জাতীয়

হৃদয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানার কাশিমপুর এলাকার গ্রীনল্যান্ড কারখানায় ডাইং সেকশনের শ্রমিক হৃদয়কে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন। বাংলাদেশের পোশাক খাতে ক্রিয়াশীল গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনসমূহের অন্যতম জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী এবং বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাসুদ রেজা, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান তাসলিমা আখতার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশের সোয়েটার গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এএএম ফয়েজ হোসেন এবং গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক বিপ্লব ভট্টাচার্য যৌথভাবে বিবৃতিটি প্রদান করেন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন, শনিবার (২৮ ফেব্রুয়ারী) সকালে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্রীনল্যান্ড গার্মেন্টসের নিরাপত্তাকর্মীরা হৃদয়ের হাত-পা বেঁধে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। পরে সেখানে তাকে নির্মম নির্যাতন ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে দুপুরের দিকে হৃদয় মারা যায়। ঘটনার খবর আশপাশের অন্যান্য গার্মেন্টসে ছড়িয়ে পড়লে প্রায় ৪০০-৫০০ শ্রমিক টাঙ্গাইল-গাজীপুর সড়কে নেমে আসে এবং গ্রীনল্যান্ড গার্মেন্টসের সামনে গিয়ে কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তাদের সহকর্মী হৃদয় হত্যার বিচার দাবি করেন। এসময় তারা লাশের সন্ধান চাইলে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজে আছে বলে জানানো হয়। সেখানে গিয়ে গিয়ে তারা লাশটি শনাক্ত করেন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, হৃদয় হত্যার ঘটনাটি গার্মেন্টস সেক্টরে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়। দেশের সমস্ত শিল্পাঞ্চলে এ ধরণের ঘটনা অহরহ ঘটছে। কারখানার ভিতরে শ্রমিকরা তাদের অধিকারের কথা বা কোন দাবি জানালে কারখানা কর্তৃপক্ষ এভাবে প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের নির্যাতন করে আসছে। হৃদয় হয়তো নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, কিন্তু অনেক শ্রমিক এরকম ভয়াবহ নির্যাতনের স্বীকার হয়ে চাকুরি ছেড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। লোমহর্ষক এসব ঘটনার মাধ্যমে শ্রমিকদের কণ্ঠরোধ করা হয়। শ্রমিকদের উপর এরকম নির্যাতনের চিত্র সম্পর্কে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরই অবগত। তারপরও মালিক শ্রেণীর ভাড়াটে সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে শ্রমিক নির্যাতন ও শ্রমিক হত্যার ঘটনার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো শ্রমিকদের বিভিন্ন রকম হয়রানি করা হয়।

নেতৃবৃন্দ বলেন, হৃদয় হত্যার সাথে শুধু কারখানার নিরাপত্তার কর্মিরা জড়িত নয়। এ ঘটনার সাথে মালিকসহ কারখানার উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও অভিযুক্ত। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া কারখানার ভিতরের কোন কক্ষে একজন শ্রমিককে বেঁধে এভাবে নির্যাতন করতে পারে না। তাই যাদের হুকুমে ও প্রত্যক্ষ মদদে হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে তাদের সকলকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন অধিকার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। একই সাথে কারখানার ভিতরে শ্রমিকদের অবাধ মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকদের সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করা এবং কারখানা ও শিল্পাঞ্চল থেকে সন্ত্রাস-মস্তান উচ্ছেদ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রতি আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি