জাতীয়রাজনীতি

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া নগরবাসীদের

স্টাফ রিপোর্টার: ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের নতুন ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগরবাসীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে । নগরবাসীদের অনেকে নতুন ট্যাক্স নিয়ে বিভিন্ন আড্ডা ও যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। প্রতিক্রিয়াতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করাসহ নতুন নির্ধারিত কর’কে অযৌক্তিক ও তাদের উপর জুলুম হবে বলে জানাচ্ছেন। গতকাল দুপুর ১২ টায সিটি কর্পোরেশন ভবনে সরেজমিনে যেয়েও এরকম পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কর্পোরেশন ভবনের ২য় তলায় উন্মুক্ত রাখা বিভিন্ন ওয়ার্ডের হোল্ডিং ট্যাক্স ভলিউমে গ্রাহকদের খুবই উদ্বেগের সহিত তাদের নিজ নিজ বাড়ির ট্যাক্স নিরূপন করতে দেখা যায়। নতুন ট্যাক্স দেখে অনেককেই হতাশ ও অসহায়ত্ববোধ করতেও দেখা যায়। কারো কারো রিভিউ আপত্তি ফরমও পুরণ করতে দেখা যায় । কিন্তু আপত্তি ফরমের মূল্য ৬০০ টাকা নির্ধারণ থাকায় তা পূরণ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না অনেকে। হোল্ডিং ট্যাক্স যৌক্তিক হয়েছে কি’না একজন গ্রাহককে এরকম জিজ্ঞেস করতে মূহুর্তেই ২০/৪০ জন গ্রাহক এসে উপস্থিত। কিভাবে তাদের অযৌক্তিক কর নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আপত্তি ফরমের মূল্য বেশি থাকায় কিভাবে তারা আপত্তি জানাবে এরকম বিভিন্ন প্রশ্ন ও উদ্বেগ উপস্থিত গ্রাহকদের। আপত্তি জানালেও তাদের অতিরিক্ত কর কমবে কি’না তা নিয়েও শংকায় ভুগছেন গ্রাহকেরা।
নতুন কর নির্ধারণ নিয়ে কর্পোরেশন ভবনের রাজস্ব বিভাগের এসেসমেন্ট শাখায় খোজঁ নিয়ে জানা যায়, কর নির্ধারণের প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরশেনের আওতাধীন মোট ভূমিকে ক, খ ও গ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক’ অঞ্চলাধীন পাকা বাড়ীর আবাসিক এলাকার কর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গ ফুটে ৩ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ৪.৫০ টাকা, শিল্প এলাকায় ৬ টাকা। একই ভাবে সেমি পাকা বাড়ির জন্য আবাসিক এলাকার কর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গ ফুটে ২.২৫ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ৩.৭৫ টাকা, শিল্প এলাকায় ৪.৫০ টাকা এবং কাঁচা বাড়ির জন্য আবাসিক এলাকায় ১.৯০ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ৩ টাকা, শিল্প এলাকায় ৩.৭৫ টাকা। খ’ অঞ্চলাধীন পাকা বাড়ীর আবাসিক এলাকার কর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গ ফুটে ২.২৫ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ৩.৭৫ টাকা, শিল্প এলাকায় ৪.৫০ টাকা। সেমি পাকা বাড়ির জন্য আবাসিক এলাকার কর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গ ফুটে ১.৯০ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ২.২৫ টাকা, শিল্প এলাকায় ৩.৭৫ টাকা এবং কাঁচা বাড়ির জন্য আবাসিক এলাকায় ১.৫০ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ২ টাকা, শিল্প এলাকায় ৩ টাকা। গ’ অঞ্চলাধীন পাকা বাড়ীর আবাসিক এলাকার কর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গ ফুটে ১.৫০ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ৩ টাকা, শিল্প এলাকায় ৪.৭৫ টাকা। সেমি পাকা বাড়ির জন্য আবাসিক এলাকার কর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গ ফুটে ১.৯০ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ২.২৫ টাকা, শিল্প এলাকায় ৩.৭৫ টাকা এবং কাঁচা বাড়ির জন্য আবাসিক এলাকায় ১ টাকা, বাণিজ্যিক এলাকায় ১.৫০ টাকা, শিল্প এলাকায় ২.২৫ টাকা।উলে¬খিত হারে কর আরোপের প্রেক্ষিতে নগরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিষয়টি অনেকটাই টক অব দি টাউনে পরিণত হয়েছে বলে দেখা যায়। সিনিয়র সাংবাদিক রবীন্দ্রনাথ পাল জানান- ‘৮০০ বর্গফুটের আমার সেমি পাকা বাড়ির পূর্বের কর ছিলো ১১৫০ টাকা। এখন নতুন কর নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৩০৬ টাকা। যা অত্যন্ত অযৌক্তিক।’ জন উদ্যোগের ময়মনসিংহ জেলার আহবায়ক এডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন- অবকাঠামোর অবস্থান, নির্মাণ প্রকৃতি ও বর্তমান অবস্থা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে মূল্যমান ধার্য্য বেশি হয়েছে বলে জনমনের ক্ষোভ তিনি লক্ষ্য করছেন। এ প্রেক্ষিতে তিনি উলে¬খ করেন, ১৯৯৫ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভার এসেসমেন্ট অনুযায়ী মূল্যমান বেশি ধার্য করা হয়েছিলো। তখন আমরা জেলা নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন করেছিলাম। সে আন্দোলনের ফলে তৎকালীন এলজিআরডি মন্ত্রী জিল¬ুর রহমানের নির্বাহী আদেশে পৌরকর অর্ধেক করা হয়েছিলো। বর্তমানে ধার্যকৃত করের প্রেক্ষিতেও সিটি কর্পোরেশন একটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিবে বলে তিনি মনে করেন। রিভিউ আপত্তি পত্রের প্রেক্ষিতে তিনি জানান. ইতিমধ্যে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব করেছি আপত্তি ফরম বাবদ যারা ৬০০ টাকা দিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে ফরম বাবদ ১০০ টাকা রেখে বাকি টাকা তার কর পরিশোধের সাথে সমন্বয় করে দেয়ার জন্য। হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ৪ জুন জাতীয় বাজেটের প্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ সিটি কর্পোরেশনের ধার্যকৃত কর স্থগিত করে যথাযথ এসেসমেন্টের মাধ্যমে যৌক্তিক কর আরোপের দাবি জানান। সেক্ষেত্রে বিনামূল্যে রিভিউ আপত্তি ফরম প্রদান করে গ্রাহকদের অবাধ অভিযোগ প্রদান করার সুযোগ নিশ্চিত করারও আহবান জানান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এ প্রেক্ষিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ময়মনসিংহ জেলার সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন জানান, স্থানীয় সরকারের জন্য জাতীয় বাজেট থেকেও বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সরকার ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য বিশাল আকারের বাজেট ঘোষণা করেছে। সেই বাজেটের মোট খরচের বড় খাত জনপ্রশাসন খাতে ধরা হলেও মোট আয়ের মূল খাত ধরা হয়েছে রাজস্ব খাতকে । যার অর্থ হচ্ছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনগণের কাছ থেকে কর, খাজনা ও শুল্কের নামে বিভিন্ন উপায়ে বাজেটের ব্যয়ভার আদায় করা। সে অনুযায়ী জনগণের আয় রোজগার বাড়ানোর কোন সুযোগ বাজেটে না থাকায় সারাদেশের ভুক্তভোগী জনগণের সাথে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের অধিবাসীরাও নতুন করে আরো শোষণ-নিপীড়ণের শিকার হবে। তার মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের নতুন ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স সিটি অধিবাসীদের মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরের ভিতরে জমিসহ নির্মাণ খরচবাবদ প্রতি বর্গ ফুটে ৪০০০ টাকা ধরলে ১০০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ দাঁড়ায় ৪০,০০০০০/ টাকা। সে পরিমাণ টাকা ডাকঘরে জমা রাখলে প্রতি মাসে ৩৬০০০/ টাকা আসে, কিন্তু মাসিক বাড়ি ভাড়া কোনভাবেই ১৫-২০ হাজার টাকার উপরে নয়। ফলে এমনিতেই বাড়ির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ থাকায় ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপিত হলে শহরে বাড়ি ভাড়াও আরো অনেক বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকছে । যা নগরজীবনে মানুষের মধ্যে অভাব, অনটন ও দুরাবস্থা বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়াও ধার্যকৃত কর স্থগিত ও যথাযথ এসেসমেন্ট করে মূল্যমান নির্ধারণের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জেলা বামগণতান্ত্রিক জোট ।
উলে¬খিত করের প্রেক্ষিতে গ্রাহকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সেঁজুতি ধর জানান, আমাদের পূর্বের এসেসমেন্ট যথাযথ হয় নি। সেকারণে অনেকের কাছে বাড়ির মূল্যমান বেশি নির্ধারণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে গ্রাহকদের মধ্য থেকে বিভিন্ন আপত্তি আমরা শুনতে পাচ্ছি। এ বিষয়ে মেয়র মহোদয় সংশি¬ষ্টদের নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ শতকরা সর্বোচ্ছ কত ভাগ পর্যন্ত রিবেট করতে পারে এ বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী সিটি কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্ছ ১৫% কর রিবেট করতে পারেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন যেহেতু একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সেহেতু এখানকার জনমনের প্রতিক্রিয়া সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সুবিবেচনায় নিয়েই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে তিনি জানান। তিনি উলে¬খ করেন, এর আগে ২২ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের ক্ষেত্রে মেয়র মহোদয় সর্বোচ্ছ ৩০-৪০ ভাগ পর্যন্ত রিবেট করেছেন।
মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন (ট্যাক্সেশন) রুলস-১৯৮৬ অনুসারে পৌর কর্তৃপক্ষ শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগের চেয়ে বেশি কর আরোপ করতে পারবে না। এ রুলস এর অধীনে ২০১৫ সালে একটি গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ওই গেজেটে ইমারত ও জমির উপর শতকরা ৭ ভাগ, ময়লা নিষ্কাশন বাবদ শতকরা ৭ ভাগ, সড়ক বাতি বাবদ শতকরা ৫ ভাগ, পানি বাবদ শতকরা ৩ ভাগ এবং স্বাস্থ্য খাতে শতকরা ৮ ভাগ ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। সবমিলে শতকরা ৩০ ভাগ ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ধার্যকৃত নতুন কর আগের করের চেয়ে কোথাও কোথাও ৭০০-৮০০ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানা যায়। সে প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ধার্যকৃত কর থেকে রিবেট করলেও গ্রাহকেরা অতিরিক্ত কর আরোপ থেকে কতটুকু রিলিপ পাবে তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন নগরবাসীরা।
উলে¬খ্য যে, ময়মনসিংহ জেলা সদরের পত্তন হয় ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে এবং ময়মনসিংহ শহর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮১১ সালে। ১৮৬৯ সালে স্থাপিত ময়মনসিংহ পৌরসভা একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পৌরসভা হিসেবে দেশে পরিচিত। তৎকালীন এর নাম ছিল নাসিরাবাদ টাউন কমিটি। ১৯০৫ সালে নাসিরাবাদের পরিবর্তে ময়মনসিংহ নাম ধারণ করে এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ স্থানীয় কাউন্সিল এবং পৌর কমিটির আদেশের মাধ্যমে ময়মনসিংহ টাউন কমিটি বিলুপ্ত করে ময়মনসিংহ পৌরসভা নামকরণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করা হয়। এটি বাংলাদেশের দ্বাদশ সিটি কর্পোরেশন এবং এর আয়তন ধরা হয় ৯১ দশমিক ৩১৫ বর্গ কিঃমিঃ। নগরবাসীদের নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন হতে প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, কর আদায়, অবকাঠামো নির্মাণ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হয়। এই সুবিধা গ্রহণ করতে নগরবাসীকে সিটি কর, ভূমি হস্তান্তর ফি, প্ল্যান অনুমোদন ফিস, ট্রেড লাইসেন্স, দোকান ভাড়া, হোল্ডিং ট্যাক্স, রেইটস, ফীসহ আরো অন্যান্য রকম আর্থিক ব্যয় বহন করতে হয়।

 

 

7 thoughts on “ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া নগরবাসীদের

  • Hmm it appears like your site ate my first comment (it was extremely long) so I guess I’ll just
    sum it up what I wrote and say, I’m thoroughly enjoying your blog.
    I as well am an aspiring blog writer but I’m still new to the whole thing.
    Do you have any tips and hints for beginner blog writers?
    I’d certainly appreciate it.

  • Keep up-to-date on global happenings, political developments, and athletic achievements.
    Our dedicated reporters bring you up-to-the-minute updates 24/7.

    Deviantart

  • Кто ты есть на самом деле? В чем твое предназначение?

    В каком направлении лежит твой
    путь и как тебе по нему идти?

    Дизайн Человека расскажет об этом!

    – Снимает давление социальных стереотипов
    – Позволяет выстроить эффективную стратегию
    жизни и карьеры – Снижает тревожность при выборе – Снимает чувство вины за
    “неправильность” – Даёт ощущение целостности
    – Позволяет выстроить эффективную стратегию жизни и карьеры
    – Позволяет выстроить эффективную стратегию
    жизни и карьеры – Даёт ощущение уникальности –
    Даёт право быть собой

    Рейв-карта Human Design или Бодиграф.

    Human Design – это система для определения личной уникальности и своего предназначения в жизни.
    Дизайн Человека научит принимать
    правильные решения.

  • You can use fish antibiotics that are made for use with fish, but it is better if you try to use some natural bacterial medication first what does lasix do to blood pressure The group of experts responsible for judging the safety of the clinical trial called a Data and Safety Monitoring Board recommended that participants be notified which treatment group they were in

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *