কিশোরগঞ্জে রোপা আমন ধানের আবাদ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের
আমিনুল হক সাদী: কিশোরগঞ্জে এবার রোপা আমন ধানের আবাদ কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। গত বোরো মৌসুমে ধানের ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের আমন ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে।তবে জ্বালানি তেল, সার, মজুরি, কিটনাশকসহ কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তাও আছে কৃষকদের। অনেকে বাড়তি খরচ জোগাতে ধারদেনা করে জমি আবাদ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী পুরোপুরি হাওর অধ্যুষিত। ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় আমন ধান আবাদ হয়নি। কিশোরগঞ্জ কৃষি বিভাগের এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ। চূড়ান্তভাবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আমন ধান আবাদ হয়েছে ৭৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে।বুরো ফসলের মতো আমন ধান আবাদেও ভালো ফলনের আশায় সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন কৃষকরা। তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় উপসহকারীসহ কৃষি বিভাগের লোকজন।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা তাদের জমিতে ও কৃষি বিভাগের প্রদর্শনীগুলোতে আমন ধানের চারা নিড়ানিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোথাও কোথাও মাঠে আলোর ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য। স্থানীয় উপসহকারী কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে সুষম সার ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের কৃষক মনজিল মিয়া। খরচ বেশি হলেও ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।
মনজিল মিয়া বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ দিতে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের চাষাবাদের খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।’ তবে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে ফলন ভালো হলে এবং ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে লাভবান বেন বলে আশা করছেন তিনি।
করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজংগল গ্রামের কৃষক দেওয়ান জামাল দাদ খাঁ কয়েক বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন।
সদর উপজেলার মহিনন্দ গোয়লাপাড়া গ্রামের কৃষক মস্তোফা বলেন,‘যেভাবে চালের দাম বাড়ে সে অনুযায়ী ধানের দাম বাড়ে না। ধানের দাম বাড়লে কৃষকরা লাভবান হতো এবং উৎসাহ নিয়ে ধান আবাদের পরিধি বাড়াত।’ এবার দুই কানি জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন তিনি।
গত মৌসুমে ১ কানি জমিতে বোরো ধান আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়ায় আমন মৌসুমে জমি বর্গা নিয়ে আরও ২ কানি জমিতে চাষ করেছেন নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের নয়াপাড়া ও গোয়ালাপাড়া গ্রামের আমন ধানের চাষিদের সুবিধার্তে মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগারের আংগিনায় স্থাপিত কৃষক পার্টনার স্কুল হওয়াতে আমাদের আরও উপকার হচ্ছে। এতে করে চাষীরা প্রদর্শনীতে সার ও বীজ রাখার উপকরণও পেয়েছেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসে ধানের ক্ষতিকর পোকামাকর দমনে করণীয়সহ বিস্তারিত আলোচনা করছেন, যাতে আমরা লাভবান হচ্ছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শাহীনুল ইসলাম জানান, কিশোরগঞ্জ জেলায় আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে আরও বেশি জমিতে ধান আবাদ হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করা যায় আমনের বাম্পার ফলনবহবে।