গার্মেন্টস সেক্টরে ঘোষিত প্রহসনের মজুরি ও গ্রেড কারসাজিসহ সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে ওএসকে ফেডারেশনের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিতl

গার্মেন্টস সেক্টরে ঘোষিত প্রহসনের মজুরি ও গ্রেড কারসাজিসহ সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন। ১ ডিসেম্বর সকাল ১১ ঘটিকায় গুলিস্তানে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে মিলিত হয়। ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় নেতা তফাজ্জল হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট বেলায়েত হোসেন নয়ন ও ঢাকা পোশাক প্রস্তুতকারী শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম মানিক।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ০৭/১১/২৩ খ্রি: তারিখে গার্মেন্টস শিল্প সেক্টরে নিযুক্ত সকল শ্রেণীর শ্রমিক-কর্মচারীগণের জন্য নিম্নতম মজুরি হারের খসড়া সুপারিশ, ২০২৩ নিম্নতম মজুরি বোর্ড হতে হয়। ঘোষিত সুপারিশে নিম্নতম মজুরিসহ মজুরি কাঠামোর অসঙ্গতিপূর্ণ দিকসমূহ তুলে ধরে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে গত ২০ নভেম্বর আপত্তিসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা মজুরি বোর্ডের কাছে তুলে ধরা হয়। কিন্তু মজুরি বোর্ড সেসব প্রস্তাবনা ও আপত্তি আমলে না নিয়ে মালিকদের স্বার্থেই সাড়ে ১২ হাজার টাকার নি¤œতম মজুরি অপরিবর্তিত রেখেছে। মজুরি বোর্ড থেকে ৫৬ শতাংশ মজুরি বাড়ানোর কথা বলা হলেও বিগত ৫ বছরে শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট হিসাব করলে বর্ধিত মজুরি ২৮ শতাংশের বেশি হয় না। অথচ দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। ২০১৮ সালে গার্মেন্টস সেক্টরের মজুরির ঘোষণার সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে। এছাড়া গত ৪৬ বছরের মধ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার সবচেয়ে বড় দরপতন হয়েছে। এর ফলে আমদানি নির্ভর বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। এতে দেশের অন্যান্য গরীব শ্রমজীবি মানুষের মত গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও প্রকৃত আয় অনেক কমে যায়। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে গার্মেন্টস মালিকদের প্রকৃত মুনাফা অনেক বেড়ে যায়।

নেতৃদ্বয় বলেন, নিম্নতম মজুরি কাঠামোতে পূর্বের ৭টি গ্রেডের স্থলে ৪টি গ্রেড করা হয়েছে। এর ফলে সিনিয়র কাটার, সিনিয়র মেকানিক, সিনিয়র ইলেকট্রিশিয়ানদের যথাক্রমে মেকানিক, চীফ মেকানিক এবং কাটিং, চীফ কাটিং পদে পদোন্নতির সুযোগ তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ শ্রমিকদের বক্তব্য ছিলো যে, শিক্ষানবীশ শেষ হওয়ার পর একজন শ্রমিককে সহকারী অপারেটর হিসেবেই বছরের পর বছর ৭ নং গ্রেডে কারখানা কর্তৃপক্ষ রেখে দেয়। এর ফলে ৬নং গ্রেডের সাধারণ অপারেটর ও ৫নং গ্রেডের জুনিয়র অপারেটরের পদ পেরিয়ে শ্রমিকরা কখনো একজন অপারেটরের পদে পদোন্নতি হতে পারে না। এ কারণে ৫ ও ৬ নং গ্রেড বাতিল করে নতুন মজুরি কাঠামো গঠন করার পক্ষে শ্রমিকরা দাবি তুলেছিলো। এর পরিবর্তে শ্রমিকদের পদোন্নতির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

এছাড়া পূর্বের ৩ নং গ্রেডের শ্রমিকদের ১নং গ্রেডে উন্নীত করলেও ১নং গ্রেডে সর্বসাকুল্যে মজুরি ছিলো যেখানে ১৮,২৫৭/ সুপারিশকৃত মজুরিতে নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১৫০৩৫/ টাকা। অর্থাৎ ১নং গ্রেডের শ্রমিকদের জন্য মজুরি কর্তন করা হয়েছে, যা প্রচলিত শ্রম আইন বিরোধী। কারণ যে সুযোগ বা অধিকার শ্রমিকদের একবার প্রদান করা হয়, পরবর্তীতে তা কর্তন করা যায় না।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ দিয়ে রাসেল হাওলাদার, ইমরান হোসেন, আঞ্জুয়ারা খাতুন ও জালালুদ্দিনকে গুলি করে হত্যাকরাসহ অসংখ্য শ্রমিককে আাহত করে। অথচ সরকার ও মালিক এ ঘটনায় নিজেদের দায় এড়িয়ে শ্রমিকদের উপর সহিংসতার দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। বিদেশী পুঁজি তথা পশ্চিমা লগ্নিপুঁজির উপর নির্ভর গার্মেন্টস শিল্পের ্উপর নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য নিয়ে বর্তমানে একচেটিয়া লগ্নিপুঁজি তথা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চীন-রাশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠছে। এ শিল্পে নিয়োজিত একটি বৃহৎ সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন মহল স্ব-স্ব স্বার্থে ব্যবহার করার দিক থাকছে। গার্মেন্টস সেক্টরে পশ্চিমা বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর মদতপুষ্ট বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও এনজিও সংস্থা গার্মেন্টস সেক্টরে ক্রিয়াশীল রয়েছে। তারা তাদের স্বার্থ রক্ষা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যও তৎপর রয়েছে। ভূ-রাজনৈতিকগত গুরুত্বের কারণে সংঘটিত এই দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে শাসক-শোষকগোষ্ঠী শ্রমিকদের বাচার মত মজুরির আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্ঠা করে। এমনাবস্থায় মজুরি নিয়ে একচেটিয়া লগ্নি পুজি ও দেশীয় দালাল পুজির সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত মোকাবেলা করে আপোসহীন ধারার বিপ্লবী বিকল্প ধারার শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ মজুরিবৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলনের নেতা বাবুল হোসেনসহ গ্রেফতারকৃত সকল শ্রমিক নেতা ও কারখানা শ্রমিকদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *