ভ্যাট প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবিতে ময়মনসিংহ জেলা মটরস মেকানিকদের বিক্ষোভ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান

মটর গ্যারেজ ও ওয়ার্কসপ থেকে ভাটি প্রত্যাহার, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইনের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার সংকুচিত করার তৎপরতা বন্ধ, বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে মেকানিকদের মজুরি নির্ধারণ, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, দুর্ঘটনায় উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও বীমা চালু এবং মেকানিকদের প্রশিক্ষণ ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে জেলা প্রশাসক, ময়মনসিংহ এর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে ময়মনসিংহ জেলা মটরস ওয়ার্কসপ মেকানিক্স ইউনিয়ন। আজ ৬ নভেম্বর বেলা ১২ টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হয়ে ইউনিয়নের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বাবুল এর নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল এ স্মারকলিপি প্রদান করে । এর আগে সকাল ১১ টায় মাসকান্দা বাসটার্মিনালে মেকানিকরা লাল পতাকা সমাবেশ অনুষ্ঠিত করে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে লাল পতাকা মিছিল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বাবুল এবং সমাবেশ পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের ময়মনসিংহ জেলার সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। সমাবেশে অন্যান্য অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ময়মনসিংহ জেলা সমন্বয়ক ইমাম হোসেন খোকন, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের ময়মনসিংহ মহানগর কমিটির আহবায়ক শেখর রায়, ময়মনসিংহ জেলা মটরসাইকেল ওয়ার্কসপ মেকানিক্স ইউনিয়নের সভাপতি হযরত আলী, ইউনিয়নের উপদেষ্টা এডভোকেট এম এ হান্নান, শফিকুল ইসলাম তালুকদার মাসুদ, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সভাপতি সারোয়ার হোসেন। সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি নূরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক শহিদসহ ইউনিয়নের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের দেশের সব পরিবহন বিদেশী কোম্পানীর তৈরি। সে হিসেবে গাড়ি মেরামতের জন্য বিদেশ থেকে মেকানিক এনে কাজ করালে পরিবহন মেইনটেন্যান্স অনেক বৃদ্ধি পেয়ে দেশে পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ার শংকা তৈরি হয়। অথচ আমরা নিজেদের মেধা ও সৃষ্টিশীলতা দিয়ে বিদেশে তৈরি গাড়ির সার্ভিসিং স্থানীয়ভাবে আমরা দিয়ে যাচ্ছি। এতে পরিবহন মেইনটেনান্স খরচ অনেক কমে যাচ্ছে। এমনকি গাড়ির যেসব পার্টস আমাদের বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয় সেসব পার্টসও আমরা লেদ মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করি। যার ফলে অনেক কম খরচে একটা অচল পরিবহনকে আমরা সচল করে তুলি । আমাদের এসব উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল কর্মের ফলস্বরুপ সরকারের পক্ষ থেকে যেখানে আমাদের পুরস্কৃত ও প্রণোদনা প্রদান করার কথা সেখানে বরং অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। কাস্টম, এক্সাইজ ও ভ্যাট দপ্তরের মাধ্যমে মটর গ্যারেজ ও ওয়ার্কসপগুলোর উপর ১০% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরিবহন মালিকরা ভ্যাট প্রদান করতে বাধ্য। স্থানীয়ভাবে ওয়ার্কসপগুলো মূলত একেকজন শ্রমজীবি মেকানিক দ্বারা পরিচালিত হয়। এসব ওয়ার্কসপে গাড়ির কাজ করানোরা সময় মালিকরা ভাটি প্রদান করে না। ফলে মেকানিকদের কাজের মজুরি থেকেই এই ভ্যাট প্রদান করতে হয় । কারণ একটা কাজের রেট হিসেবে যা নির্ধারন করা রয়েছে, তা চেয়ে অনেক কম মজুরি পরিবহন মালিকরা প্রদান করে । ফলে সরকার নির্ধারিত ভ্যাট মালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তো দূরে থাক বর্তমান বাস্তবতায় ওয়ার্কসপগুলোর অস্তিত্ব রক্ষাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। উপরন্তু ধর্মঘটসহ ট্রেড অধিকার সংকুচিত করবে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইন-২০২২ চূড়ান্ত হলে পরিষেবা খাত হিসেবে মেকানিকদের সংগঠন-সংগ্রামের সুযোগও বিনষ্ট হওয়া আশংকা তৈরি হয়েছে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম দেশে প্রতিনিয়ত বেছে চলেছে । দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির কারণে মেকানিকদের মত নিম্ন আয়ের সকল শ্রমজীবী মানুষেরা এক নিদারুণ অবস্থায় জীবন পাড় করছেন । করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে জীবন টিকিয়ে রাখাই অনেক কঠিন হয়ে উঠায় এমনাবস্থায় মেকানিকদের সমস্যা-সংকট ও অধিকার আদায়ের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৬ দফা দাবিনামা তুলে ধরা হয়। আগামীতে আরো বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবে বলে সমাবেশে নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারী করেন ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *