স্বাধীন ভূখন্ডে জন্ম ও বসবাসকারী সকলে আমরা বাংলাদেশী–প্রিন্স
মোঃ বাবুল হোসেন: স্বাধীন ভূখণ্ডে জন্ম ও বসবাসকারী সকলে আমরা বাংলাদেশী প্রেম এবং জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করে ধর্ম , বর্ণ , দল , মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে “রেইনবো নেশন” এবং “ইনক্লুসিভ সোসাইটি “ ও “পজিটিভ বাংলাদেশ” গড়ে তুলতে হবে ।” রাজনীতি , ধর্ম , ভাষা, সংস্কৃতি যার যার , রাস্ট্র সবার ,সবার উপরে বাংলাদেশ“ – এই চিন্তা চেতনা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে । তিনি শনিবার সকালে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গারো সম্প্রদায়ের নবান্ন উৎসব উপলক্ষে “ হালুয়াঘাট ওয়ানগালা -২০২৫ “ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমরান সালেহ প্রিন্স এসব কথা বলেন ।
হালুয়াঘাটের রাংরাপাড়ায় ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমীর মুক্ত মঞ্চে আলোকিত হালুয়াঘাট ও ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমীর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত গারোদের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসবে গারো সম্প্রদায়ের রীতি ও প্রথা এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী ফসল উৎপাদন ও উর্বরতার জন্য ধানসহ বিভিন্ন কৃষিপন্য সামনে রেখে কামার (পুরোহিত ) তাদের সূর্যদেবতা ও দেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান । বিভিন্ন আয়োজনের পাশাপাশি জুম নৃত্যসহ তাদের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পরিবেশিত হয় । বিভিন্ন গির্জা এবং গোত্র প্রধানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিপুল সংখ্যক গারো,বাঙালী উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন । অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এমরান সালেহ প্রিন্স স্বস্ত্রীক অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌছালে তাঁদেরকে গারোদের ঐতিহ্যবাহী স্বাগত নৃত্যের মাধ্যমে মূল ফটক থেকে মুক্ত মঞ্চে নিয়ে আসা হয় এবং তাদেরকে গারোদের বোনা তাঁতের কাপড় দিয়ে বানানো খুতুব ( বিশেষ ধরণের পাগড়ি) ও উত্তরীয় পড়িয়ে সম্মান জানানো হয় । অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত গারো নারীরা ঐতিহ্যবাহী রঙ বেরঙের পোষাক পরে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন ।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন , নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অপরাপর জাতি-গোষ্ঠীর থেকে গারোদের পৃথক জাতিসত্তা হিসেবে পরিচিত ও মর্যাদা দিয়েছে । সমাজের অভ্যন্তরে মূল্যবোধ তৈরি ও গতি ,সমাজ ও সমাজের মানুষকে আলোকিত ও বিকশিত করেছে । বাংলাদেশকে করেছে বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ । ওয়ানগালা গারো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক ফসল উৎসব । উৎসবে ফসল উৎপাদন ও উর্বরতার জন্য গারো নাগরিকরা তাদের ধর্ম ও বিশ্বাস মতে তাদের সূর্যদেবতা ও দেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান । গারো ও বাঙালির চমৎকার এক মেলবন্ধন সূচিত হয় এই ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসবের মধ্য দিয়ে। আর এ কারণেই ওয়ানগালা হারিয়ে যাবে না। বরং এটি একদিন সর্বজনীন উৎসব হয়ে টিকে থাকবে যুগ-যুগান্তর।
তিনি বলেন , গারো সম্প্রদায়ের অধিকার ,ভাষা , সাংস্কৃতিক স্বতন্ত্র্য , ঐতিহ্য ও রীতি নীতি রক্ষা ও বিকাশে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে । তাদের এলাকার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে । তিনি বলেন , গারোদের সহযোগিতা ও সমর্থনে সংসদে যাওয়ার সুযোগ হলে তিনি এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেবেন বলে উল্লেখ করেন । আগামী বছর থেকে হালুয়াঘাটে সরকারী ভাবে গারো সম্প্রদায়ের ওয়ানগালা, বড়দিনের সংবর্ধনা , ইসটার সানডে ,ক্রীড়া ,ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ,সামাজিক ও অন্যান্য আয়োজনের উদ্যোগ ও সহযোগীতা করা হবে । গারো সম্প্রদায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতিগোষ্ঠী । তাদের নিজস্ব ভাষা, রীতি নীতি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে । এসব হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না । তিনি ২০১৭ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উত্থাপিত “ভিশন -২০৩০”র কথা উল্লেখ করে বলেন , বিএনপি জনগণের রয়ে সরকার পরিচালনার দায়ীত্ব পেলে ভিশন-২০৩০ অনুযায়ী সমতলের নৃ গোষ্ঠীর ইতিহাস , ঐতিহ্য , সংস্কৃতি রক্ষা , লালন ও বিকাশে, তাদের অধিকার রক্ষা ও সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়ন ও কল্যাণে পৃথক “সরকারী অধিদফতর “ প্রতিষ্ঠা করা হবে । হালুয়াঘাটে পর্যটকদের আকর্ষণ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পরিচিত করতে গারোদের ইতিহাস , ঐতিহ্য , সংস্কৃতি ও জীবনধারা উপস্থানের মাধ্যমে প্রদর্শনী কেন্দ্র বা মিউজিয়ামসহ জাতিগত পর্যটন কেন্দ্র , গড়ে তোলা হবে । একই সাথে গারো জাতিগোষ্ঠীর নাগরিকদের স্বাস্থ্য , চিকিৎসা , শিক্ষা , কর্ম সংস্থান ,ক্রীড়া , আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ নিবেন । ধর্ম,বর্ণ , দল, মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে চির অবহেলিত হালুয়াঘাটকে আলোকিত ও সম্প্রীতির জনপদে পরিনত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
হালুয়াঘাট ওয়ানগালা এর নকমা ইঞ্জিনিয়ার প্রলয় স্নাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ওয়ানগালা উৎসবে বক্তব্য রাখেন
হালুয়াঘাটের এসি ল্যান্ড জান্নাত, বিড়ইডাকুনী ধর্ম পল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার মনিন্দ্র চিরান , রাশিমনি ট্রাস্টের সাবেক সভাপতি গবেষকও বিশিস্ট লেখক মতিলাল হাজং , বিশিস্ট লেখক তপন ঘাগড়া , হালুয়াঘাট ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুভ্রত রেমা ।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে সেন্ট এন্ড্রুজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ললিত কুমার দ্রং , কেন্দ্রীয় ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিপুল হাজং ,উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আসলাম মিয়া বাবুল , যুগ্ম আহবায়ক আলী আশরাফ , কাজী ফরিদ আহমেদ পলাশ , চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান , আলোকিত হালুয়াঘাট এর চেয়ারম্যান রাব্বি কায়সার আরাফাত , হালুয়াঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি হাতেম আলীসহ সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন ।

