আগামিকাল আব্দুল খালেক লস্করের শোকসভা
বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, যশোর জেলা কমিটির সভাপতি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের যশোর জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক লস্কর (৮৩) গত ১৮ জুন মৃত্যুবরণ করেন।তার মৃত্যুতে আগামীকাল ২৬ জুন বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় যশোর জেলার বাঘারপাড়ার উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়নের বেতালপাড়া বাজারে তার শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির যশোর জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোহরাব উদ্দিন মাস্টারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখবেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শ্রমিকনেতা শাহ আলম ভূঁইয়া, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্তসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। শোকসভাকে সফল করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আমৃত্যু বিপ্লবী প্রখ্যাত কৃষকনেতা আব্দুল খালেক লস্কর চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে ১৯৪২ সালে ১৫ নভেম্বর যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানাধীন জহুরপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। পিতার নাম আজিজুর রহমান লস্কর, মাতা ফুলজান নেসা, এবং একমাত্র চাচা বজিজুর রহমান লস্কর। সাত ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন জেষ্ঠ্য। তার একমাত্র ভাই মোস্তফা কামাল। আব্দুল খালেক লস্কর চার পুত্র ও পাঁচ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। আব্দুল খালেক লস্কর ১৯৫০ সালের দিকে প্রেমচারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে খাজুরা এম.এন. মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি একজন কৃতি ফুটবলার ছিলেন। গন্ডিবদ্ধ প্রচলিত শিক্ষায় তার মন বসতো না। তাই মা-বাবার মন রক্ষায় স্কুলে যেতেন। খাজুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে পরিচয় হয় সংগ্রামী নেতা কমঃ আমজাদ হোসেনের সাথে। তিনি ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি (এম.এল)-এর পার্টি গ্রুপ এ সংগঠিত হন। তার সাথে অপর যারা ছিলেন, তন্মধ্যে কমঃ নূর জালাল (সম্পাদক), কমঃ বিশ্বনাথ বোস, কমঃ আমজাদ হোসেন ও কমঃ আব্দুল খালেক। ছাত্রাবস্থায় শিক্ষক আমজাদ হোসেনের (বিএসসি) সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে উঠে এবং কমঃ আসাদ ও মানিক-এর সাথে ছাত্র ইউনিয়নের পাঠচক্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচন বর্জন প্রক্রিয়ায় সামিল ছিলেন। এরপর পার্টির লাইন কার্যকরি করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন এবং ব্যাপকভাবে কৃষকদের মাঝে সংগঠন গড়ে তোলেন এবং প্রশংসিত হন।
যুবলীগ-রক্ষীবাহিনীর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তিনি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় তার নেতৃত্বে এলাকা মুক্তাঞ্চল ঘোষিত হয়। তার এলাকায় পার্টির নেতৃত্বে বিচার কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে মকসেদ আলী মোল্যাকে মনোনিত করা হয়। এই কমিটির সিদ্ধান্তে এলাকার ভূ-স্বামীদের ফসল দখলের কর্মসসূচি গ্রহণ করা হয়। অসংখ্য গরিব ও ভূমিহীন কৃষকদের অংশগ্রহণে প্রথমে তার পিতা আজিজুর রহমান লস্করের জমির ফসল লুট করা হয়। বিপুল সংখ্যক গরিব ও ভূমিহীন কৃষকের অংশ গ্রহণের ফলে প্রতিপক্ষ ভু-স্বামীদের লাঠিয়ালরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য ওই সময় কমঃ আবদুল হক ও কমঃ হেমন্ত সরকার ঘটনাস্থলের আশেপাশে অবস্থান করছিলেন বলে জানা যায়। এ ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক পুলিশ-রক্ষীবাহিনী তান্ডব শুরু হয়। গ্রেফতার এড়াতে আব্দুল খালেক লস্কর ঝিনাইদহ জেলার হলিধানী বাজারে ঘরভাড়া নিয়ে ডাক্তারি শুরু করেন। প্রকাশ থাকে যে জনৈক হোমিও চিকিৎসক মোমিন বিশ্বাসের নিকট তার চিকিৎসার হাতেখড়ি। সত্তরের দশকের শেষের দিকে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার এবং পাঁচ বছরের সাজা হয়। এ সময় তিনি বৃহত্তর যশোর জেলা পার্টির দ্বায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭২-৭৩ সালে কিছুদিন যশোর ঘোপ জেলরোডস্থ উমেদ আলী গাজীর বাড়ীতে ভাড়া থাকতেন এবং ডিলারশিপ যোগাড় করে সেনানিবাসে খাদ্য সরবরাহ করতেন। এ সময়ে ১৯৭৯-৮০ সালে সংশোধনবাদী তিন বিশ্ব তত্ত্বের প্রভাবে নুরুল হুদা কাদের বক্স-বিমল বিশ্বাস গং এদেশের প্রগতিশীল বিপ্লবী গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তিকে স্বমূলে উৎপাটিত করার আন্তর্জাতিক ও জাতীয় ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত তিন বিশ্ব তত্ত্বের পক্ষাবলম্বন করলে এর বিরুদ্ধে বিপ্লবী, গণতান্ত্রিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তি ও ধারাকে রক্ষা এবং অগ্রসর করার সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মাষ্টার ইমান আলীদের পক্ষে কৃষক সংগ্রাম সমিতিকে এগিয়ে নিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি কারামুক্ত হন। এরপর তিনি গণসংগঠন তথা বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে আসিন হন। উল্লেখ্য কারামুক্ত হয়ে তিনি কিছুদিন মাগুরায় চিকিৎসা সেবা দিতেন এবং কৃষক সংগ্রাম সমিতির মাগুরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতেন। এই সময়কালে স্থানীয় আওয়ামী যুবলীগের পান্ডারা তার গ্রামের বাড়ীতে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট এবং পরিবারের সদস্যদের মারপিট পর্যন্ত করে। বাড়ির গরু-বাছুর লুট করে নিয়ে যায়। তবুও তিনি সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে পিছিয়ে আসেননি। তিনি ২০১০ সালে কৃষক সংগ্রাম সমিতির যশোর জেলা কমিটির সভাপতি, এরপর কেন্দ্রীয় সদস্য, ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের যশোর জেলা সহ-সভাপতি ও সর্বশেষ ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
(প্রেস বিজ্ঞপ্তি)