অন্যান্যজাতীয়স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

ময়মনসিংহে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকে রোগীর জরায়ুতে টিস্যু রেখে সেলাই; বৃদ্ধা মৃত্যু শঙ্কায়

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের নান্দাইলে আনোয়ারা বেগম নামে এক বৃদ্ধা দালালের খপ্পরে পড়ে লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিকে ভূল চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বর্তমানে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। এ ঘটনায় বৃদ্ধার পুত্র আনারুল ইসলাম বাদী হয়ে নান্দাইল ক্লিনিক এন্ড প্যাথলজির মালিক আমির হামযা ও শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে ২৭শে আগস্ট জেলা পুলিশ সুপার ও নান্দাইল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু অদ্যবধি পর্যন্ত আইনি কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, আনোয়ারা বেগম (৫০) নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মো: আবুল কালামের স্ত্রী। গত ২৫ মার্চ অসুস্থ হলে তাকে নান্দাইল উপজেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে একই গ্রামের মৃত মাহমুদ আলীর সরকারে পুত্র আমির হামযা (৫৫) ও শামীম আহমেদ (৫২) তাদের নিজেদের ক্লিনিকের উন্নত চিকিৎসার প্রস্তাব দেন। তাদের কথায় বিশ্বাস করে আনারুল ইসলাম তাঁর মাকে ওই দিন বিকালে ময়মনসিংহের চরপাড়া প্রাইমারি স্কুল রোডের নূরুল হক টাওয়ারে অবস্থিত নান্দাইল ক্লিনিক এন্ড প্যাথলজিতে ভর্তি করেন।

সেখানে আশরাফুল ওরফে মোল্লা নামে এক অনভিজ্ঞ ও সনদবিহীন ডাক্তার এবং একজন অজ্ঞাত শিক্ষানবিশ ছাত্রের নির্দেশে আনোয়ারা বেগমের তলপেটে ব্যাথা থাকায় জড়ায়ুর অপারেশন করেন এবং চারদিন পর ২৯শে মার্চ উক্ত ক্লিনিক থেকে রোগীকে বিদায় দেন। পরে আনোয়ারা বেগমের অবস্থা আরো খারাপ হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে। ওই ক্লিনিকে ভূল অস্ত্রোপচার করে কিছু মাংস কেটে টিস্যু পেপার সহ জরায়ুর ভেতরে রেখেই সেলাই করে দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে নান্দাইল ক্লিনিকের কর্তৃপক্ষকে জানালে তাঁরা রোগীর পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেন। একপর্যায়ে আনোয়ারার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার আল-মানার হাসপাতাল ও ডেল্টা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসায় পরিবারের সমস্ত অর্থ শেষ হয়ে গেছে।

বৃদ্ধার পুত্র আনারুল ইসলাম অভিযোগ জানান, আসামিরা প্রতারাণার ফাঁদে ফেলে তাঁর মাকে মরণাপন্ন অবস্থায় নিয়ে গেছে এবং বর্তমানে তাঁর মায়ের জীবন শঙ্কায় রয়েছে। জীবন-মৃত্যুর খেলা নিয়ে এধরনের প্রতারণাকারী ও ভূয়া ক্লিনিকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক বিচার দাবী করেন।

অভিযুক্ত আমির হামযা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আনোয়ারা বেগম আমার ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। পরে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। ক্লিনিকটির সরকারি অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা নান্দাইল মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনাস্থল ময়মনসিংহে হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্য বাদী পক্ষকে বলা হয়েছে।