স্বার্থপরতা ও বেইমানির বেড়ে ওঠা: সমাজের নৈতিক সংকট; বিশ্বাসহীনতার বেড়াজালে আমরা
রাইসুল ইসলাম রিফাত
আমরা আজ এক অদ্ভুত সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি। মানুষকে বলা হয় সামাজিক প্রাণী, কিন্তু সত্যিই কি আমরা আর সমাজকেন্দ্রিক আছি নাকি প্রত্যেকে কেবল নিজের স্বার্থেই আবদ্ধ?
আমাদের আশেপাশের মানুষদের দিকে তাকালেই মনে হয় মানবিকতা ক্ষয়ে যাচ্ছে আর জায়গা নিচ্ছে স্বার্থপরতা ও বেইমানি। একসময় প্রতিবেশীর দুঃখে পাশে দাঁড়ানো গর্বের বিষয় ছিল, এখন সেই জায়গা দখল করেছে হিসাব-নিকাশ। বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, সহকর্মীসুলভ সম্পর্ক সবই যেন লেনদেনের টেবিলে বসা এক চুক্তি। যতক্ষণ লাভ আছে, ততক্ষণ সম্পর্ক থাকে; স্বার্থ ফুরোলেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। প্রশ্ন হলো আমরা কেন এত সহজে বেইমান হয়ে উঠলাম?
স্বার্থে ব্যাঘাত, সামান্য টাকা, পদ বা ক্ষমতার জন্য প্রিয়জনকেও বিসর্জন দিতে দ্বিধা করছি না। বন্ধুরা বন্ধুদের আঘাত করছে, সন্তানরা বাবা-মাকে উপেক্ষা করছে, প্রতিবেশী প্রতিবেশীর প্রতি নির্দয় হচ্ছে। এই কি সেই সমাজ যেখানে আমরা নিজেদের মানুষ বলে গর্ব করি? যদি বিশ্বাসই না থাকে তবে সমাজ টিকে থাকে কিসের ওপর?
এই পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে কয়েকটি বড় কারণ। প্রথমত, ভোগবাদী মানসিকতা; নিজের চাহিদা পূরণই একমাত্র লক্ষ্য হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, নৈতিক শিক্ষার অভাব; পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নৈতিকতা শেখাতে ব্যর্থ। তৃতীয়ত, প্রতিযোগিতার দৌড়; সবাই অন্যকে হারাতে চায়, সহমর্মিতা হারিয়ে যাচ্ছে। এর পরিণতিও ভয়াবহ। স্বার্থপরতা ও বেইমানির ফলে সমাজে বাড়ছে একাকীত্ব, হতাশা ও অবিশ্বাস। সম্পর্কগুলো ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে। একটি সমাজ যখন বিশ্বাস হারায় তখন তার ভেতরের প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। উন্নয়ন, প্রযুক্তি কিংবা অর্থনীতি কিছুই তখন আর টিকে থাকতে পারে না। করণীয় একটাই, আমাদের প্রত্যেককে আত্মসমালোচনা করতে হবে, নিজেকে বদলাতে হবে।
পরিবারে নৈতিক শিক্ষা ফিরিয়ে আনতে হবে, সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই সততা ও মানবিকতার শিক্ষা দিতে হবে, সামাজিক বন্ধন জোরদার করতে হবে। সমাজের শক্তি আসে বিশ্বাস আর সহমর্মিতা থেকে, স্বার্থ থেকে নয়। এখন আমাদের প্রশ্ন করা উচিত আমরা কি এখনই থামব নাকি স্বার্থপরতা ও বেইমানির পথে এগিয়ে গিয়ে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনব?
উত্তর স্পষ্ট, যদি আমরা মানবিকতা, সততা আর বিশ্বাস ফিরিয়ে না আনি তবে সমাজ শুধু দুর্বলই হবে না ভেতর থেকে পচে যাবে। আর তখন আমরা সবাই টিকে থাকলেও মানবিকতার মৃত্যুতে আমাদের বেঁচে থাকাই হবে এক অচেনা শূন্যতা।