কমছে কীটনাশক প্রয়োগ;ধানের জমিতে পোকাদমনে জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং
উজ্জ্বল সরকার , হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে রোপা আমন মৌসুমে মাঠে মাঠে পার্চিং দিয়ে ধান ক্ষেতের পোকা দমন জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ধান খেতে পার্চিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে ক্ষতিকারক পোকা দমন করতে পারছেন স্থানীয় কৃষকরা। এতে পোকা দমনে কীটনাশকের ব্যবহার বহুলাংশে কমে যাচ্ছে। ফলে ধান উৎপাদন খরচ অনেকাংশেই কমে যাবে বলে জানান স্থানীয় চাষীরা।
জানা যায়,এ উপজেলার কৃষকরা তাদের বোরো ফসলের ক্ষেতে বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে এবং ধইঞ্চা রোপণ করে দিচ্ছেন। এসব বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের মাচান বা আড় এবং ধইঞ্চার ডালে বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি বসে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলছে এবং ওইসব পাখি পার্চিংয়ে বসে ক্ষণিক সময়ের বিশ্রামও নিচ্ছে। এভাবে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছ রক্ষা পাচ্ছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস। মাটি, ফসল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারে কৃষকরা বেশি সচেতন এখন।
পার্চিং পদ্ধতি হচ্ছে পাখির মাধ্যমে ফসলের পোকা দমনে উত্তম ব্যবস্থা। এর ফলে কৃষকরা একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে পরিশ্রমও কম হচ্ছে।পাখি পার্চিং এ বসে একটি ক্ষতিকারক পোকা খেলে ২৫০ থেকে ১৫০টি পোকা দমন হয়। কারণ একটি ক্ষতিকারক পোকা ২৫০ থেকে ১৫০টি ডিম পাড়ে। তবে পার্চিং জমির আইল থেকে ধান ক্ষেতের মাঝামাঝি অবস্থায় দেয়াই ভালো ।
কৃষি অফিস জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে হোসেনপুরে ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। সাধারণত ধানগাছে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর, ঘাসফড়িং ও পাতাফড়িং আক্রমণ করে। পোকাখাদক পাখি জমিতে পুঁতে রাখা পার্চিংয়ে বসে এসব ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে এর মাধ্যমে অতি সহজেই ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব হয় এবং নিরাপদ হয় ফসল।
পার্চিং সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, ডেড পার্চিং ও লাইফ পার্চিং পদ্ধতি। ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, বাঁশের মাচান বা আড় এবং গাছের ডাল পুঁতে যে পার্চিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় তাকে ডেড বা মৃত পার্চিং বলে এবং ধইঞ্চা রোপণ করে ফসলের জমিতে পাখি বসার উপযোগী করাকে লাইফ পার্চিং বলে। লাইফ পার্চিং ফসলের ক্ষেতে দুই ধরনের উপকারে আসে। যেমন- পোকাখাদক পাখি বসে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খায় এবং ধইঞ্চার শিকড়ে এক ধরনের গুটির জন্ম হয়। এই গুটি থেকে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয়। যা ইউরিয়া সারের কাজ করে।
উপজেলার জিনারী গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক ও মো. রতন মিয়া জানান, কয়েক বছর আগেও আমাদের মাঠের সব জমির ধানেই পোকায় আক্রমণ করত। অনেক সময় টাকার অভাবে বিষ দিতে পারিনা বা দিলেও কাজ হয় না। অফিসারদের পরামর্শে এ পদ্মতি ব্যবহার করছি।
উপজেলার ধুলজুরী গ্রামের চাষি মো. বোরহান উদ্দিন,পুমদি গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ধানক্ষেতে বাঁশের কঞ্চিতে পাখি বসে পোকামাকড় ধরে খায়। এতে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমে গেছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলিমুল শাহান বলেন,পার্চিং একটি কার্যকর পোকা দমন ব্যবস্থা। এতে কৃষক যেমন স্বল্প পরিশ্রমে লাভবান হয়। এই পদ্ধতিটি এলাকার সকল কৃষক ব্যাপকভাবে গ্রহণ করছে এবং ভালো উপকার পাচ্ছেন। এতে করে এলাকার কৃষকগণ উপকারী ও অপকারী পোকা সহজে চিনতে পারছেন। এলাকার কৃষকেরা যে কোন পোকা দেখলেই কীটনাশক দিতে হবে এই ধারণা যে ভুল তা সহজেই বুঝতে পারছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির জানান, জমিতে পার্চিং করলে পাখি সহজেই ফসলের ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ধ্বংস করে। পোকা বংশ বিস্তার করতে পারে না। এতে কৃষক অনেক উপকৃত হয়। এতে বহুলাংশে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাবে বলে জানান তিনি।