হোসেনপুরে চাহিদা ও দামে জমজমাট পাটকাঠির বাজার
উজ্জ্বল সরকার ,হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ): কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে সোনালী আঁশের বাজার জমে না উঠলেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পাটকাঠির বাজার। পাটকাঠির বাজারে ক্রেতা বিক্রেতা সমাগম বাড়ছে।প্রতি হাটেই শত মণ পাটকাঠি ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।
পাটকাঠি দিয়ে এক সময় প্রধানত গ্রামের অসচ্ছল পরিবারের ঘরের বেড়া তৈরি করা হতো। জ্বালানি হিসেবেও এর যথেষ্ট ব্যবহার ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির কল্যাণে পাটকাঠি এখন ক্রমশ অর্থকারী পণ্য হয়ে উঠেছে। পানের বরজ, পার্টিকেল বোর্ড ও চারকোল কারখানায় পাটখড়ির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
পাটের উপজাত এই পাঠখড়ি বা পাটকাঠি এখন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। একটি বিশেষ চুল্লিতে পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কার্বন বা চারকোল, যা চীনসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কার্বন পেপার, কম্পিউটার, ফটোকপির কালি, আতশবাজি, ফেসওয়াশের উপকরণ, প্রসাধনী পণ্য, মোবাইলের ব্যাটারি, দাঁত মাজার ওষুধ, খেতের সারসহ নানা কাজে এই কার্বন ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জে হোসেনপুরে কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা পাট ও পাটকাঠি শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত। তারা এখন পাটকাঠি দেশ যত্নের সঙ্গে মজুত করে রেখেছেন উপজেলার হোসেনপুরের হাটে প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর পাট কাঠি নিয়ে আসে বিক্রেতারা। ক্রেতার সমাগম ঘটে প্রচুর।
এ সময় পাটকাঠি বিক্রি করতে আসা বিক্রেতা মো. শহিদ মিয়া বলেন ,পাটকাঠির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভালো দামে বিক্রি করে বাজার সদাই করে নিয়ে যাব।
পাটকাঠি কিনতে আসা ক্রেতা আছিয়া খাতুন বলেন, রান্নাবান্না করার জ্বালানি লাকড়ি অভাব। তাই জ্বালানির জন্য পাটকাঠি কিনতে আসছি।
উপজেলার পাট চাষিরা জানান, দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভালো দাম দিচ্ছেন। আকার ভেদে এক আঁটি পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায়। এটি এক সময় ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতো।তারা আরও জানান, পাট আবাদের খরচ পাট বিক্রি করে উঠে আসে। আর, পাটকাঠি তাদের লাভের মুখ দেখিয়েছে।
উপজেলার চরকাটি হারী এলাকার কৃষক নজরুল বলেন,রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনি ছাড়া পাটকাঠি আর কোনো কাজে লাগত না। কিন্তু, এখন পাটকাঠি বিক্রি করতে পারছি। শুনেছি এটি ছাই করে বিদেশে পাঠায়।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন বর্ষার পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে ওঠে সোনালী স্বপ্ন নিয়ে সোনালী আঁশ ঘরে তুলতে বেড়ে যায় কৃষক-কৃষাণীর ব্যস্ততা।
অপর দিকে, বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। দামও ভাল। উপজেলার পৌরসভা হাট ও অন্য হাটগুলোতে বিভিন্ন জাতের পাট বেচা-কেনা হচ্ছে। তোষা জাতের পাট ২ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা আর মেচতা জাতের পাট ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ন্যায্য মূল্য পেয়ে পাট চাষিদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৩৯৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলিমুল শাহান বলেন, মূলত গত এক দশক ধরেই এই জ্বালানির বাজার বাড়ছে। শুধু তাই নয়, দেশে উদীয়মান রপ্তানি পণ্য হিসেবে শিল্পের মর্যাদাও পাচ্ছে পাটকাঠির ছাই। কৃষকরা বলছেন, বাজারে পাট বিক্রি করে কোনরকম উৎপাদন খরচ ওঠে। কিন্তু, পাটকাঠি বিক্রির পুরো টাকা তাদের লাভ। অনেকেই পাটকাঠি কেনাবেচাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা ও কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাটকাঠি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রপ্তানির নতুন বাজার তৈরি করতে পারে। পাঠকাঠির ব্যবহারে ঘুরে দাঁড়াতে পারে দেশের পাটশিল্প।