ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন: ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি

তফাজ্জল হোসেন : ব্রহ্মপূত্র নদের উত্তর তীর ঘেঁষে চরাঞ্চলের ৯৪৫.২১৯ একর জমির উপর ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনে প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। “বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পের অনুকূলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদন পরবর্তী করণীয়” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ সংবাদ জানানো হয়। গত ৪ আগষ্ট সকাল ১০টায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে জানান বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস ।

বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা যায়, ব্যক্তিমালিকানাধীন চরাঞ্চলের ৫টি মৌজায় ৮০২ দশমিক ৫৭ একর জমিতে প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তাদের বাসভবন, নভোথিয়েটার, স্পোর্টস কমপ্লেক্সসহ নানা স্থাপনা প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়েছিলো গত বছরের অক্টোবরে। পরবর্তীতে আরো ১৪২ দশমিক ৬৪৯ শতাংশ খাস ও পরিত্যক্ত জমি যুক্ত করে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যা বর্তমানে ৯৪৫.২১৯ একর জমির উপর ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

উল্লেখিত ভূমির উপর দ্রুত সময়ের মধ্যে সদর দপ্তরের ডেভোলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) এবং টেকনিক্যাল এসিসটেনন্স ফর প্রকেক্ট প্রোফর্মা (টিএপিপি) প্রস্তুত করার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সাইফুজ্জামান (চুন্নু) বলেন, ‘ইতিপূর্বে ডিপিপি এবং টিএপিপি প্রস্তুত করে প্রদান করা হয়েছিলো । এখন আবার সেটা সংশোধনী করা হবে। আগামি ১০-১৫ দিনের মধ্যে ডিপিপি এবং টিএপিপি প্রস্তুত বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে পাঠাতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ’

বিভাগীয় অফিস সূত্রে আরো জানা যায়, ব্রহ্মপূত্র নদের উপর ৩টি সেতু নির্মাণের বিষয়ে প্রয়োাজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মোঃ সৈয়দ মইনুল হাসান জানান, ‘৩টি সেতুর মধ্যে ২টি সেতুর জরিপ কার্যক্রম প্রস্তুত করে হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে এবং আরেকটি সেতুর প্রেক্ষিতে জরিপ কার্যক্রম চলছে। ’

অধিগ্রহনকৃত জমির মূল্য তিনগুন বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে বলে বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস জানান। এ বিষয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক/রাজস্ব) এস.এ. এম রফিকুন্নবী জানান, ‘স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৬ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। সংশ্লিষ্ট আইনে উল্লেখ আছে- সরকার যদি কারও স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ বা হুকুমদখল করে, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট দামের তিন গুণ টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো জমির দাম এক লাখ টাকা হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি পাবেন মোট তিন লাখ টাকা। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময় ১২ মাসের জমি কেনাবেচার দলিলের গড় বিবেচনায় নিয়ে জমির দাম নির্ধারণ করা হবে।

এস.এ. এম রফিকুন্নবী আরো জানান, ‘অধিগ্রহন এলাকার লোকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সন্মানজনক পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন। অধিগ্রহনকৃত এলাকার পাড়ালক্ষীর আলগী মৌজায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য ২৫ একর জমি রাখা হয়েছে, সেখানে তাদের পুনর্বাসন করা হবে বলে তিনি জানান।’

ক্ষতিগ্রস্থদের পুনবার্সনের প্রেক্ষিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের ময়মনসিংহ জেলার সহ-সভাপতি ও ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘অধিগ্রহণকুত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের অধিকাংশই গরীব ও শ্রমজীবি মানুষ। বংশানুক্রমিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে তারা এই অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে বসবাস করে আসছেন। পূর্বপুরুষের এই ভিটেতে তাদের অনেক জন্মচিহ্ন রয়ে গেছে। শুধু ক্ষতিপূরণ দিয়েই তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না। নতুন বিভাগীয় সদর দপ্তরে তাদের সকলের বাসস্থান নিশ্চিত করতে উপযুক্ত জায়গায় তাদের পুনর্বাসনেরও নিশ্চয়তা দিতে হবে। তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করারও আহবান জানান। ’

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরে চরাঞ্চলের ৮টি মৌজায় ৪৩৬৬.৮৮ একর ভূমিতে আধুনিক বিভাগীয় শহর ও বিভাগীয় সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর একটি ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। যা ২০১৬ সালের ১৭ আগষ্ট ১৪টি নির্দেশনাসহ উক্ত ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনাটি অনুমোদন করেন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ময়মনসিংহের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজ¯)^ ময়মনসিংহ সদরের চরাঞ্চলের চর ঈশ্বরদিয়া, চর সেহড়া, গোবিন্দপুর, জেল খানার চর, পাড়া লক্ষী আলগী, দুর্গাপুর, চর ভবানীপুর ও টাউন- মৌজার জমি বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেন। বিপুল সংখ্যক জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে উক্ত এলাকার কৃষক জনগণের প্রবল আপত্তির মুখে সরকার সে চিন্তা থেকে সরে এসে বর্তমানে ৯৪৫ একর জমির অনুমোদন পেয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *