আন্তর্জাতিকরাজনীতি

আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে বিক্ষোভে উত্তাল দক্ষিণ আফ্রিকা ও কিউবা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থায় আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বসহ শ্রম-পুঁজি এবং সাম্রাজ্যবাদের সাথে নিপীড়িত জাতি-জনগণের দ্বন্দ্ব প্রকটতর হচ্ছে। তার প্রভাব পড়ছে বিশ্বের দেশে দেশে। সেই প্রভাবে এবার উত্তাল হয়ে উঠছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও কিউবা।

দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার বিক্ষোভ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। সেনা রাস্তায় নামলেও বিক্ষোভ বন্ধ হচ্ছে না। জায়গায় জায়গায় লুঠ হচ্ছে দোকান, শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এমনকী, ওয়্যারহাউস। এখনো পর্যন্ত ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি।

দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেকব জুমাকে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রশাসন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। আদালত জুমাকে একটি দুর্নীতি-বিরোধী কমিটির সামনে বসতে বলেছিল। কিন্তু জুমা সেখানে যাননি। এরপরেই আদালত অবমাননার দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিম্ন আদালত তাকে ১৫ মাস জেলে থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

 

জুমার গ্রেপ্তারের পরেই বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। বহু মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। কিন্তু অচিরেই বিক্ষোভ অন্য দিকে মোড় নেয়। একদল লোক বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে দোকানপাট লুট করতে শুরু করে। জায়গায় জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দীর্ঘ লকডাউনে হতাশ দেশের একটি অংশের মানুষ। তারা কাজ হারিয়েছেন। অন্যদিকে মূলব্যবৃদ্ধি অব্যাহত। সব মিলিয়ে মানুষের ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বাড়ছিল। বিক্ষোভে সেই বিষয়টিই সামনে চলে এসেছে।

 

সবচেয়ে বিপর্যস্ত গওতেং এবং কোয়াজুলু-নাটাল। দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে এই দুই শহরে। ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এখানে। অন্যদিকে কোয়াজুলু-নাটালে জুমার বাসস্থান। সেখানেও বিক্ষোভ থামানো যাচ্ছে না। সরকারি হিসেবে সেখানে ২৬জনের মৃত্যু হয়েছে। গওতেংয়ের একটি শপিং মলে মঙ্গলবার লুঠ করার সময় পদপিষ্ঠ হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

সোমবারই প্রশাসন জানিয়েছিল, সেনা নামানো হবে রাস্তায়। মঙ্গলবার বিভিন্ন শহরে সেনা পেট্রোলিং শুরু করেছে। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ থামেনি। পুলিশ জানিয়েছে এখনো পর্যন্ত সাতশরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের সংঘর্ষে বহু মানুষ আহত।

 

এদিকে দোকানপাটের পাশাপাশি ডারবানে ওয়্যারহাউসেও লুটতরাজ চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ডারবান দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় আমদানি-রপ্তানি কেন্দ্র। একাধিক ওয়্যারহাউস আছে সেখানে। স্থানীয় মিডিয়ার ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ধোঁয়া বেরচ্ছে একাধিক ওয়্যারহাউস থেকে। তবে সরকার জানিয়েছে কড়া হাতে বিক্ষোভের মোকাবিলা করা হচ্ছে।

 

অন্যদিকে কথিত কমিউনিস্ট দেশ কিউবাতে করোনাকালে খাবার মিলছে না। কাজ নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না– এই অভিযোগে কিউবার একাধিক শহরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। হাতে পোস্টার নিয়ে নেমে পড়েছেন তারা। পোস্টারে লেখা, ‘একনায়ক সরকার আর চাই না’। গণতন্ত্র এবং অধিকারের স্লোগান উঠছে মিছিল থেকে। কিউবার সরকার অবশ্য এই বিক্ষোভ মার্কিন ষড়যন্ত্র বলেই ব্যাখ্যা করেছে। রাস্তায় সেনা নামানো হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে মেশিনগান। দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এবং বর্তমানে দেশের প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানাল জানিয়েছেন, যেখানেই বিক্ষোভ হবে সেখানেই যেন  পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে তার দলের লোকজন।

অবশ্য করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় কিউবার চিকিৎসকরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করতে। এমনকী, অ্যামেরিকাতেও তারা চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর্যুদস্ত কিউবা। সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে, মৃত্যুর হারও বেশি। দেশ জুড়ে কার্যত লকডাউন চলছে। তারই মধ্যে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ।

হাভানা, সান্তিয়াগোর মতো জায়গায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। তাদের বক্তব্য, সামান্য খাবারের জন্য বিশাল লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। এই পরিস্থিতিতে তারা আর বাঁচতে পারছেন না। ক্ষমতাাসীন সরকারের অবসান চান তারা। কাস্ত্রো রেজিমের হাত থেকে মুক্তি চান। তাদের দাবি, কিউবার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে গেছে।

স্বাভাবিক ভাবেই শাসকদল এসব অভিযোগ মানতে নারাজ।

স্বয়ং প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল একটি বিক্ষোভে আটকে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে লক্ষ্য করে গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। বহু অভিযোগও জানানো হয়। মিগুয়েল অবশ্য জানিয়েছেন, মার্কিন মদতপুষ্ট কিছু মানুষ এ কাজ করছে। কড়া ভাবে বিক্ষোভ দমন করা হবে। তার সমস্ত লোকদের রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এ কথা বলে সংঘাতের সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন মিগুয়েল। রাস্তায় রাস্তায় সেনাও নামানো হয়েছে। মেশিনগান নিয়ে সেনার গাড়ি রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে।

অ্যামেরিকার বেশ কিছু রাজনীতিবিদ এবং অ্যামেরিকায় বসবাসকারী কিউবার নাগরিকদের একটি বড় অংশ কিউবা সরকারের বিরোধিতা করেছে। কারণ আন্ত:সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে কিউবা মার্কিন বিরোধী জোটের সাথে সম্পর্কিত। জো বাইডেনকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়ে এসব নাগরিকরা জানিয়েছে , কিউবার সেনা যাতে নিজের দেশের নাগরিকদের উপর গুলি না চালায়, তার জন্য চাপ তৈরি করুক অ্যামেরিকা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *