৪৭ লক্ষ টাকার সুপারিসহ ট্রাক ডাকাতি; ডাকাতির মাস্টার মাইন্ড গ্রেফতার

গত ২২/০৯/২০২২ খ্রিঃ দিবাগত রাত অনুমান ০১.০০ ঘটিকায় ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন হারুয়া বাজার এলাকা হতে ১৫ টন টাঁটি সুপারি ভর্তি ট্রাক ডাকাতি হয়। ইতোমধ্যে ডাকাত দলের ৫ জন সদস্যকে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ও লুন্ঠিত মোবাইল। এবার গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের স্বীকারোক্তিতে উঠে আসা উক্ত ডাকাতির ঘটনার মাস্টার মাইন্ড মোঃ হেলাল (২৮) কে গ্রেফতার করল পিবিআই, ময়মনসিংহ।

নেত্রকোণা জেলার দূর্গাপুর থানা এলাকার ব্যবসায়ী অনুকূল পাল ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ মনির এর নিকট হতে ৪৭,১০,০০০/- (সাতচল্লিশ লক্ষ দশ হাজার) টাকায় ৩০০ বস্তা (১৫ টন) টাটী সুপারি ক্রয় করেন। ব্যবসায়ী মনির গত ২১/০৯/২২ তারিখ রাত ৮ টায় তার বিক্রিত সুপারিগুলো কামালের “মেসার্স জুলেখা ট্রান্সপোর্ট” এর মাধ্যমে খুলনা মেট্রো ট-১১-০৮১০ অশোক লিল্যান্ড ট্রাকে করে দূর্গাপুরের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেন। ট্রাকটির চালক ছিলেন বাবুল। গত ২২/০৯/২২ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৩/০৯/২২ তারিখ ভোর ৪ টায় ট্রাক চালক বাবুল ট্রান্সপোর্ট মালিক কামালকে অপরিচিত একটি নম্বর দিয়ে ফোন দিয়ে জানায় যে, রাত অনমুান ০১.০০ ঘটিকার সময় সে সুপারি ভর্তি ট্রাকটি নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন হারুয়া বাজার এলাকায় পৌঁছামাত্র একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার পিছন থেকে এসে ট্রাকটিকে ব্যারিকেড দেয়। ট্রাকটি থামানোর সাথে সাথে প্রাইভেটকার থেকে ৪ জন ডাকাত ট্রাকে উঠে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রশি দিয়ে ট্রাক চালকের হাত-পা বাধে এবং গামছা দিয়ে মুখ চোখ বেঁধে ফেলে। ডাকাতরা সম্পূর্ণ ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ট্রাক ঘুরিয়ে পুনরায় কিশোরগঞ্জের দিকে রওনা করে। অন্য ডাকাতরা প্রাইভেটকার নিয়ে ট্রাকের পিছনে আসতে থাকে। রাত অনুমান সাড়ে তিনটায় ডাকাত দল ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজের কাছে রাস্তায় ড্রাইভার বাবুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে ট্রাক নিয়ে চলে যায়।

উক্ত ঘটনায় “মেসার্স জুলেখা ট্রান্সপোর্ট” এর মালিক কামাল হোসেন বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাতদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে ঈশ্বরগঞ্জ থানার মামলা নং-২৫ তাং-২৪/০৯/২০২২ খ্রিঃ ধারা-৩৯৫/৩৯৭ দঃ বিঃ রুজু হয়। মামলা রুজুর গত ২৪/০৯/২২ খ্রিঃ হতে ২৬/১০/০৩/২২ খ্রিঃ এবং ডিবি ২৮/১০/২২ হতে ০৫/০৩/২৩ খ্রিঃ পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে গত ০৫/০৩/২৩ খ্রিঃ পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে।

অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর দিক নির্দেশনা ও তদারকিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোহাম্মদ বিল্লাল মিয়া তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির সময় নিয়ে যাওয়া ট্রাক চালকের ফোনের সূত্র ধরে ইতোমধ্যে ডাকাত দলের ০৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ও লুন্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছেন।বিজ্ঞ আদালতে গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারামতে স্বেচ্ছায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিতে উঠে আসা উক্ত ডাকাতির মাস্টার মাইন্ড মোঃ হেলাল (২৮), পিতা-মোঃ আব্দুল কাশেম, সাং-কোনাপাড়া, পোঃ কুমুদগঞ্জ, থানা-দূর্গাপুর, জেলা-নেত্রকোণাকে ২৬/০৫/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৭.০০ ঘটিকার সময় নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

এ বিষয়ে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার বলেন, এটি বেশ চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা। অজ্ঞাতনামা ডাকাত দল ঈশ্বরগঞ্জ হতে সাতচল্লিশ লক্ষ টাকার সুপারি ভর্তি ট্রাক ডাকাতি করে নিয়ে যায়। যা প্রিন্ট মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হতে থাকে। ইতোমধ্যে আমরা ডাকাত দলের পাঁচজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়। পাশাপাশি ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ও লুন্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে। উক্ত বিষয় সম্পর্কে গত ০৯/০৪/২৩ তারিখে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছিল। পূর্বে গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের সদস্যদের স্বেচ্ছায় প্রদানকৃত স্বীকারোক্তিতে উঠে আসা উক্ত ডাকাতির মাস্টার মাইন্ড মোঃ হেলালকে গতকাল নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করেছে।

২৭/০৫/২০২৩ তারিখে ডাকাতির মাস্টার মাইন্ড মোঃ হেলালকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে সে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক নিজেকে জড়িয়ে সহযোগী আসামীদের নাম উল্লেখপূর্বক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার জানান, সকল অফিসার ও ফোর্সের অক্লান্ত প্রচেষ্টায়, পিবিআই নারায়নগঞ্জ জেলা ও পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের সহযোগিতায় স্বল্প সময়ের মধ্যে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস এই ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটন ও ডাকাত দলের সক্রিয় ০৬ জন সদস্যকে গ্রেফতার, ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার জব্দ এবং লুন্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *