিবর্তন হবে এক আকস্মিক আঘাতে। তাঁর উত্তরসূরি আসবে তাঁরই দল থেকে।’

১৯৭৪ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৫-এর জানুয়ারি মাসে দূতাবাসের মধ্যে দফায় দফায় মিটিং হয়। মার্কিন গোয়েন্দা চক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার সঙ্গে আমেরিকা কীভাবে, কতখানি যুক্ত- তা প্রকাশ করেছেন মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুলজ তাঁর ‘বাংলাদেশ : দ্যা আনফিনিসড রেভ্যুলেশন’ গ্রন্থে। লিফশুলজ বলেছেন, দূতাবাসের এই প্রকাশ্য মিটিং বন্ধ হয়ে গেলেও ঢাকাস্থ সিআইএ’র স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরী তার চ্যানেল ওপেন রাখেন। লিফশুলজ নিউইয়র্কের ‘দি নেশন’ পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক কাই বার্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন সমীক্ষা চালিয়ে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছান যে, শেখ মুজিব হত্যায় আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

ঐ বইয়ে লিফশুলজ আরো কয়েকটি তথ্য তুলে ধরেছেন- এক. মার্কিন বিদেশ দপ্তরের অফিসাররা তাঁদের বলেছেন, যে চক্রটি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে তাদের প্রতিনিধিগণ ১৯৭৪ সালের শরৎকালে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে এসে এ ব্যাপারে সাহায্য চায়। দুই. ঐ বিদেশ দপ্তরের সূত্র থেকেই জানা যায়, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সিআইয়ের স্টেশন চিফ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার দিন পর্যন্ত চক্রান্তকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ঐ সূত্রেই লিফশুলজকে জানিয়েছে যে, মাহবুবুল আলম চাষী, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, এবিএস সফদার ছিলেন তখন মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’র মুখ্য এজেন্ট। এই সফদার যুক্তরাষ্ট্রে সিআইয়ের পোষকতায় পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের আগস্টে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা সে অনেকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দিয়েছিল।

ঢাকার সিআইএ’র স্টেশন চিফ (১৯৭৪-১৯৭৬) ফিলিফ চেরি ভারতীয় সাংবাদিক পরেশ সাহাকে (ঢাকায়) বলেছেন, ঘাতক চক্রের সঙ্গে সিআইএ’র যোগাযোগটা এত ভালো ছিল যে, অভ্যুত্থানের খবর পেয়ে তারা অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে পেরেছিলেন। ফিলিপ স্বীকার করেন যে, তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রে খবর পাঠান, তখনও (ঢাকায়) অভ্যুত্থান চলছিল।

স্টেশন চিফ ফিলিপ চেরি অপর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ব্যাপারটা তিনি খুব ভালোভাবেই জানতেন। কিন্তু… চেরি তাঁর কথা শেষ করেননি। তা শেষ না করলেও বোঝা যায়, তিনি কি বলতে চেয়েও বলতে পারেননি। সম্ভবত তিনি বলতে চেয়েছিলেন, যা ঘটেছে সে সম্পর্কে সব কিছুই তাঁর আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্তু সরকারি গোপনীয়তা রক্ষার জন্য সেসব কথা বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

এদিকে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস তিন দিন আগেই পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট ছুটির দিন ঘোষণা করেছিল। এ ছুটি ছিল তালিকা বহির্ভূত। ওই দিনই শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এক্ষেত্রে যে কারো মনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে ১৫ই আগস্ট হঠাৎ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল কেন? এর উত্তরটাও বেশ সহজ, কেননা তাদের কাছে আগাম খবর ছিল, ঐদিন সৈন্যবাহিনীর একদল চক্রান্তকারী অফিসার শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করবে। অন্যদিকে ঐ বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহে মাহবুবুল আলম চাষী ছিল তার রাঙামাটির খামার বাড়িতে। দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়ায় সে কুমিল্লায় আসে। ১৫ আগস্টের দিন-তিনেক আগে সে গা ঢাকা দেয় ঢাকায়। ১৫ই আগস্ট এর পর তাকে দেখা যায় ঢাকা বেতার কেন্দ্রে। নতুন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাকের পাশে।
শেখ মুজিব হত্যার সঙ্গে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের যে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল এ বিষয়টি আরো কয়েকটি ঘটনা বিশ্লেষণে বেশ পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়। হত্যার প্রথম ঘোষণা আসে ওয়াশিংটনে ‘ভয়েস অব আমেরিকা’ থেকে। এই ঘোষণা দ্রুত পৃথিবীময় ছড়িয়ে যায়, তখনও অভ্যুত্থানের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। হত্যাকারীদের গাড়িগুলো তখনও ঢাকার রাজপথ কাঁপিয়ে এদিক সেদিক ছুটোছুটি করছে।

আগেই থেকেই ১৫ই আগস্ট দূতাবাসের ছুটির দিন বলে ঘোষণা করা হলেও সারারাত ঐ দূতাবাসে ছিল অসীম কর্মব্যস্ততা। দূতাবাসের উচ্চপদস্থ অফিসারদের অধিকাংশই সেদিন অফিসে রাত কাটিয়েছেন। এ বিষয়ে ভারতীয় সাংবাদিক পরেশ সাহা তাঁর ‘মুজিব হত্যার তদন্ত’ বইয়ে বলেছেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি, শেখ মুজিবকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন রাতে মার্কিন দূতাবাস খুবই কর্মচঞ্চল ছিল। উচ্চপদস্থ অনেক অফিসারই সেদিন ঘুমোতে যাননি।

আবার পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট সকাল থেকে আবছা মেঘের আড়ালে একটি গাড়ি ঢুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গাড়িটি পূর্ব দিক থেকে পাশ্চিম দিকে যায়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাস্তায় কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে বাইরে চলে যায়। ওই সময় শেখ মুজিবের বাড়িতে গোলাগুলি চলেছে। গাড়িটির বিবরণ ও প্লেট নম্বর দেখে অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম নিশ্চিত হন যে, গাড়িটি মার্কিন দূতাবাসের। ১৫ আগস্ট সকালে ওই গাড়িটি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। আবার অন্যতম ঘাতক ফারুক বলেছেন, তার লোকেরা যখন হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছিল তখন ঢাকার রাজপথে বহুসংখ্যক মার্কিন দূতাবাসের গাড়ির আনাগোনায় তিনি অবাক হয়ে যান।
প্রশ্ন হলো- সিআইএ কেন শেখ মুজিবকে হত্যা করবে ? রাজনীতি বিশ্লেষকরা ৯ আগস্ট দিল্লিতে ভারত ও সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ঘটনাকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করেন। উপমহাদেশে মার্কিন আধিপত্যের ক্ষেত্রে এটিকে হুমকি বিবেচনা করা হয়। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এ চুক্তি সে সময়ের ভ-ূরাজনীতিতে একটি নিয়তি-নির্ধারক পদক্ষেপ হিসেবে আবির্ভূত হয়। চুক্তিটির মূল কথা ছিল তৃতীয় কোনো দেশ ভারতকে আক্রমণ করলে বা আক্রমণের হুমকি দিলে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।

কারণ হলো ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালে সেন্টো-সিয়াটোর চুক্তিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাজনৈতিক সখ্যতা গড়ে তোলে। অন্যদিকে চীন-ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় মার্কিন বিরোধী লড়াই চলমান থাকায় তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কেন্দ্র করে ভারত মহাসাগরীয় রণনীতি গ্রহণ করে। এই সূত্র ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ভারত ১৯৬২ সালে চীন এবং ১৯৬৫ সালে কাশ্মীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সর্বশেষ ১৯৭১ সালের যুদ্ধ চলাবস্থায় ৯ আগস্ট ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে যাওয়ার অবস্থা। যার প্রতিশোধ হয়তো যুক্তরাষ্ট্র সিআইএ-কে দিয়ে বিভিন্নভাবে নিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত।

আরো রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৫৩ সালে জোসেফ স্তালিনের রহস্যজনক মৃত্যুর পর সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্রমে ক্রমে পুঁজিবাদে পুনরাবর্তিত হয়ে সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদে রুপ নেয়। পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার প্রতিভু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে বাজার প্রভাব বলয় নিয়ে দ্বন্দ্বে কথিত শীতল যুদ্ধের পর্ব শুরু করে। ফলে পৃথিবীব্যাপী বাজার দখল, পুনর্দখল নিয়ে এই দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্ব সারাবিশ্বকে অস্থির করে তোলে। আমেরিকা ‘গণতন্ত্রের’ নামে এবং সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ‘সমাজতন্ত্রের’ নামে পাল্টাপাল্টি দখল-আধিপত্য বিস্তার করে। কেজিবি’র প্রতিদ্বন্দ্বি হয়ে তখন দেশে দেশে সিআইএ ক্যু, পাল্টা ক্যু ও হত্যাযজ্ঞ চালায়।

সিআইএ’র সেই তান্ডবলীলার অংশ হিসেবে ১৯৫৩ সালে ইরানের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে একনায়ক শাহ সরকারের পত্তন করেছিল সিআইএ। পেছনে কাজ করেছিল জ্বালানি স্বার্থ, যা মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন নীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে আজও। ইরানের পর ১৯৫৪ সালে গুয়েতেমালার প্রেসিডেন্ট কার্লোস কাস্টিলো আর্মস, ১৯৬১ সালের কঙ্গোর স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা প্যাট্রিস লুমুম্বা, ১৯৬১ সালে দক্ষিণ আমেরিকার ডোমিনিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল লিওনিদাস ট্রুজিলো, ১৯৬৩ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট নগো দিন দায়েম, ১৯৬৪ সালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জোয়াও গুলার্ত, ১৯৭৩ সালে চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদোর আলেন্দে এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা সহ ৬০-৭০ দশকে বিভিন্ন কিলিং মিশন পরিচালনা করে সিআইএ।

 

 

 

 

9 thoughts on “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সিআইএ’র স্বরুপ: প্রসঙ্গ ১৫ আগস্ট

  • Кто ты есть на самом деле? В чем твое предназначение?
    В каком направлении лежит твой путь и как тебе по
    нему идти?
    Дизайн Человека расскажет об этом!

    – Даёт право быть собой – Позволяет выстроить
    эффективную стратегию жизни и карьеры
    – Снижает тревожность при выборе
    – Позволяет жить в согласии со своей природой
    – Даёт право быть собой – Даёт опору на природные механизмы – Снижает тревожность при выборе
    – Укрепляет доверие к себе – Снимает давление социальных стереотипов

    Дизайн Человека позволяет принимать решения в условиях неопределённости, опираться на себя и свой внутренний компас.

  • Кто ты есть на самом деле?

    В чем твое предназначение? В каком направлении лежит твой путь и как тебе по нему идти?

    Дизайн Человека расскажет об этом!

    – Уменьшает внутренние конфликты
    – Даёт конкретные рекомендации по принятию решений – Позволяет выстроить эффективную стратегию жизни и карьеры – Даёт право быть собой
    – Даёт ощущение целостности
    – Даёт ощущение целостности – Позволяет жить в согласии со своей природой – Снижает тревожность при выборе
    – Даёт ощущение целостности

    Типы известны нам, как: Манифестор, Рефлектор, Генератор и Проектор.
    Определить тип личности. Узнать тип.
    4 типа людей. Дизайн Человека.

  • 888starz platformasi haqida ma’lumot olish uchun 888starz rasmiy ilovasini yuklab oling va xizmatlardan to‘liq foydalaning. Ushbu dastur sport stavkalari va kazino o‘yinlarini amalga oshirish uchun eng yaxshi tanlov hisoblanadi. Yuklab olish bir necha daqiqa davom etadi va barcha foydalanuvchilar uchun moslashtirilgan.

  • ШҐШ°Ш§ ЩѓЩ†ШЄ ШЄШЁШ­Ш« Ш№Щ† Щ…ЩѓШ§ЩЃШўШЄ Ш§ШіШЄШ«Щ†Ш§Ш¦ЩЉШ© Щ€ШЄШ¬Ш±ШЁШ© Щ…Ш«ЩЉШ±Ш©ШЊ Щ‚Щ… ШЁШІЩЉШ§Ш±Ш© https://888starz-egypt.online/ Ш§Щ„ШўЩ†.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *