ভোজ্যতেলের দাম কমানোসহ জনগণকে জিম্মিকারী চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে দিয়ে সরকার ও ব্যবসায়িক শ্রেণী স্বল্প আয়ের শ্রমিক-কৃষক-শ্রমজীবী জনগণকে নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট, ক্রমাগত দারিদ্র্য ও রুটি-রুজির অনিশ্চয়তার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সরকার ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়ে জনগণকে জিম্মি করার নির্মম শোষণ আরও একধাপ পাকাপোক্ত করেছে। সরকার ভোজ্য তেলের দর পুননির্ধারণ করেছে। নতুন দর অনুযায়ী খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। নতুন মূল্য তালিকা অনুযায়ী পরিশোধিত পাম সুপার তেল প্রতি লিটারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ১৭২ টাকা, যা আগে ছিল ১৩০ টাকা।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। ২০২১ সালে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। সে হিসেবে তেলের মজুত ও সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। তারপরও বাজারে এখন সয়াবিন তেল স্বাভাবিক মাত্রায় পাওয়া যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- যারা আমদানিকারক, তারা তাদের নির্দিষ্ট ডিলারদের দিয়ে অবৈধভাবে মজুত করে এই সংকট তৈরি করছে। বাংলাদেশে সয়াবিন তেল আমাদানি করা হয় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল থেকে। এখন বাজারে যে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে তা আমদানি করা হয় গত ডিসেম্বরে। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টনের দাম ছিল এক হাজার ৪১১ ডলার। অন্যান্য খরচ ধরে সেই তেল প্রতি লিটার এখন ১৫২ টাকায় বিক্রি সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে৷

বিশ্ব বাজারে ভোগ্যপণ্যের মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইনডেক্স মুন্ডির’ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি টনে জাহাজ ভাড়া পড়ে ৭০ ডলার। তাই প্রতি টন সয়াবিন তেল চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে এক হাজার ৪৮১ ডলারে। টাকার অংকে সেটি পড়ে ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৬ টাকা (১ ডলার=৮৬ টাকার হিসাবে)। তাই বন্দর পর্যন্ত প্রতি লিটারের দাম পড়ে ১২৭ টাকা ৩৬ পয়সা। বন্দরে পৌঁছানোর পর ভোক্তার হাত পর্যন্ত যেতে প্রতি লিটারে যোগ হয় আরো ২৫ থেকে ২৭ টাকা। এর মধ্যে আছে মিলে রিফাইনিং খরচ, সরকারি ভ্যাট, এআইটি, ইন্সুরেন্স ব্যয় এবং ব্যবসায়ীদের লাভ। তাই ভোক্তা পর্যায়ে এখন প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের মূল্য হওয়ার কথা ১৫২ থেকে ১৫৩ টাকা।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন জানান, বাংলাদেশে সয়াবিন তেল আমদানি পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠানের একটি সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। তাদের বাইরে কেউ আমদানি করতে পারে না। বাংলাদেশে ভোজ্য তেল আমদানিকারক ছয়টি প্রতিষ্ঠান হলো: সিটি, মেঘনা, এস আলম, টিকে, বসুন্ধরা ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল। এসব ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা আমদানির ওপর শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহারেরও দাবি তুলেছেন। সরকার এরই মধ্যে তা মেনেও নিয়েছেন।

সরকার দেশের অনেক সূচকে উন্নয়ন ঘটছে বলে ফলাও করে প্রচার করছে। কিন্তু জনগণের একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য নিজের দেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করে তুলতে না পারলে কোন উন্নয়নই যে জনগণের কাজে আসবে না সে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে না। ভোজ্য তেল একটি অপরিহার্য্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। অথচ এ ক্ষেত্রে সরকার প্রায় পুরোটাই বিদেশের উপর নির্ভরশীল এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীকে আমদানি করার একচ্ছত্র অধিকার দিয়ে জনগণকে জিম্মি করার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। ফলে কথিত আমদানিকারকদের বেপরোয়া লুটপাট বন্ধ করে সরকার ভোজ্য তেলসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে না ধরলে দেশের অর্থনীতিতে শীঘ্রই অশনি সংকেত সৃষ্টি হওয়ার আশংকা তৈরি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *