নেত্রকোণা হোটেল মালিকদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন থাকার আহবান
নেত্রকোণা জেলায় বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠানে শ্রমরত শ্রমিকরা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন লেখালেখি করছেন। কয়েকজন শ্রমিকের ফেসবুক ওয়ালে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে একটি লেখা শেয়ার হতে দেখা যায়। পাঠকদের জানার জন্য লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
নেত্রকোনা জেলার হোটেল শ্রমিকদের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের আন্দোলনে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন থাকুন:
নেত্রকোনা জেলা হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারি শ্রমিক ইউনিয়নের ৭ দফার আন্দোলন দমনের জন্য মালিকরা বিভিন্নরকম ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালাচ্ছে। মূলত হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেক্টরে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬, বিধিমালা-২০১৫ (অদ্যাবধি সংশোধিত) বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতেই এই ৭ দফা। এর সাথে যুক্ত রয়েছে ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। অথচ মালিকরা অপ-প্রচার চালাচ্ছে যে, শ্রমিকদের উত্থাপিত ৭ দফা নাকি আইন বহির্ভুত। বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে যে- “৭ দফা বেআইনি, যারা এই দাবি জানাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করা হবে।”।
দু:খজনকভাবে শ্রমিকদের কাছে শোনা যাচ্ছে যে, মালিকদের ইন্ধনে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য যেয়ে শ্রমরত শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে অমূলক ভয় দেখাচ্ছে। শ্রমিকদের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির ভয় দেখাচ্ছে তারা। উল্লেখ্য যে, গত মে মাসে মালিক সমিতি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এক মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করে ইউনিয়নের সভাপতিকে গ্রেফতার করিয়েছিল।
বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের সময় জেলা হোটেল মালিক সমিতির শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আওয়ামীলীগ সেজে আওয়ামীলীগ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। শ্রমিকদের আন্দোলন দমনে ন্যাক্কারজনকভাবে আওয়ামীলীগকে ব্যবহার করেছে। ২০১৯ সালে নেত্রকোনা জেলার হোটেল শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করে তখন মালিক সমিতির এসব নেতারা বলেছিল, এরা বিএনপি-জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য জঙ্গি আন্দোলন করছে। জেলা হোটেল মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক দুর্গা কেবিনের মালিক ভিপি দেবো সাহা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি কাজে লাগিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন দমনের চেষ্ঠা করেছেন।
আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রচারণা কাজে অংশ নিয়ে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন খান এবং মালিক সমিতির সহ-সভাপতি গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক বাবুল চন্দ্র মোদক আওয়ামীলীগের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেন। তাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে তারা যেকোন রাজনৈতিক দলের প্রপাগান্ডায় সামিল হবেন- এটা তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। কিন্তু আজকে তারা আওয়ামীলীগ বিদ্বেষী হয়ে বিএনপি জামায়াতের প্রপাগান্ডিস্ট হয়ে উঠেছেন! এমনকি বিএনপি জামায়াতের নাম ব্যবহার করে শ্রমিকদের উপর হয়রানি চালাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানে শ্রমরত শ্রমিকদের বিনা নোটিশে চাকুরিচ্যুত করছেন।
আমরা নেত্রকোনা জেলার কতিপয় মালিকদের এহেন তৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই। আপনারা প্রতিষ্ঠান দিয়েছেন ব্যবসা করে মুনাফা আদায়ের জন্য। শ্রমিকের শ্রম ব্যবহার করেই আপনারা মুনাফা অর্জন করছেন, একটা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক হচ্ছেন। অথচ প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মগুলি মানছেন না। শ্রমিকরা আপনাদের কাছে আইনগত দাবি চাচ্ছে, কোন অযৌক্তিক দাবি নয়। শ্রমিকদের সাথে তাদের দাবি- দাওয়া নিয়ে বসেন। এখন আপনারা কি পারবেন, কি পারবেন না – সেটা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন। কিন্তু তা না করে যদি ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে মনে রাখেন আপনাদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে একসময় আপনারাই আটকা পড়বেন।