ময়মনসিংহ-৯ নান্দাইল আসনে ঐক্য ও বিভক্তির সঙ্কটে বিএনপি;যোগ্য প্রার্থী না হলে আসন হারানোর শঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার: ১৫৩ ময়মনসিংহ-৯ নান্দাইল আসনে ঐক্য ও বিভক্তির সঙ্কটে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এতে করে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যর্থ হলে এ আসনটি হারানোর শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। নান্দাইল বিএনপির দীর্ঘদিনের একটি বড় সমস্যা হলো গ্রুপিং ও বিভক্তির রাজনীতি। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় একাংশ অন্য অংশের বিপরীতে অবস্থান নেওয়ায় রাজনৈতিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে নান্দাইল বিএনপির অবস্থান অনেক সময় নাজুক হয়ে গেছে। এই বিভক্ত অবস্থার কারণে যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, তবে এ আসনে দলটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। বিপরীতে, যদি একক নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী শক্তি একত্রিত হয়, তাহলে নান্দাইলে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করা সম্ভব।
নান্দাইলের মানুষ পরিবর্তন চায়, ফ্যাসিবাদী শক্তির দমননীতি থেকে মুক্তি চায়। তারা জানে, বিভক্ত শক্তি দিয়ে সেই পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই বিএনপি যদি কৌশলগতভাবে সঠিক প্রার্থী বেছে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে এ আসনটি হারানোর ঝুঁকি থেকেই যাবে। স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ আসনটি বিএনপি’র ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। গত ১৭ বছর ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও মাঠে রয়েছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। আবার দলের দু:সময়ে পাশে না থেকেও দলীয় সুবিধা নেওয়া ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকেই। বর্তমানে উপজেলায় বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও একাধিক ব্যানারে বিএনপি’র পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। সক্রিয় অন্য গ্রুপগুলো ইতিমধ্যে আব্বায়ক কমিটি বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছে এবং বর্তমানে বিএনপি’র ৫টি গ্রুপ মাঠে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী, উপজেলা বিএনপি সম্মানিত সদস্য সাবেক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ.কে.এম শামসুল ইসলাম শামস (সূর্য্য), উপজেলা বিএনপি’র সদস্য ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসের খান চৌধুরী, উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এমডি মামুন বিন আব্দুল মান্নান ও মেজর জেনারেল অব: আনোয়ারুল মোমেন রয়েছেন।
তবে গত ১৭ বছর ধরে নান্দাইল বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের প্রধান ভরসা ছিল বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামসুল ইসলাম শামস ও তার পরিবার। ২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে নান্দাইলের রাজনীতিতে সরাসরি যোগ দেন ব্রিগেডিয়ার শামস। তার ছোট ভাই নান্দাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ.এফ.এম আজিজুল ইসলাম পিকুল সর্বদা মাঠে থেকে ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তিনি ফ্যাসিবাদ কর্তৃক হামলা ও নির্যাতন সহ অর্ধশতাধিক মামলার শিকার হয়েছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাদ যাননি তাঁর বড় ভাই সাবেক ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক এ.কে.এম রফিকুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা এবং খেটেছেন জেল।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিমতে, বিগ্রে: শামসুল ইসলামের ব্যক্তিত্ব, সততা, প্রজ্ঞা, নিষ্ঠা, কর্মী বান্ধবতা পরিবারের ত্যাগ ও ধারাবাহিকতা নান্দাইল বিএনপির জন্য এক ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি ব্রিগেডিয়ার শামসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে বিভক্ত নান্দাইল বিএনপি এক ছাতার নিচে আসবে। এ ঐক্যই হবে বিএনপির কাঙ্খিত বিজয়ের মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্য বড় ভাই বিডিপি’র চেয়ারম্যান ও জামায়েত সমর্থিত প্রার্থী এড. আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বাধা হলেও এ বাধাকে তোয়াক্কা করছেন না বিগ্রেডিয়ার শামসের সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এ যেন দা-কুমড়ার সম্পর্ক। উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মী ও বিএনপি সমর্থিত লোকজনের বড় একটা অংশ বিগ্রে: শামসের পক্ষে কাজ করছে।
অন্যদিকে, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম আনোয়ার হোসেন খান চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম বীরমুক্তিযোদ্ধা খুররম খান চৌধুরী এ দুই পরিবারের দুই উত্তরাধিকারী ইয়াসের খান চৌধুরী ও নাসের খান চৌধুরীর মধ্যে রাজনৈতিক চরম দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁরা দুই চাচাতো ভাইয়ের মধ্যে একজনকেও ফ্যাসিবাদী শক্তির কর্তৃক রাজনৈতিক মামলা-হামলার শিকার হতে হয়নি কারন মানুষ মনে করে তারা ফ্যাসিবাদী শক্তির সাথে আঁতাত করে নিজেকে সব সময় নিরাপদে রেখেছেন। তবে তাঁদের সমর্থিত নেতাকর্মীরা দলের দুঃসময়ে মাঠে থাকায় অনেকেই মামলার শিকার হয়েছেন। এমডি মামুন বিন আব্দুল মান্নান বিএনপি’র দুঃসময়ে নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি’র অসহায় নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করলেও তাঁর নামেও কোন মামলা নেই।
এছাড়া ৫ আগস্টের পর নভেম্বর ২০২৪ থেকে বিএনপি’র মনোনয়নের জন্য মেজর জেনারেল অবঃ আনোয়ারুল মোমেন তিনিও মাঠে রয়েছেন।
তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মী ও বিএনপি সমর্থিত সাধারণ জনগণ দলীয় মনোনয়নের অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। তাদের অভিমত, দলের দূর্দিনে যারা হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সে সমস্ত ত্যাগী নেতাদের বিবেচনা করে ও মাঠ পর্যায়ের জনমত জরিপ করে বিএনপির মনোনয়ন দিবে দলের হাই কমান্ড।