কিশোরগঞ্জে বস্তায় আদা চাষে সফল মুস্তাফিজ

আমিনুল হক সাদী : সিমেন্ট বা আলুর বস্তায় ফলানো যায় আদা। বস্তায় আদা চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
কিশোরগঞ্জ সদরেও বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ফলন ভালো হচ্ছে বলে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

প্রতিবছর উপজেলার সব ইউনিয়নের ফসলি জমিতে আদা চাষ করা হতো। এতে অনেক কৃষক লাভের মুখ দেখতে পায়নি। ফলে তারা বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ইতিমধ্যে উপজেলাটির মহিনন্দ ইউনিয়নের কৃষক আদা চাষে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

মহিনন্দ ইউনিয়নের রঘুখালী গ্রামের কৃষক মুস্তাফিজ বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশের অল্প পতিত জমিতে ৩ শত বস্তা আদা চাষ করেছি। বস্তা, আদা, সার কেনা এবং পরিচর্যাসহ প্রতি বস্তায় খরচ হয়েছে অল্প টাকা।
বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আদার দাম কমপক্ষে ৬০ টাকা। ৩০০ বস্তায় ১ হাজার ২০০ কেজি উৎপাদন হলে বাজারে ৩৬ হাজার টাকা দাম পাওয়া যাবে।
মহিনন্দ ইউপির উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম জেবুন্নেসা বলেন, আমার ইউনিয়নের রঘুখালীর মুস্তাফিজের জমিটি বাচাই করি আদা চাষের জন্য। কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তিনি বস্তায় আদা চাষ করেছেন।

সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এমাজ উদ্দিন বলেন, সিমেন্ট বা আলুর বস্তায় ফলানো যায় আদা। এই পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠান, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। এর জন্যে আলাদা জমি ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
চাষাপদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে একটি বস্তায় ৩ ঝুড়ি মাটি, ১ ঝুড়ি বালি, ১ ঝুড়ি গোবর সার ও দানাদার কীটনাশক ফুরাডান ৫জি ২৫ গ্রাম নিতে হবে। মাটির সঙ্গে এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

এবার একটি বালিভর্তি টবে তিন টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিতে হবে। আদার কন্দ লাগানোর আগে ছত্রাকনাশক অটোস্টিন ২ গ্রাম এক লিটার পানিতে দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। অন্য ছত্রাকনাশকও ব্যবহার করা যাবে।

শোধনের পর কন্দগুলো আধাঘণ্টা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। ২০ থেকে ২৫ দিন পর গাছ বের হবে। তখন আদার চারা সাবধানে তুলে বস্তার মুখে ৩ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদা গাছ বড় হয়ে যাবে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা আক্তার ফাহিম বলেন, এ উপজেলায় মহিনন্দ ইউনিয়নের রঘুখালীর মুস্তাফিজের জমিনে ৩ শত বস্তায় ও লতিবাবাদ ইউনিয়নের সাদুল্লারচরের লুতফর রহমানের ৩৩ শতক জমিতে আদা চাষ হয়েছে। এ বছর প্রথম মুস্তাফিজের জমিত বস্তায় আদা চাষ করেছেন।কৃষকদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুস সাত্তার বলেন, বস্তায় চাষ করলে অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। একবার ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যায়। ফলে খরচ একেবারেই কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *