অর্থনীতিআন্তর্জাতিকজাতীয়

ব্র্যান্ড-যোগাযোগের বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজন ১৪তম কমিউনিকেশন সামিট

 ঢাকা ব্যুরো: ১৫ নভেম্বর, ২০২৫; ঢাকা: এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড-এর সৌজন্যে এবং ওয়ালটন গ্রুপের সঞ্চালনায় কাজধানীর লে মেরিডিয়ান হোটেলে গত ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ১৬তম কমিউনিকেশন সামিট। বাংলাদেশ ব্র‍্যান্ড ফোরামের এই ফ্ল্যাগশিপ আয়োজনটিতে অংশ নেন দেশের মার্কেটিং, অ্যাডভার্টাইজিং, ব্র্যান্ডিং, মিডিয়া, পাবলিক রিলেশনস এবং ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন খাতের শীর্ষ পেশাজীবীরা। আয়োজনটির এই বছরের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘কেয়স, কালচার অ্যান্ড ক্রিয়েটিভিটি। রিইমার্জিনিং দ্য কমিউনিকেশন ক্যানভাস।”
সামিটের আলোচনায় বক্তারা জানান, যোগাযোগ শিল্প এখন দ্রুত বদলে যাওয়া বাস্তবতার মুখোমুখি। ডিজিটাল পরিবর্তন, নতুন ধরণের দর্শক আচরণ আর সাংস্কৃতিক পরিবর্তন-সবকিছু মিলেই ব্র্যান্ডের বার্তা পৌঁছে দেওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠছে। তাই গল্প বলার নতুন পষ, দর্শকের সঙ্গে আরও অর্থবহ সম্পর্ক এবং সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর-এসব নিয়ে সামিটে বিস্তৃত আলোচনা হয়। বক্তারা আরও বলেন, মানুষের জীবন ও সংস্কৃতিকে বোঝাই এখন কার্যকর যোগাযোগের মূল ভিত্তি।
অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের গ্রুপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী সম্পাদক সাজিদ মাহবুব বলেন, ‘আজ যোগাযোগের দুনিয়া আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত বদলে যাচ্ছে। চারপাশের অনিশ্চয়তা আর তথ্যের ভিড়ে পথ খুঁজে নিতে সৃজনশীলতাই এখন আমাদের সবচেয়ে শক্ত ভরসা। এই সামিট মনে করিয়ে দেয়-সংস্কৃতি, মানবিকতা এবং সৃজনশীল চিন্তা মিলেই তৈরি হয় এমন ব্র্যান্ড-গল্প যা দর্শকের কাছে সত্যিকারের সংযোগ তৈরি করে এবং ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।”
দিনব্যাপী আয়োজনে ৩টি কিনোট সেশন, এটি প্যানেল ডিসকাশন ও ২টি কেস স্টাডির সমন্বয়ে ব্র্যান্ড-কমিউনিকেশন শিল্পের চলমান প্রবণতা, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ এবং পরিবর্তনশীল বাস্তবতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
কি-নোট সেশনগুলোতে বক্তারা তুলে ধরেন-ব্যবসায়িক সমস্য সমাধানে সৃজনশীল ভাবনার কার্যকর প্রয়োগ, ডিজিটাল যুগে ব্র্যান্ডের আত্মতুষ্টি থেকে তৈরি হওয়া ঝুঁকি- যার বাস্তব উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে ‘জোহরান মামদানি’ ক্যাম্পেইনের বিশ্লেষণ-এবং ব্র্যান্ডের তথ্যজট ভেদ করে স্পষ্ট, গ্রহণযোগা ও প্রভাবশালী বার্তা তৈরির প্রয়োজনীয় কাঠামো। কি-নোট বক্তারা ছিলেন-তানজীন আলম, কান্ট্রি হেড, বাংলাদেশ অ্যান্ড এসইএ এমামী লিমিটেড, অরূপ ইরফান স্যানাল, হেড অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজিস্ট, মাইটি: এবং তৌফিক মাহমুদ, এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মিডিয়াকম লিমিটেড।
নিজের কি-নোটে তানজীন আলম তুলে ধরেন-সত্যিকারের সুজনশীলতা তখনই ফল দেয়, যখন তা বাস্তব ব্যবসায়িক সমস্যা সমাধান করে। তিনি বলেন, ‘মানুষের অভ্যাস বদলাতে হলে আগে বুঝতে হবে কেন বদলানো দরকার। তাই ব্র‍্যান্ডের উচিত প্রচলিত ভাবনার বাইরে গিয়ে আরও ধারালো, অন্তর্দৃষ্টি-নির্ভর কৌশল তৈরি করা। তাঁর মতে, একেক সময় পাঁচ সেকেন্ডের ঝলক, এক টুকরো বুদ্ধিদীপ্ত বাঁক বা শক্ত সাংস্কৃতিক সংকেত-অতি প্রফেজনা ছাড়াই দর্শকের মনোযোগ কাড়তে পারে।
প্যানেল আলোচনাগুলোতে উঠে আসে-পিচ-নির্ভর সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা পেছনে ফেলে ক্লায়েন্ট-এজেন্সির পার্টনারশিপভিত্তিক কাজের পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা। আলোচনা হয় কনটেন্টের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সৃজনশীলতার গভীরতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যত-মনস্ক, উদ্দেশ্য-নির্ভর মার্কেটিং নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা নিয়ে। পাশাপাশি, দীর্ঘমেয়াদে ব্র্যান্ডের ভ্যালু তৈরি করতে অর্থ, অনুভূতি ও সংস্কৃতিভিত্তিক কৌশলের গুরুত্বও বিশেষভাবে জায়গা পায়। এছাড়াও, কেস স্টাডি সেশনগুলোতে বিশ্লেষণ করা হয়-ব্র্যান্ডকে এখন কোন সাংস্কৃতিক ও আচরণগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হচ্ছে এবং তার প্রভাব কোথায় পড়ছে।
প্রথম প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বলেন, সমৃদ্ধ ক্লায়েন্ট-এজেন্সি সম্পর্ক গড়ে ওঠে পারস্পরিক সহযোগিতা, সম্মান এবং যৌথ দায়িত্ববোধের মাধ্যমে। ন্যায্য প্রক্রিয়া-যেমন যথাযথ পিচ-ফি ও ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তি-দুই পক্ষকেই আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। আলোচকরা উল্লেখ করেন, এজেন্সির বহুমুখী শিল্প-অভিজ্ঞতা থাকে, আর ক্লায়েন্ট যোগ করে ডেটা ও প্রেক্ষাপট, এই সমন্বয়ই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে সবচেয়ে জরুরি। প্যানেলের মতে, দীর্ঘমেয়াদি বিশ্বাস তৈরি হয় যখন উভয় পক্ষ গবেষণা মূল্যায়ন এবং সমস্যা সমাধানে প্রকৃত অংশীদারের মতো একসঙ্গে কাজ করে।
সামিটের অন্যান্য সেশনে বক্তা হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন- আফজান মাহবুব, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, গ্রে গ্রুপ, অজয় কুমার কুনডু, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার, মিডিয়াকম লিমিটেড, সারাহ আলী, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, এফসিবি বিউপি, শারজিল করিম, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইন্টারস্পিড অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেড, ইশতিয়াক শহরিয়ার, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব ডিপার্টমেন্ট, ডিজিটাল অ্যাসেটস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, বিকাশ লিমিটেড, দ্রাবীর আলম, চিফ অপারেটিং অফিসার অ্যান্ড ডিরেক্টর, এক্স সলিউশনস লিমিটেড, তানভীর হোসাইন, এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর, সান কমিউনিকেশনস লিমিটেড; লুতফি চৌধুরী, কো-ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও, অ্যাডফিনিক্স লিমিটেড এবং প্রমুখ।
এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড-এর সৌজনো এবং ওয়ালটন গ্রুপের সঞ্চালনায় কমিউনিকেশন সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়। সহযোগিতায় কানস লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভাল অব ক্রিয়েটিভিটি। স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভার্টাইজিং অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, এশিয়া মার্কেটিং ফেডারেশন, বিবিএফ সিএমও ক্লাব, নলেজ পার্টনার মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ, হসপিটালিটি পার্টনার লে মেরিডিয়ান ঢাকা: অফিশিয়াল ক্যারিয়ার পার্টনার টার্কিশ এয়ারলাইন্স; পিআর পার্টনার ব্যাকপেজ পিআর। কমিউনিকেশন সামিট ২০২৫ বাংলাদেশ ব্র‍্যান্ড ফোরামের একটি উদ্যোগ