ভারতের কৃষক আন্দোলনের ছয়মাস: শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বের অভাবে অনিশ্চিত আন্দোলনের ভবিষ্যত
সুদীপ্ত শাহিন:করোনাকাল ও বিরোধীদের দমন পীড়নের মধ্যে রাখায় বিগত প্রায় ছয় মাস ভারতে কোনো আন্দোলন নেই। প্রতিরোধ-সংগ্রাম নেই। স্বৈরাচারী মোদী সরকার যা যা করতে চেয়েছে, মসৃণভাবে তা হয়ে যাচ্ছে। তা সে সামাজিক অসন্তোষ (দিল্লি দাঙ্গা) দমানো হোক অথবা সরকারি সিদ্ধান্তের (কাশ্মীর) রূপায়ণ হোক। এই সুযোগে কৃষিক্ষেত্রে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সংস্কার সেরে ফেলতে সরকার তিন-তিনটি অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি করে গত বছরের জুন মাসে। কিন্তু তা যে বুমেরাং হতে পারে, সম্ভবত সেই ধারণা সরকার করেনি। তাই মোদি সরকার মুখোমুখি হয় এক বড় চ্যালেঞ্জের। সংসদীয় অধিবেশনের মুখ্য বিষয় ছিল কৃষি ও শ্রমসংস্কার চূড়ান্ত করে ফেলা। অধ্যাদেশের বয়স ছয় মাস হলে তাকে আইনে পরিণত করতে হয়। কিন্তু যেভাবে তা করা হলো, প্রায় বিনা আলোচনায়, বিরোধীদের যাবতীয় দাবি নস্যাৎ করে, বিতর্কিত বিল আরও বিবেচনার জন্য ‘সিলেক্ট কমিটিতে’ পাঠানোর সুপারিশ অগ্রাহ্য করে। তাতে স্পষ্ট যে, সরকার চায় না সিদ্ধান্তের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হোক। কৃষি ভারতীয় সংবিধানের যৌথ তালিকায় থাকলেও এ ক্ষেত্রে রাজ্যের অধিকার ছিল প্রশ্নাতীত। সংস্কারের ফলে সেই অধিকার চলে আসছে কেন্দ্রের হাতে। নতুন আইনে কৃষিবাজারের (ভারতে যা ‘মান্ডি’) ওপর রাজ্যের একচেটিয়া অধিকার আর থাকবে না। কৃষকদের মতো বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থাও তাদের পছন্দমতো ‘মান্ডি’ তৈরি করতে পারবে। কৃষককে বাধ্য করা যাবে না কোনো এক বাজারে উৎপাদিত পণ্য বিক্রিতে। চুক্তিভিত্তিক চাষও করা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, কোন দামে চাষি তাঁর পণ্য বেচবেন-তা বাজারই ঠিক করে দেবে। কৃষক বিক্ষোভের বড় কারণগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস (এমএসপি) নিয়ে। ভারতের কৃষিব্যবস্থায় এমএসপি প্রথা চালু রয়েছে বহু দশক ধরে। ক্ষতির হাত থেকে চাষিকে বাঁচিয়ে ন্যায্যমূল্য দিতে সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ফসলের এমএসপি ঠিক করে দেয়। এটাই ভারতের কৃষকের প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার। সেই দামের নিচে সরকার ফসল কিনতে পারে না। এই ব্যবস্থা চাষির কাছে একটা বড় নিরাপত্তাও। নতুন আইনে কিন্তু এই প্রথা বাধ্যতামূলক রাখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী বলছেন বটে, এমএসপি ছিল, আছে ও থাকবে। কিন্তু নতুন আইনে তার কোনো স্বীকৃতি রাখা হয়নি। কৃষক সংগঠন ও সরকারের বিরোধীরা চাইছে, এমএসপি প্রথাকে নতুন আইনের আওতায় এনে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করতে, যাতে বেসরকারি দেশি ও বহুজাতিক সংস্থা কম দামে ফসল বিক্রিতে কৃষককে বাধ্য করাতে না পারে। সংস্কার আরও একটি বিষয় নিশ্চিত করেছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনের আওতা থেকে বাদ দিয়েছে চাল, ডাল, তৈলবীজ, পেঁয়াজ ও আলুকে। এই পাঁচ পণ্যের উৎপাদন ও মজুতের ওপর কেন্দ্র বা রাজ্য কোনো সরকারেরই আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। আলু ও পেঁয়াজের মতো পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ও অন্য পণ্যের দাম ১০০ শতাংশ বাড়লে একমাত্র তবেই রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারবে। নচেৎ বাজারই সর্বেসর্বা। প্রধানমন্ত্রী মোদী যে সংস্কারকে ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলেছেন, বিরোধীদের কাছে তা ‘গণতন্ত্রের কৃষ্ণপক্ষ’ ও ‘কৃষকদের মৃত্যু পরোয়ানা’। বিশেষজ্ঞের মত- স্বাধীন কৃষক হতে চলেছেন বেসরকারি পুঁজির হাতের পুতুল ও ক্রীতদাস। যদিও সরকার বলছে এর ফলে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়বে, মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য দূর হবে। কিন্তু ন্যূনতম সহায়ক মূল্য না থাকায় কৃষক–শোষণ তীব্র হবে। যে কারণে বিজেপি ও আরএসএসের আদর্শভিত্তিক ভারতীয় কিষান সংঘ ও স্বদেশি জাগরণ মঞ্চও এ আইনে বদল আনার দাবি জানিয়েছে। ভারতের ৮৪ কোটি গ্রামীণ নাগরিকের মধ্যে ৫০ কোটি কৃষককূল আজ এই কৃষিবিলের কারণে অশান্তি ও দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে এই কৃষক আন্দোলনের শ্রেণী চরিত্র ও ভবিষ্যত নিয়ে। স্মরণকালের এই বৃহৎ কৃষক আন্দোলন ছয়মাস অতিবাহিত হলেও আজো এক জায়গায় কেনো দাঁড়িয়ে রয়েছে ? একটা আশংকা তৈরি হয়েছিলো, ফসল তোলার সময় হয়তো আন্দোলনের ভাটা পড়তে পারে । সরকারও হয়তো সেরকম একটা সুযোগের অনুসন্ধানে ছিলো। কিন্তু দেখা গেলো আন্দোলন জারি রেখেই ফসল কাটা হয়েছে। তাহলে বোঝা যায় কৃষকরা তাদের দাবির ক্ষেত্রে নাছোর অবস্থাতেই রয়েছে । তাই আরো আগ্রহ উদ্রেকের কারণ হলো যে, কৃষকরা এই আন্দোলনকে কোন পরিণতির দিকে নিয়ে যাবেন? যদিও বলা হচ্ছে আন্দোলনকারী কৃষকেরা নিজেরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না। উল্লেখ্য যে, ভারতের ১২টি বিরোধী দল কৃষকদের বিজেপি ক্ষমতাগ্রহণের ২৬ মে ‘কালা দিবস’ পালনের এই কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। ১২ দলের নেতারা হলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, সিপিআই নেতা ডি রাজা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, আরজেডির তেজস্বী যাদব, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন, ডিএমকের এম কে স্ট্যালিন, কাশ্মীরের গুপকর জোটের ফারুক আবদুল্লা, সংযুক্ত জনতা দলের এইচ ডি দেবগৌড়া ও সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব। অন্যদিকে রাজধানী দিল্লী ঘেরাওয়ের যে কয়েকটি স্থানে কৃষকরা সমাবেশিত হয়েছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিংঘু, টিকরী, গাজীপুর, শাহজাহানপুর । প্রত্যক্ষদর্শিদের মাধ্যমে জানা যায় সিংঘুতে রয়েছে পাঞ্জাবী কৃষকদের ভিড়। মূলত ছোট-মাঝারী কৃষকদের অবস্থান সেখানে। টিকরীতে রয়েছেন সিপিএম এর নেতা হান্নান মোল্লার নেতৃত্বে কৃষক সমাবেশ। দিল্লী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরে রয়েছেন মহেন্দ্র সিং ও রাকেশ টিকায়েত এর নেতৃত্বে মাঝারী টাইপের কৃষকদের সমাবেশ। শাহজাহানপুরে যোগেন্দ্র যাদবের নেতৃত্ব তথা মূলত: স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্বে কৃষক সমাবেশ। তাহলে দেখা যাচ্ছে বৃহৎ এই কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বে অনুপস্থিত রয়েছেন গ্রামীন গরীব কৃষক ও সর্বহারা শ্রেণী এবং শহরের শ্রমিক শ্রেণী। ফলে আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে আসছে সংস্কারের প্রশ্ন। যে একচেটিয়া পুঁজি তাদেরকে গ্রাস করতে আসছে সেই একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক বক্তব্য ও কর্মসূচি নেই। এমনকি সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজির দালাল হিসেবে ভারতের যেসব শাসেকগোষ্ঠী কৃষকদের সর্বনাশ করছে তাদের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই। তাহলে এই আন্দোলনের ভবিষ্যত কি?
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রাশিয়ার গ্রামাঞ্চলে উত্তাল কৃষক আন্দোলন শুরু হয় । তখন রুশ শ্রমিক শ্রেণীর কাছে প্রশ্ন তৈরি হয়, এসব আন্দোলনের পরিণতি কোন দিকে নিয়ে যেতে হবে। সে প্রেক্ষিতে ১৯০৬ সালের ৩০ এপ্রিল রাশিয়ান সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক লেবার পার্টির ৪র্থ কংগ্রেসের পঞ্চদশ অধিবেশনে প্রদত্ত বক্তৃতায় স্ট্যালিন বলেছিলেন- “কৃষকদের সমস্যার জন্য আমাদের চাই একটি গণতান্ত্রিক কৃষি বিষয়ক কর্মসূচি। . . . . . . .এটা কারো কাচে গোপন নেই , রাশিয়ায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিকাশে এখন দুটি পথ লক্ষণীয়; একটি হল ঝুটা সংস্কারের পথ, আর একটি হল বিপ্লবের পথ । এটাও সুস্পষ্ট যে, জার সরকারের নেতৃত্বে বড় বড় কলকারখানার মালিক এবং জমিদারগণ প্রথম পথ গ্রহণ করেছে এবং শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে বিপ্লবী কৃষক সমাজ ও পেটিবুর্জোয়া সম্প্রদায় দ্বিতীয় পথ গ্রহণ করেছে । শহরগুলিতে বিকাশমান সংকট এবং গ্রামাঞ্চলের জনপদগুলিতে দুর্ভিক্ষ আর একটি উত্থানকে অবশ্যাম্ভাবী করে তুলেছে- সুতরাং এখন আর দোদুল্যমানতা চলতে দেওয়া যায় না। হয় বিপ্লবের গতিতে জোয়ার দেখা দিয়েছে এবং সেক্ষেত্রে বিপ্লবকে অবশ্যই শেষ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে হবে অথবা বিপ্লবের গতিতে ভাটার টান দেখা দিয়েছে এবং সে অবস্থায় আমরা এ রকম কর্তব্য হাতে নিতে পারি না, হাতে নেওয়া উচিত নয়। মার্কসীয় দ্বন্দ্ববাদ অনুসারে. . . . . আমাদের অবশ্যই এক শেষ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে আমরা সকলেই একমত। কিন্তু কোন অবস্থাবিশেষে আমরা এটা করতে পারি এবং আমাদের এটা করা উচিত? শ্রমিক শ্রেণীর অধিনায়কত্বে অথবা বুর্জোয়া গণতন্ত্রের অধিনায়কত্বে ? এখানেই আমাদের প্রধান মতপার্থক্যের সূচনা। . . . .শ্রেণীগত স্বার্থে শ্রমিক শ্রেণীর অধিনায়কত্ব প্রয়োজনীয় হয়, যদি লেজুড় হয়ে না থাকে শ্রমিক শ্রেণীকে বর্তমান বিপ্লবের নেতৃত্বে থাকতেই হয়। তাহলে এটা না বললেও চলে যে, শ্রমিক শ্রেণী সশস্ত্র অভ্যুত্থানের সংগঠনে অথবা ক্ষমতা দখলের কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পারে না। বলশেভিকদের কর্মপরিকল্পনা হল এই।”
রাজধানী দিল্লী থেকে আনুমানিক গড়ে ৫০/৬০ কিলোমিটার দূরে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই কৃষক আন্দোলনে দিল্লীর ট্রেড ইউনিয়নসমূহ বা বস্তিবাসীরাও অংশগ্রহণ করে নি। ফলে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, এই আন্দোলন মূলত নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। কারণ আনীত এই কৃষি বিল মূলত: সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে প্রণীত। দালাল মোদী সরকার সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করছে। এর সাথে স্বার্থগত দ্বন্দ্ব তৈরি হয় ভারতের উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত কৃষক, মধ্যস্বত্ত মান্ডি এবং স্থানীয় এনজিওদের। ভারত নয়া-ঔপনিবেশিক আধা-সামন্তবাদী দেশ হওয়ার কারণে এতদিন শিল্পক্ষেত্রে একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির উলঙ্গ শোষণ চলে আসলেও প্রায় ৮৪ কোটি গ্রাম অধ্যুষিত মানুষকে তীব্র শোষণের জন্য কৃষিতেও সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজি বিনিয়োগ হচ্ছে। এর ফলে ভারতের শ্রমিক ও ভূমিহীন মানুষ ছাড়াও উপরেল্লিখিত অবস্থানের মানুষের উপর শোষণের তীব্রতা সরাসরি পড়বে। এই কারণেই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে অংশীদার কেবল দেশের শ্রমিক, ভূমিহীন নয়। উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত, শিল্পপতি-ব্যবসায়ী, এনজিও-করণিক সকলেই সাম্রাজ্যবাদী শোষণের শিকার। ফলে এই লড়াইয়ের চরিত্র জাতীয় রুপ ধারণ করে এবং তা জাতীয় বিপ্লবে পরিণত হয়। পাশাপাশি ভারতের সমাজে ঐতিহাসিকভাবে বিদ্যমান রয়েছে যে সামন্তীয় শোষণের অবশেষ, ভারতের জনগণের মুক্তির জন্য তার বিরুদ্ধে কৃষি বিপ্লব তথা গণতান্ত্রিক বিপ্লবও ভারতের জনগণকে সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু ভারতের জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যমান ঘাটতি রয়েছে নেতৃত্বের । ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত বিশ্বব্যাপী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতা আজ শ্রমিক শ্রেণী্। ভারতের সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বের অনুপস্থিতি দৃশ্যমান রয়েছে। ফলে আন্দোলন পরিণতির দিকে অগ্রসর করতে দোদুল্যমানতাও প্রকাশ পাচ্ছে। তাই এই আন্দোলনকে সফল পরিণতির দিকে এগিয়ে নিতে হলে জরুরি ভারতের শ্রমিক শ্রেণীকে এর নেতৃত্বে আসনে বসে হাল ধরতে হবে। ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীকে সুসজ্জিত তথ্যে প্রস্তুত হয়ে হাল ধরলেই কেবল এই আন্দোলনের নতুন গতি পাবে। নতুবা বিজেপি’র বিরুদ্ধে বিরোধীদের জন্য বড়জোর একটি ভোটব্যাংক তৈরি হয়ে সংগঠিত আন্দোলনের বেদনিবিধুর পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে।
Muchas gracias. ?Como puedo iniciar sesion?
перепродажа аккаунтов маркетплейс для реселлеров
перепродажа аккаунтов заработок на аккаунтах
аккаунты с балансом https://magazin-akkauntov-online.ru/
гарантия при продаже аккаунтов продать аккаунт
магазин аккаунтов услуги по продаже аккаунтов
маркетплейс аккаунтов безопасная сделка аккаунтов
площадка для продажи аккаунтов https://pokupka-akkauntov-online.ru/
Database of Accounts for Sale Account Sale
Account exchange Social media account marketplace
Account Store Accounts market
Account market Account Catalog
Account Trading Service Sell Pre-made Account
Account Sale Account Trading Platform
Verified Accounts for Sale Buy and Sell Accounts
Website for Selling Accounts Social media account marketplace
Account Purchase accountsmarketplaceonline.com
Website for Buying Accounts Account Trading
Buy Pre-made Account Sell Pre-made Account
verified accounts for sale account sale
account store website for buying accounts
marketplace for ready-made accounts sell pre-made account
account selling service online account store
find accounts for sale account catalog
buy account account trading
database of accounts for sale socialaccountsdeal.com
account selling platform account buying platform
website for buying accounts gaming account marketplace
account acquisition sell account
account acquisition sell pre-made account
account store gaming account marketplace
account trading platform account trading service
verified accounts for sale account trading
account trading service account trading platform
accounts marketplace account buying service
accounts for sale social media account marketplace
account acquisition https://best-social-accounts.org
sell accounts verified accounts for sale
account market account buying platform
secure account sales marketplace-social-accounts.org
website for selling accounts gaming account marketplace
account buying platform guaranteed accounts
purchase ready-made accounts account store
website for selling accounts accounts market
website for buying accounts accounts marketplace
account catalog verified accounts for sale
buy accounts account trading
profitable account sales buy accounts
find accounts for sale buy accounts
sell pre-made account https://buy-best-accounts.org
account exchange service https://social-accounts-marketplaces.live
buy account https://accounts-marketplace.live
account buying service https://social-accounts-marketplace.xyz
secure account sales https://buy-accounts.space
buy account https://buy-accounts-shop.pro/
ready-made accounts for sale https://buy-accounts.live
account store https://social-accounts-marketplace.live
accounts marketplace accounts market
account trading https://accounts-marketplace-best.pro
магазин аккаунтов https://akkaunty-na-prodazhu.pro/
купить аккаунт rynok-akkauntov.top
продажа аккаунтов https://kupit-akkaunt.xyz/
маркетплейс аккаунтов соцсетей akkaunt-magazin.online
площадка для продажи аккаунтов kupit-akkaunty-market.xyz
магазин аккаунтов https://akkaunty-optom.live/
маркетплейс аккаунтов соцсетей akkaunty-dlya-prodazhi.pro
купить аккаунт https://kupit-akkaunt.online/
buying facebook account https://buy-adsaccounts.work
cheap facebook account https://buy-ad-accounts.click
buy fb ad account https://buy-ads-account.click
buy a facebook account https://ad-account-buy.top
facebook ad account buy https://buy-ads-account.work/
facebook ads account buy ad-account-for-sale.top
cheap facebook advertising account https://buy-ad-account.click
buy fb account buy facebook accounts
google ads agency account buy https://buy-ads-account.top
buy google ad threshold account https://buy-ads-accounts.click
buying facebook accounts buy a facebook ad account
buy adwords account ads-account-for-sale.top
buy adwords account https://ads-account-buy.work
buy google ads agency account https://buy-ads-agency-account.top
buy aged google ads accounts https://ads-agency-account-buy.click
buy facebook bm business manager for sale
verified facebook business manager for sale https://buy-bm.org/
tiktok ad accounts https://buy-tiktok-ads-accounts.org
buy tiktok ads accounts https://buy-tiktok-ads.org
buy tiktok business account https://buy-tiktok-business-account.org
buy tiktok ad account https://tiktok-ads-agency-account.org