অর্থনীতিকৃষি ও শিল্প

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে  আমনের বাম্পার ফলনের আশা কৃষি বিভাগের

আমিনুল হক সাদী: কিশোরগঞ্জে এবার রোপা আমন ধানের আবাদে ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের আমন ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী পুরোপুরি হাওর অধ্যুষিত ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় আমন ধান আবাদ হয়নি। কিশোরগঞ্জ কৃষি বিভাগের এবারে আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫ হাজার ৫২০ হেক্টর আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৮৪০৫৭ মে টন চাউল। আমন আবাদ অর্জিত হয়েছে ৮৫১৭৮ হে:।এবারে ৩৪২ হে: কম আমন ধানের আবাদ হয়েছে। হাওড়ের যে সকল এলাকায় সম্ভাব্য আমন আবাদের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল সেসব এলাকার পানি নামতে দেরি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোঃ সাদিকুর রহমান।

তবে তিনি বুরো ফসলের মতো আমন ধান আবাদেও ভালো ফলনের আশা করছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে চাষীদের সাথে কথা বলছেন তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।জেলার সকল ব্লকের স্থানীয় উপসহকারীসহ কৃষি বিভাগের লোকজন চাষিদের পাশে গিয়ে খোঁজ খবর রাখছেন এবং পরামর্শ অব্যাহত রেখেছেন।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা তাদের জমিতে ও কৃষি বিভাগের  প্রদর্শনীগুলোতে আমন ধানের চারা নিড়ানিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোথাও কোথাও মাঠে আলোর ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে ক্ষতিকর পোকা  দমনের জন্য। স্থানীয় উপসহকারী কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে সুষম সার ব্যবহার করছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের কৃষক মনজিল মিয়া। খরচ বেশি হলেও ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।

মনজিল মিয়া বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিতে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের চাষাবাদের খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।’ তবে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে ফলন ভালো হলে এবং ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে লাভবান বেন বলে আশা করছেন তিনি।

করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজংগল  গ্রামের কৃষক দেওয়ান জামাল দাদ খাঁ কয়েক বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন।
সদর উপজেলার মহিনন্দ গোয়লাপাড়া গ্রামের কৃষক মস্তোফা বলেন,‘যেভাবে চালের দাম বাড়ে সে অনুযায়ী  ধানের  দাম বাড়ে না। ধানের দাম বাড়লে কৃষকরা লাভবান হতো এবং উৎসাহ নিয়ে ধান আবাদের পরিধি বড়াত।’ এবার দুই কানি জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন তিনি। গত মৌসুমে ১ কানি জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়ায় আমন মৌসুমে  জমি বর্গা নিয়ে আরও ২ কানি জমিতে চাষ করেছেন নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নয়াপাড়া ও গোয়ালাপাড়া গ্রামের আমন ধানের চাষিদের সুবিধার্তে মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ  পাঠাগারের আংগিনায় স্থাপিত কৃষক পার্টনার স্কুল হওয়াতে আমাদের আরও উপকার হচ্ছে। এতে করে চাষীরা প্রদর্শনীতে সার ও বীজ রাখার উপকরণও পেয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় আমাদের ব্লকে আলোর ফাঁদের প্রদর্শনী করা হয়েছে। এতে করে চাষীদেরকে কিভাবে পোকামাকড় ওষুধ ছাড়াই ধমন করা যায় তা শিখেছি ।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসে ধানের ক্ষতিকর পোকামাকর দমনে করণীয়সহ বিস্তারিত আলোচনা করছেন, যাতে আমরা লাভবান হচ্ছি।’

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোঃ সাদিকুর রহমান বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলায় এবারে ৩৪২ হে: কম আমন ধানের আবাদ হয়েছে। হাওড়ের যে সকল এলাকায় সম্ভাব্য আমন আবাদের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল সেসব এলাকার পানি নামতে দেরি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি,তবে ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে।আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করা যায় আমনের বাম্পার ফলন হবে।