বেতন-বোনাস ও ত্রাণ-প্রণোদণাসহ ৮ দফা দাবিতে হোটেল শ্রমিক ফেডারেশনের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান
স্টাফ রিপোর্টার: চলমান কঠোর লকডাউনে জর্জরিত হোটেল রেস্টুরেন্ট সেক্টরে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক। শ্রমিকদের সংকট-সমস্যায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে বেতন-বোনাস ও ত্রাণ-প্রণোদণাসহ ৮ দফা দাবিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ১২ জুলাই দেশব্যাপী ফেডারেশন ও ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ইউনিয়নসমূহ শ্রম প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং শ্রম সচিব, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কলকারখানা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে এ স্মারকলিপি প্রেরণ করে। স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন এক যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় উল্লেখ করেন, বিগত প্রায় দুই বছর ধরে চলমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে হোটেল সেক্টরের শ্রমিকরা এক দুর্বিসহ অবস্থায় পড়লেও শ্রমিকদের দায়িত্ব কেউ গ্রহণ করছে না। ফলে এ সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের জীবন-যাপন আজ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। চলমান লকডাউনের কারণে হোটেল রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়ে এ খাতের কর্মরত শ্রমিকরা। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হোটেল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান না করে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়। এমনকি মালিকরা বিগত ইদুল ফিতরের উৎসব ভাতাও প্রদান করে নি। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনা দুর্যোগের বিশেষ পরিস্থিতিতে মালিকরা শ্রমিকদের ছুটি প্রদান করছে। ফলে বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা সকলেই স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক মজুরিসহ অন্যান্য সুবিধার অধিকারী হলেও মালিকরা তা প্রদান না করায় হোটেল সেক্টরের শ্রমিকরা অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে এক মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করেন, গত ৪ এপ্রিল ২০২১ মাননীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রী এবং ১৩ এপ্রিল ২০২১ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। এরপর ২৪ মে ২০২১ অর্ধেক বসার জায়গা খালি রেখে হোটেল প্রতিষ্ঠান চালু করার ঘোষণা দিলেও পূনরায় ২২ জুন ২০২১ মধ্যরাতে গণপরিবহনসহ খাবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার বিধিনিষেধ আরোপ হলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় মালিকরা। ১ জুলাই ২০২১ খাবার প্রতিষ্ঠান সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত শুধুমাত্র অনলাইন/টেকওয়ে চালু রেখে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের নামে লকডাউন ঘোষণা করে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ হোটেলের সেই সক্ষমতা না থাকায় প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও যেসকল প্রতিষ্ঠান চালু ছিল লোকজন ঘরের বাইরে বের হয়ে টেকওয়ে (পার্সেল) পদ্ধতিতে খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় সেগুলোর প্রায় সবগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এমতাবস্থায় হোটেল সেক্টরের শ্রমিকদের জরুরি সংকট সমস্যা নিয়ে ৮ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদানের কথা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন নেতৃদ্বয়। ৮ দফা দাবির মধ্যে ডিসপজিবল গ্লাস-প্লেট ব্যবহার ও সঠিক শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখাসহ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি পালন সাপেক্ষে খাবার প্রতিষ্ঠানে বসে খাবার খাওয়া চালু, করোনকালীন লকডাউনের সময়ে প্রণোদনা হিসেবে মাসিক ন্যুনতম ১০ হাজার টাকা সরাসরি সরকার কর্তৃক শ্রমিকদের প্রদান করা, হোটেল শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ মজুরি, উৎসব ভাতাসহ প্রাপ্ত সকল সুযোগ-সুবিধা ও বকেয়া মজুরি প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, মহামারী দুর্যোগের এই সময় হোটেল সেক্টরে কোন লে-অফ, অব্যহতি বা ছাঁটাই না করা এবং এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট পরিপত্র জারি করা, যেসব শ্রমিক ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছে তাদের আইসোলেশন ও যথাযথ চিকিৎসার সমুদয় দায়িত্ব সরকার ও মালিককে বহন করা, সকল হোটেল শ্রমিকদের জন্য সর্বনি¤œ মূল্যে পর্যাপ্ত রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সহ ঝুঁকি ভাতা এবং করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এক জীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং করোনাকালীন সময়ে শ্রমিকদের বাড়ি ভাড়া মওকুফের সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।