ইসরায়েল ভ্রমণে গেলে শাস্তি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এনএনবি : পাসপোর্টে থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ গেলেও স্বীকৃতিহীন দেশটিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আগের মতই থাকছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কোনো নাগরিক ওই দেশে গেলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
ইসরায়েলি হামলায় বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য বুধবার এক সহায়তা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে স্বীকার করি না। সুতরাং বাংলাদেশ থেকে কেউ ইসরায়েল রাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারবেন না। আপনারা জানেন, কেউ যদি সরকারের অনুমতি ছাড়া দেশটিতে যায়, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এবং অতীতে এমন উদাহরণ রয়েছে।
স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের বিষয়ে সরকারের এমন অবস্থান থাকবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’- বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা এই বাক্যটি থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি বাদ পড়ার খবর সম্প্রতি গণমাধ্যমে আসে।
গাজায় সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টে এই পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে গত ক’দিন ধরেই আলোচনা চলছে। ইরসায়েলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না- সেই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় সোমবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের যুক্তি মেনে নিলেও এই খবরে ব্যথিত হওয়ার কথা বলেন।
বুধবার রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ওই অনুষ্ঠানে আবারও ফিলিস্তিনের বিষয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অবস্থান তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সরকারের অনুমোদন ছাড়া যাওয়ার সুযোগ আছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দুনিয়ার সব দেশে সরকারের অনুমোদন নিয়ে যেতে পারে। আমরাতো কাউকে কোনোদিন অনুমোদন দিই নাই। যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সত্যিকারভাবে প্রতিষ্ঠিত না হয়েছে, ততদিন পর্যন্ত আমরা ইসরায়েলকে স্বীকারই করি না, দেশ হিসাবে স্বীকার করি না। এটা ইসরায়েলের উপর চাপ, যাতে তারা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ দেয়।’
অনুমোদন ছাড়া গেলে তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যভাবে কেউ যদি যায়, আমাদের আইনে তার শাস্তি হবে। ইতিহাস আপনার জানা আছে, এখান থেকে ইসরায়েলে এক ভদ্রলোক যেতে চেয়েছিলেন, উনি বোধহয় গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে তাকে অ্যারেস্ট করা হয়, পরে উনার জেলও হয় কয়েক বছর। সুতরাং এ ব্যাপারে আমরা খুব শক্ত অবস্থানে আছি।’
এক্ষেত্রে প্রজ্ঞাপন জারি করা দরকার কিনা, এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, ‘আমাদের ইমিগ্রেশন, ওরা জানে সবাই। ওরা ইমেডিয়েটলি আটকাবে। ইমিগ্রেশন ওটা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং তারা করেও থাকে। তারা এটা বছরের পর বছর ধরে করছে। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়, আইন প্রয়োগ।’
পাসপোর্টের পরিববর্তন ছয় থেকে সাত মাস আগে থেকে করা হচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েল অংশ বাদ দেয়া হয়েছে প্রশাসনিক কারণে। পাসপোর্ট একটি পরিচয় এবং এর সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির কোনো সম্পর্ক নাই। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে এক্ষেত্রে আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি ছিল, এখনও তাই আছে। আমরা ইসরায়েলকে স্বীকার করি না। ১৯৭২ সাল থেকে ইসরায়েল চাচ্ছে আমরা যেন তাদের স্বীকৃতি দিই, কিন্তু সরকার কখনো তা করেনি।
অনুষ্ঠানে বেকন ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষ থেকে ৪০ লাখ টাকার ওষুধসামগ্রী রাষ্ট্রদূত রামাদানের হাতে তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যরা।
সরকারের পক্ষ থেকেও ফিলিস্তিনিদের জন্য বড় পরিমাণের একটি সহায়তা পাঠানো হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে তা অনুমোদন করেছেন। প্রথমে ওই সহায়তা জর্ডানে পাঠানো হবে, সেখান থেকে ফিলিস্তিনে যাবে।
অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনি দূত রামাদান বলেন, ‘বাংলাদেশের সব পর্যায়ের মানুষের কেবল মুখে নয়, বরং কাজের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও তার সহমর্মিতার হাত বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিন ও এর জনগণের উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠিয়েছেন এবং বাংলাদেশের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।’
অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সহায়তা ও সমর্থন আমরা কখনো ভুলব না। আমরা আপনাদের সব ধরনের সহযোগিতার প্রশংসা করি এবং মনে করি আমাদের সংগ্রামে আপনারাও আছেন।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *