শিশু যত্ন কেন্দ্রে নিজেদের হাতে আঁকিবুঁকিগুলো শিশুদের মনে আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে
বাবলী আকন্দ ঃ ছোট্ট দুটি হাত!ইচ্ছেমতো আঁকিবুঁকি চলছে খাতার উপর। নাম রত্না। বয়স ৩ বছর। মায়ের সাথে এসেছে শিশু যত্ন কেন্দ্রে। যেখানে আসতে তার খুব ভালো লাগে। ভালো লাগে ছড়া,গান,কবিতা। রত্না আধো আধো কথায় বলে,খালামনি,আদর করে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের জোরবাড়িয়া গ্রামে পরিচালিত হচ্ছে শিশু যত্ন কেন্দ্র। যেখানে রত্নার মতো আরো ২৫ জন শিশু আছে। যারা সৃজনশীলতা ও আনন্দের মধ্য দিয়ে অক্ষর জ্ঞান শিখছে। স্বপ্ন ভুবন, গল্পের ভুবন,রঙ্গের ভুবন এবং আপন ভুবনে তারা নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। দেয়ালে দেয়ালে নিজেদের হাতে আঁকিবুঁকিগুলো তাদের মনে আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে। স্বপ্ন দেখার শুরু হচ্ছে ছোট্ট বয়স থেকেই।
এ বিষয়ে রত্নার মা জানান, মেয়েটি কেয়ার যত্নে আসার জন্য পাগল হয়ে থাকে। আমার আগেই সে রেডি হয়ে থাকে। সারাক্ষণই ওর মুখে কোন না কোন কবিতা, গান চলতেই থাকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের জোরবাড়িয়া গ্রাম, যেখানে জেলা শহর হতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর নয় তেমনি একটি গ্রামের একটি কেন্দ্রে ১-৫ বছরের শিশুদের যত্ন কেন্দ্র গ্রামের মায়েদের স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে সাহায্য করছে। যেখানে সকাল থেকে দুপুর অব্দি সারাক্ষণই মায়েদের ব্যস্ত থাকতে হয় ঘরকন্না অথবা কৃষি কাজে। সন্তানদের দিকে সে সময়ে মনোযোগ কম থাকে,ঠিক সে সময়টায় এখন শিশু যত্ন কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন নিজের শিশুকে। মুখের উপর আঁচল টেনে দিয়ে বলছিলেন এক মা।
প্রকল্পটির মেয়াদ শেষের দিকে শুনে মন খারাপ হলো তাঁর। জানালেন, আফা(আপা), পরে তো আবার আগের লাহান(মতো) হইবো (হবে)। আংগর(আমাদের) কষ্ট শুরু হইয়া(হয়ে) যাইবো (যাবে)। সরহাররে(সরকারকে) আইন্নেরা(আপনারা) কইন(বলেন) যাতে এইডা(এটা) বন্ধহ(বন্ধ) না করে।
শিশু যত্ন কেন্দ্রের প্রশিক্ষক নাছিমা খাতুন জানান,শিশু যত্ন কেন্দ্রে ১-৩ বছর শিশুর জন্য এবং ৩-৫ বছর শিশুর জন্য আলাদা রুটিন হয়। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের কথা ভেবেই রুটিন আলাদা করেই করা। তবে সকলের মধ্যে যেন খেলাধুলা ও আনন্দের মাধ্যমে সৃজনশীলতা গড়ে উঠে সেদিকে মনোযোগ দেয়া হয় কেননা এ সময়টাই শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের সময়।
একই প্রকল্পের আওতায় ফুলবাড়িয়ার উত্তর আন্ধারিয়া পাড়ায় ৮-১২ বছরের শিশুদের জন্য দেয়া হচ্ছে সাঁতার প্রশিক্ষণ। সুপারভাইজার উশনূর জাহান খুশবু জানান, নির্দিষ্ট মাচায় ৫-৬ জন নেমে প্রশিক্ষকের অধীনে সাঁতার শিখে। সাঁতার শেখার জন্য ২২ টি কৌশল অনুসরণ করা হয়। ছেলে-মেয়ে আলাদা করে শেখানোর জন্য আলাদা প্রশিক্ষক আছে। মাত্র ১২ দিনে আবার অনেকের কম সময়েও সাঁতার শেখা হয়ে যায়।
ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া, ত্রিশাল ও নান্দাইলে, শেরপুর জেলার শেরপুর সদর,নালিতাবাড়ী ও শ্রীবর্দী এবং নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ, দুর্গাপুর ও মদনে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর রোধের পাশাপাশি বর্তমানে শিশুর প্রারম্ভিক যত্ন ও বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়ে আইসিবিসি প্রকল্পটি সমন্বিত প্রকল্পে রুপ পায়। বর্তমানে ১৬ টি জেলায় ৪৫ টি উপজেলায় প্রকল্পটির কার্যক্রম চলছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অধীনে সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান (আইসিবিসি) প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে ময়মনসিংহে টিএমএসএস কাজ করছে। উক্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে ২০২২ সালের জানুয়ারি হতে। যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে।

