জাতীয়রাজনীতি

শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ: শ্রমিক অধিকারের নামে সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন

তফাজ্জল হোসেন: রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করে তার মধ্যে অন্যতম শ্রম সংস্কার কমিশন। এ বছরের এপ্রিল মাসে কমিশন ৪৪৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়। এই কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জনাব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ (বিলস) এর নির্বাহী পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শ্রম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। বিলস আইএলসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রজেক্ট এনে দেশে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করে। আইএলওসহ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রণাধীণ বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রকল্প নেয়া এবং এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শ্রম সেক্টরে জনাব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নেতৃত্বে রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটিরও তিনি সদস্য ছিলেন। এছাড়া ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ একটি বিশেষ দলের সাথে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের সংস্কারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য জনাব আহমেদ সাক্ষাৎ করেছিলেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সাথে শ্রম সংস্কার বিষয়ে তিনি যে দীর্ঘদিন ধরে তৎপরতা চালিয়ে আসছেন তা শ্রমিক অঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত। তাই শ্রম সংস্কার কমিশনে জনাব আহমেদকে প্রধান করে এবং আইএলও’র সাথে সম্পর্কিত শ্রমিক নেতাদের  নির্বাচিত করার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তিনি যেহেতু শ্রমিক অঙ্গণে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক অধিকারের নামে বিভিন্ন তৎপরতায় যুক্ত ছিলেন, সেহেতু এদেশের শ্রমিকদের সমস্যা-সংকট ও দাবি-দাওয়া সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট অবগত। ফলে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সঙ্গত কারণেই শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের জনপ্রিয় দাবি-দাওয়াসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে শ্রমিকদের সমস্যা-সংকটকেই প্রধান ধরে কমিশনের রিপোর্ট প্রস্তুত হয়েছে, নাকি সংস্কারের আড়ালে অন্য পরিকল্পনা কার্যকর করার মহাযজ্ঞ সংস্কার কমিশন সাধন করেছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী  বিশ্ব্যব্যবস্থার একশন প্ল্যানসমূহ সম্পর্কে কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা প্রয়োজন।

একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের এককেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা ভেঙ্গে বহুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা শুরু হয়। এর ফলে বাজার প্রভাব বলয় নিয়ে আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায়। পুঁজির পুনর্ব্যন্যিাস ও বিনিয়োগের নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে ২০০০ সালে সাম্রাজ্যবাদীরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি)’র নামে ৮টি বিষয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। ২০১৫ সালে এমডিজি’র মেয়াদ শেষ হলে বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যায় বলে তথ্য প্রকাশিত হয়। যাদের দৈনিক আয় ১.২৫ ডলারের নিচে। এমনাবস্থায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার মুনাফায় টান পড়ে। বিশ্ব  অর্থনীতিতে মন্দা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে বিশ্ব পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থায় ভঙ্গুর অবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার স্থায়িত্ব রক্ষা করতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) কর্মসূচি সামনে আনা হয়। এসডিজি গঠনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি প্রথমে ১২টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও পরবর্তীতে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা গ্রহণ করে যার মধ্যে ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসডিজি’র এসব লক্ষ্যমাত্রাসমূহকে নিয়ে শ্রমিক অঙ্গণে মূলত শ্রমিক আন্দোলনকে দূর্বল ও বিভ্রান্ত করার অপতৎপরতা থেকে তা চালানো হয়। কারণ বিশব্যাপী বেকারত্ব ও চাকুরিচ্যুতির কারণে দেশে দেশে শ্রমিকদের তীব্র ক্ষোভ, বিক্ষোভ ও আন্দোলন গড়ে উঠছে। আর এ অভাব-অনটন-বেকারত্ব ও দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির জন্য দায়ী পুঁজিবাদী উৎপাদনব্যবস্থার ব্যক্তিমালিকানার বন্টননীতি। এর বিপরীতে শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির জন্য প্রয়োজন সামাজিক মালিকানার বন্টননীতি। শ্রমিক ও মালিক- দুই শ্রেণীর বিপরীতমুখী এই স্বার্থের জন্যই শ্রেণী দ্বন্দ্ব ও শ্রেণী সংঘাত অপরিহার্য হয়ে উঠে এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমেই শ্রমিক শ্রেণী তার মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়। এমনাবস্থায় বিশ্ব পুঁজিবাদ তার অস্তিত্ব রক্ষায় শ্রমিক শ্রেণীকে শ্রেণী সংগ্রামের ধারা থেকে সরিয়ে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার কৌশল গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী শ্রমিকশ্রেণীকে বিভ্রান্ত করার জন্য এসডিজি বাস্তবায়ন ও আইএলও’র বিভিন্ন কর্মসূচিসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ। ত্রি-পক্ষীয় সংলাপ, শোভন কর্মপরিবেশ, জেন্ডার সহিংসতা বন্ধ ও সমতায়ন ইত্যাদি কর্মসূচিতে শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে আইএলও উল্লেখযোগ্য তৎপরতা চালায়। এসডিজি বাস্তবায়নে সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহ বাংলাদেশের সরকারকেও যুক্ত করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশগ্রহণে এসডিজি’র আলোকে বাংলাদেশের শ্রম সেক্টরে ন্যাশনাল একশন প্ল্যান- ন্যাপ (২০২১-২০২৬) চূড়ান্ত করা হয়। এই প্ল্যান বাস্তবায়নে আইএলওসহ দেশের ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদেরকেও অংশগ্রহণ করানো হয়। ন্যাপ ৯টি একশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়। একশন-১: আইএলও’র স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধন, একশন-২: ২০২৫ এর মধ্যে শিশু শ্রম নিরসন, একশন-৩: শ্রমিক নির্যাতন, হয়রানি ও এন্টি ট্রেড ইউনিয়ন ডিসক্রিমিনেশন এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ, একশন-৪: ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন বিষয়ক সাকসেস রেট বাড়ানো, একশন-৫: শ্রম আদালতের মামলা জট কমানো, একশন-৬: হেল্পলাইনের মাধ্যমে শ্রমিক অভিযোগ পদ্ধতি স্থাপন, একশন-৭: শ্রম পরিদর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিদর্শনের নিশ্চয়তা, একশন-৮: RMG Sustainability Council (RSC) এর সাথে Remediation Coordination Cell (RCC), Industrial Safety Unit (ISU) এর যথাযথভাবে কাজের নিশ্চয়তা, একশন-৯: মিনিমাম এইজ ও ফোর্সড লেবার সম্পর্কিত আইএলও কনভেনশন অনুমোদন সংক্রান্ত। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল (ইউএসটিআর) কর্তৃক আরও কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়নে তৎকালীন স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু হাসিনা সরকার মার্কিনের প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী  শক্তি চীন-রাশিয়ার সাথে ব্যালেন্স করতে যেয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএসটিআর’র প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখায় এবং অবশেষে মার্কিন পরিকল্পনায় তার ক্ষমতাচ্যুতি ঘটে। ফলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের  দালাল ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে দিয়ে পশ্চিমা একচেটিয়া পুঁজিপতি গোষ্ঠী তাদের সকল প্রস্তাব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে নেয়ার লক্ষ্য থেকেই তাদের আস্থাভাজন ব্যক্তি সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে দিয়ে শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। মূলত: সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির স্বার্থে গৃহিত এসডিজি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একশন প্ল্যান এবং ইউএসটিআর’র প্রস্তাবগুলোর সমন্বিত রুপই হচ্ছে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব। আরও সুনির্দিষ্ট রুপ হচ্ছে মার্কিনের নেতৃত্বে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই এই সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে রুশ সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবে যে শ্রম ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেছিল তার সমূলে উচ্ছেদ করে পশ্চিমা স্বার্থের ও অনুকূলের শ্রম ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে জাতীয় শিল্পের বিকাশে আরও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ সাম্রাজ্যবাদ নির্ভর এদেশীয় মুৎসুদ্দি পুঁজিকেও এই সংস্কার পরিকল্পনায় কোণঠাসা করা হয়েছে।

সংস্কার প্রস্তাবে কমিশন প্রধান জনাব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ শ্রমিকদের সমস্যার কারণ হিসেবে তার দর্শনগত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে যেয়ে প্রতিবেদনের বাণীতে লিখেছেন- “যে কোনো কাজ, কাজ না থাকার চেয়ে ভালো এবং সস্তা শ্রমই আমাদের ব্যবসায়ের শক্তি- নীতি নির্ধারণী মহলের এই ভ্রান্ত দর্শন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের উন্নয়ন, শিল্পায়ন, মর্যাদাকর ও শোভন কাজ এবং শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা লাভের অধিকারের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছে সস্তা শ্রম ও দুর্ঘটনার দেশ হিসেবে।” জনাব আহমেদ যে নীতিনির্ধারণী মহলকে সস্তা শ্রম ও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন, তার বাণীর পুরো বক্তব্যে কোথাও এই মহলকে তিনি উন্মোচন করেন নি। বরং বিমূর্ত কথার মধ্য দিয়ে তিনি শ্রমিকদের দুরাবস্থার জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি ও দেশীয় মুৎসুদ্দি পুঁজিসহ সাম্রাজ্যবাদের দালাল নীতিনর্ধারণী মহলকে সচেতনভাবে আড়াল করেছেন। তবে অভিযুক্ত নীতিনির্ধারণী মহলকে আড়ালে রাখতে পারলেও জনাব আহমেদ নিজেকে আড়াল করতে পারেন নি। শ্রম সংস্কার কমিশনের আসল উদ্দেশ্য তিনি তার বক্তব্যে অকপটেই স্বীকার করেছেন। তার বাণীতেই তিনি লিখেছেন- “কারখানা, শিল্প ও জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদনশীলতার সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যবসার বাধা দূর করে জাতীয় শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি কমিশন জোর দিয়েছে।” অর্থাৎ তিনি শ্রমিক সমস্যার চেয়ে কারখানা, শিল্প, উৎপাদনশীলতা এবং ব্যবসায়ের সমস্যাটিকেই অগ্রাধিকার হিসেবে চিত্রিত করেছেন। কারণ এই ব্যবসায়িক সংকটের কারণেই সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির আজ ধরাশায়ী অবস্থা। বিশ্ব অর্থনীতি আজ মহামন্দার দিকে ধাবমান। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অতি উৎপাদনজনিত সংকটের কারণে শিল্পের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেজন্যই তিনি জোর দিয়েছেন সংস্কারের মাধ্যমে প্রায় স্থবির হয়ে যাওয়া পুঁজিবাদী সিস্টেমের চাকাটিকে সচল রাখবার কাজে। অথচ শ্রমিক শ্রেণীর উপর পুঁজির নির্মম শোষণের বিষয়টি কৌশলে তিনি এড়িয়ে গেছেন। তিনি জাতীয় শিল্পের বিকাশের কথা বললেও সংস্কার প্রস্তাবের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণে তিনি সহযোগিতা নিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজি দ্বারা পরিচালিত ILO (International Labour Organization), FNV, 3F, Deutsche Gesellschaft für Internationale Zusammenarbeit (GIZ), ActionAid Bangladesh, BRAC, ETI (Ethical Trading Initiative), USAID, RISE, US Embassy, Danish Embassy, Netherlands Embassy, Fair Wear Foundation, Care Bangladesh, Friedrich-Ebert-Stiftung (FES), International Trade Union Confederation, Water and Sanitation for the Urban Poor (WSUP), The Welfare Association for the Rights of Bangladeshi Emigrants (WARBE) ইত্যাদি সংস্থার। এসব সংস্থা সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির সৃষ্ট এবং এসব সংস্থার কর্ণধারেরা যে সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত সেবক তা আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। ফলে জনাব আহমেদ কমিশনের সুপারিশে জাতীয় শিল্পের বিকাশের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এসব সুপারিশ যে বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির স্বার্থরক্ষাই করবে তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

শ্রম সংস্কার কমিশনের সামগ্রিক সুপারিশের মূল দিকগুলি ২৫টি পয়েন্টে তুলে ধরা হয়েছে। ‘সকল শ্রমিকের আইনী সুরক্ষা ও স্বীকৃতি’ নামক সুপারিশের প্রথম পয়েন্টে মজুরির প্রশ্নে শ্রমিকের নিজের ও পরিবারের মর্যাদাকর জীবন যাপন উপযোগী ন্যায্য মজুরি (লিভিং ওয়েজ) এর প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার ২য় পয়েন্টে ‘মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় ও খাতভিত্তিক মজুরি নিশ্চিতকরণ’ নামক প্রস্তাবনায় স্ববিরোধী হিসেবে জাতীয় ন্যুনতম মজুরির প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘ন্যায্য মজুরি’র সাথে ‘ন্যুনতম মজুরি’র বিষয়টিকে যে কমিশন গুলিয়ে ফেলেছে তা সুপারিশে স্পষ্ট হয়ে উঠে। তবে এই গুলিয়ে ফেলার দিকটিকে কমিশনের অনিচ্ছাকৃত ভুল হিসেবে ধরে নিয়ে তা গৌণ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। কারণ এর মধ্যে শ্রমিকের শ্রম শোষণের প্রশ্নটি জড়িত। শ্রমবাজারে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সম্মুখীন হয় এবং সমান অধিকারের ভিত্তিতে লেনদেন করে। একজন শ্রম শক্তির ক্রেতা, অপরজন বিক্রেতা। আইনের চোখে দুজনেই সমান। এই সম্পর্ক রক্ষা করতেই শ্রমশক্তির মালিক কেবলমাত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার শ্রমশক্তি বিক্রয় করে। শ্রমিক চিরকালের জন্য তার শ্রমশক্তি বিক্রয় করে না, কারণ তাতে নিজেকে স্বাধীন মানুষ থেকে ক্রীতদাসে পরিণত করা অথবা শ্রমশক্তির পণ্যের মালিক থেকে নিজেকেই পণ্যে পরিণত করা হবে। শ্রমশক্তি শ্রমিকের নিজস্ব সম্পত্তি, নিজস্ব পণ্য। শ্রমিক একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুঁজির মালিকের কাছে এই পণ্যটি বিক্রি করে। এই শ্রমশক্তির মূল্য নির্ধারিত হয় উৎপাদন এবং পুনরুৎপাদনে শ্রমিকের প্রয়োজনীয় শ্রম সময় দিয়ে। শ্রমশক্তির মূল্য হচ্ছে শ্রমিকের ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজনীয় জীবনধারণের উপায়াদির মূল্য। একই সাথে শ্রমশক্তির বিক্রেতার বংশরক্ষার জন্য তার সন্ত্বান সন্তুতি ও পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় উপায়ও শ্রমশক্তির মূল্য হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও শ্রমিককে বিশেষ দক্ষ হিসেবে গড়ে উঠার জন্য প্রয়োজনীয় উপায়ও শ্রমশক্তির মূল্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শ্রমিকের আবশ্যিক কর্মঘন্টার মধ্যেই এই মজুরি একজন শ্রমিক অর্জন করে। এ প্রসঙ্গে ফ্রেডারিক এঙ্গেলস ‘মজুরি প্রথা’ পুস্তকে ন্যায্য মজুরি প্রসঙ্গে বলেন- “স্বাভাবিক অবস্থায় ন্যায্য মজুরি হলো সেই টাকাটা, যা শ্রমজীবিটির দেশ ও পদমর্যাদার মান অনুসারে তার জীবনোপকরণ সংগ্রহের জন্য, নিজেকে শ্রমক্ষম অবস্থায় রাখা ও বংশধারা বজায়ের জন্য প্রয়োজন।” অন্যদিকে শ্রমশক্তির মূল্যের সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারিত হয় সেই সব পণ্যের মূল্য দিয়ে যেগুলোর দৈনিক যোগান ছাড়া শ্রমিক তার কর্মক্ষমতা ফিরে পায় না অর্থাৎ কোনোক্রমে কাহিল অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য যে মজুরি দেয়া হয় তা হচ্ছে নিম্নতম মজুরি। সংস্কার কমিশন তালগোল পাকিয়ে প্রচলিত নিম্নতম মজুরির মধ্যেই ন্যায্য মজুরিকে প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ এনেছে। এর ফলে ন্যায্য মজুরির দাবি আড়াল হয়ে নিম্নতম মজুরিকেই শ্রমিকের লক্ষ্য হিসেবে সামনে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমিকের ন্যায্য খাটুনির জন্য ন্যায্য মজুরি প্রদান কখনোই সম্ভব নয়। কারণ উৎপাদনযন্ত্রের উপর মালিকের একচ্ছত্র ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠা থাকায় শ্রমিককে তার সারাদিনের কর্মঘন্টার বিপরীতে মিনিমাম একটি কর্মঘন্টার মজুরি পরিশোধ করে। এটিকে কোনভাবেই ন্যায্য মজুরি হিসেবে উপস্থাপনের সুযোগ নেই। ন্যায্য মজুরি সম্ভব কেবল উৎপাদনযন্ত্রের উপর সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার মধ্যে। তাই শ্রমিক শ্রেণীর কাছে ন্যায্য মজুরির জন্য সংগ্রাম পুঁজির শোষণ উচ্ছেদের সংগ্রাম। কিন্তু সংস্কার কমিশন শ্রমিকের মুক্তির জন্য পুঁজির শোষণ উচ্ছেদ না করে নিম্নতম মজুরিকেই ন্যায্য মজুরি হিসেবে উপস্থাপন করে শ্রমিকের পিঠে মোলায়েম হাত বুলিয়ে শোষণকে আরও তীব্র করার প্রস্তাব এনেছে।

কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবের সার সংক্ষেপে “শ্রম আইনের সর্বজনীন প্রযোজ্যতা ও শ্রমিকের স্বীকৃতি” শিরোনাম অংশে উল্লেখ করা হয়েছে “বিদ্যমান শ্রমআইনের ব্যাপক সংস্কার অথবা নতুন ও সমন্বিত এক বা একাধিক শ্রম আইন প্রণয়ন করা।” অতীতের বিভিন্ন আইন ও অধ্যাদেশ সমন্বয় করে ২০০৬ সালে দেশে একটি শ্রমআইন প্রণয়ন করা হয়। অগণতান্ত্রিক এই আইনের অনেক ধারা ও উপ-ধারা শ্রমিক স্বার্থ পরিপন্থি হওয়ায় এসব ধারা বাতিল করে একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের জন্য শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছে। তথাপি বিদেশী লগ্নিপুঁজির স্বার্থে ২০১৯ সালে ইপিজেড শ্রম আইন প্রণয়ন করা হয়। এর বিরুদ্ধে সকল শ্রম সেক্টরের জন্য শ্রমিক অঙ্গণে একটি একক শ্রম আইন প্রণয়ণের জন্য শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। সংস্কার কমিশন শ্রমিকদের এই দাবিকে উপেক্ষা করে একাধিক শ্রম আইন প্রণয়েনের নামে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ইপিজেড আইনের মত বিদেশী লগ্নিপুঁজির স্বাথের উপযোগী একাধিক আইন করার প্রস্তাব সুপারিশ মালায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। সুপারিশের এই অংশে ‘নিয়োগকারী’ ও ‘কর্মকর্তা’ তকমা লাগিয়ে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প সেক্টরের ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত ব্যাপক কর্মিদের শ্রমআইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সুপারিশের এই অংশে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘নিয়োগকারী ব্যতীত সকলের ক্ষেত্রেই শ্রম আইন প্রযোজ্য হবে।’ কারখানা মালিকরা পরিকল্পিতভাবে নিজেরা আড়ালে থাকার জন্য শ্রমিকদের নিয়োগ ও চাকুরিচ্যুতির জন্য ব্যবস্থাপনা কর্মিদের কারো নামে নিয়োগ বা চাকুরিচ্যুতির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। ফলে কারখানা শ্রমিকরা যেকোন অসন্তোষের জন্য ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত কর্মিদের উপরই সমস্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে। অথচ কারখানা মালিকের বেপরোয়া মুনাফার বলি হয়ে এসমস্ত কর্মিরাও মালিক পক্ষের নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়। কমিশনের সুপারিশে এই কর্মিদের নিয়োগকারীর তকমা দিয়ে তাদেরকে শ্রমআইনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শ্রমিকের চাকরির আইনগত সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা প্রস্তাবনায় প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করা প্রসঙ্গে মজুরির জন্য শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করলে এই বন্ধ সময়ের জন্য মজুরি কর্তন না করার সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা-১৩(১) এর অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে যেকোন কারণে কারখানায় কাজ বন্ধ হলে অবৈধ ধর্মঘটের অজুহাতে শ্রমিকদের অভিযুক্ত করার চর্চা কারখানাগুলিতে চলছে। ধর্মঘটের জন্য শ্রমিকদের রেজিস্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়ন প্রয়োজন, যে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই সেখানে শ্রমিকরা আইনত ধর্মঘট আহবান করতে পারে না। ফলে ট্রেড ইউনিয়নবিহীন কারখানায় অবৈধ ধর্মঘটের দায়ে কোন শ্রমিকদের অভিযুক্ত করার কোন সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের মজুরি পরিশোধ না করা বা অসদাচরণসহ যে কোন কারণে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হলে ধারা-১৩(১) এর প্রয়োগ করারও সুযোগ নেই। অথচ মজুরির বিষয়ে একটি শর্তারোপ করে এই ধারা অপপ্রয়োগের সুযোগ দেয়ার জন্য কমিশনের সুপারিশে প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে অসদাচরণ সম্পর্কিত শ্রম আইনের ২৩-ধারা এবং চাকুরি অবসানের ২৬-ধারা নিবর্তনমূলক কালো ধারা হিসেবে শ্রমিক অঙ্গণে চিহ্নিত থাকার পরও এই দুটি ধারা বাতিলের সুপারিশ না করে কিছু সংস্কারের নামে এই দুটি কালো ধারাকে বহাল রাখার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এভাবে শ্রম আইনের আরও অন্যান্য ধারা যেগুলো বাতিল করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক আন্দোলন সংঘটিত হচ্ছে, কমিশন সেইসব ধারাকে এদিক ওদিক করে সংস্কারের নামে তা পুনর্বহালের প্রস্তাব করেছে।

উল্লেখিত সুপারিশসমূহ ছাড়াও সংস্কার প্রস্তাবে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মানবাধিকার, জলবায়ু এবং ত্রিপক্ষীয় ফোরামসহ বিভিন্ন বিষয়ে যেসব পরামর্শ বা সুপারিশ আনা হয়েছে এগুলো মূলত: বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাসমূহের চলমান কর্মসূচি ও পরিকল্পনা। শ্রম সংস্কার প্রস্তাবের নামে মূলত: সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাসমূহের পরিকল্পনাকেই কার্যকর করার কৌশল নেয়া হয়। এসমস্ত সুপারিশের কোনটাতেই শ্রমিকের মৌলিক সমস্যা সমাধানের কোন উপায় উল্লেখ নেই। মজুরি দাসত্ব থেকে শ্রমিককে মুক্ত করার বদলে এ সমস্ত সুপারিশের মাধ্যমে পুঁজির নির্মম শোষণকে পাকাপোক্ত করার চেষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় দেড়শো শ্রম খাত-উপখাত রয়েছে। এর মধ্যে এনজিও, মানবাধিকার, পেশাজীবি ও শ্রমিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করে ৪০-৫০টি সেক্টরের কিছু তথ্য ও সমস্যা তুলে ধরেছে কমিশন। দৈনন্দিন পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এমনসব গতানুগতিক তথ্য ও সমস্যা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যার সাথে বাস্তবের যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। হোটেল ও রেস্টুরেন্ট সেক্টরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক আংশিক হাস্যকর তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় “ হোটেল ও রেস্টুরেন্ট সেক্টরে কর্মরত মোট শ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখ ৭১ হাজার এবং এর মধ্যে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লাখ ৭০ হাজার”। অথচ দ্রুত বর্ধনশীল এ সেক্টরের শ্রমিক ও মালিক সংগঠনসমূহ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০-৩৫ লাখ হওয়ার তথ্য তুলে ধরে আসছে। এপ্রিল মাসে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বললেও গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে মজুরি বৃদ্ধির জন্য এ সেক্টরের শ্রমিকদের তীব্র আন্দোলনের কোন তথ্য রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় নি। অর্থাৎ শ্রমিকদের চাহিদা ও আন্দোলনের মর্মবস্তুকে উপেক্ষা করে ভাসা ভাসা তথ্য ও উপলব্ধি দিয়ে বিদেশী সংস্থাসমূহের পাচার করা ভাষা ও শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে যে বিশাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়, সেখানে সচেতনভাবেই শ্রমিকের উপর পুঁজির নির্মম শোষণকে আড়াল করা হয়েছে। শ্রমিক অঙ্গণে দীর্ঘদিন ধরে যেসব দাবিতে আন্দোলন সংঘটিত হচ্ছে সেসব দাবির কিছু বিষয় সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত করে শ্রমিকদের সামনে সংষ্কার প্রস্তাবকে গ্রহণযোগ্য করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ‘শ্রমজগতের রুপান্তর রুপরেখার’ নামে দেশের শ্রমিক শ্রেণীর উপর নির্মম শোষণের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির টেকসই অবস্থা তৈরির রুপরেখা প্রণয়নের আপ্রাণ চেষ্টা শ্রম সংস্কার কমিশন করেছে বলে প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয়।

দু:খজনক হলেও সত্য দুরভিসন্ধিমূলক সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য ট্রেড ইউনিয়নগুলি থেকেই চাপ তৈরির কৌশল নেয়া হচ্ছে। কমিশন প্রধান ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমল থেকেই যেনো এই সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা যেনো এটিকে এগিয়ে নেন-এই প্রত্যাশা তিনি করেছেন। কিন্তু সংস্কার কমিশনের কার্যপরিধির সীমাবদ্ধতার জন্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য কাজে লাগাচ্ছেন ট্রেড ইউনিয়নসমূহকে। ইতিমধ্যে এই সংস্কার কাজ করতে যেয়ে তিনি যাদের বাছাই করেছিলেন সেসব শ্রমিক নেতারাই এখন তার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন। এতদিন শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সাথে জনাব সুলতান বা বিলস এর সম্পর্ক আড়ালে আবডালে থাকলেও বর্তমানে তা প্রকাশ্যে এসে স্কপ ও বিলস একসাথে শ্রম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। মাঠের শ্রমিকদের কর্মসূচিতে শ্রম কমিশনের সুপারিশ ইনজেক্ট করার অভিপ্রায়ে স্কপের দাবিনামার সাথে কমিশনের সুপারিশসমূহ একসাথে প্রচার করে শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। স্কপের জন্ম হয়েছিল জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয়ে, অন্যদিকে এনজিও ব্যুরো থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিলস সাম্রাজ্যবাদী অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে শ্রমিক আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে কাজ করছে। অর্থাৎ যারা শ্রমিক আন্দোলন করার আকাঙ্খা পোষণ করে এবং যারা শ্রমিক আন্দোলন সুকৌশলে দমনের কার্যক্রম চালায়- উভয় পক্ষই আজ এক মঞ্চে। ফলে শ্রমিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র ও তৎপরতাকে আজ সচেতনভাবে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত পর্যালোচনা করে দেশের শ্রমিক শ্রেণীকে এর বিরুদ্ধে শাণিত সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

(লেখক: যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ)

[লেখাটি সাপ্তাহিক সেবা, ৪৫ বর্ষ ।। সংখ্যা ০৪।। ২ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি হতে সংগৃহিত]