মৃত্যুর ১১ দিন পর ছেলের সন্তানের বাবা হলেন নিহত ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদা
রফিকুল ইসলাম খান, গফরগাঁও প্রতিনিধিঃ গাজীপুরের টঙ্গীতে রাসায়নিক গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান ফায়ার সার্ভিস কর্মী নুরুল হুদার। তাঁর মৃত্যুর ১১ দিন পর আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) স্ত্রী আসমা খাতুন পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নবজাতকের জন্ম হয়।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর মারা যান দগ্ধ ফায়ার সার্ভিস কর্মী নুরুল হুদার মৃত্যু হলে ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের ধামাইল গ্রামের নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানের তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
নুরুল হুদা টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসে ফায়ার ফাইটার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি চাকরিতে যোগ দেন ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ। তিনি মা, বাবা, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীসহ এক মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। নুরুল হুদার বাবার নাম আবুল মুনসুর। তিনি পেশায় একজন চামড়া ব্যবসায়ী। মৃত্যুর সময় নূরুল হুদা নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আসমা খাতুন, ১০ বছরের মেয়ে নুসরাত নেহা ও ৩ বছরের এক ছেলে আবিদ হাসানকে রেখে যান।
স্বজনরা জানায়, ফায়ার সার্ভিস কর্মী নূরুল হুদার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আসমা খাতুনকে গত রোববার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর সঙ্গে ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও সঙ্গে ছিলেন। চিকিৎসকরা পর্যালোচনা শেষে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন আসমা খাতুন। এ সময় বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী, মোঃ ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর রোকনুজ্জামান, স্টেশন অফিসার মোঃ জুলহাস উদ্দিন, ফায়ার ফাইটার মোঃ শাহজাহান মিয়া ও মোঃ আসাদুল হক, উচ্চমান সহকারী ফাতেমা আক্তার, কম্পিউটার অপারেটর ফাতেমা আক্তার সহ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পরিবারটির পাশে ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নূরুল হুদার বাবা আবুল মুনসুর বলেন, আমি ছেলে হারাইলাম, আমার ছেলের সন্তান জন্ম নিলো এতিম হয়ে। সে তার সন্তানকে দেখে যেতে পারল না। আল্লাহ সকল পরিকল্পনাকারী তিনিই আমার নাতীকে দেখে রাখবেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, গত রোববার রোগী ভর্তি হওয়ার পর আজ সোমবার সকালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। মা ও নবজাতক দুজনেই ভালো আছে। দুপুরে হাসপাতালের পরিচালকসহ আমরা নবজাতক ও মায়ের খোঁজখবর নিয়ে এসেছি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দী জানান, আমি জানতে পারি শহীদ ফায়ার ফাইটার নুরুল হুদার স্ত্রীর যখন মৃধু ব্যাথা হচ্ছে। তখন স্টেশন অফিসার দেলোয়ার হোসেনের মাধ্যমে তার গ্রামের বাড়ী থেকে আমাদের এখানে নিয়ে আসি এবং আমার অফিসে রেখেই আমার একটা টিম হাসপাতালে পাঠাই সবকিছু নিশ্চিত করার পরেই আমি সাথে গিয়ে হাসপাতালের উপপরিচালক জাকিউল ইসলামের মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়। নুরুল হুদার স্ত্রীকে ভিআইপি মর্যাদা লেভার ওয়ার্ডে স্পেশাল একটা রুমের ব্যবস্থা করে এবং হাসপাতাল কতৃপক্ষ একটা টিম গঠন করে। টিমের মাধ্যমে আজ সকাল সাড়ে দশটার দিকে উনার অস্ত্রোপাচার সম্পন্ন হয়।