জাতীয়রাজনীতি

ডা. এম এ করিমের স্মরণসভায় বন্দর-করিডর প্রদানের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান

  • জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট- এনডিএফ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাপ্তাহিক সেবা’র সম্পাদক ডা. এম এ করিমের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (৪ নভেম্বর) বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এনডিএফ’র সভাপতি ডা. এম এ জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সহ-সম্পাদক প্রকাশ দত্তের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি শ্যামল ভৌমিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহসভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জিন্নাত রেহেনা এবং বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি আক্তারুজ্জামান খানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

স্মরণ সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ডা. এম এ করিম ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদবিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোসহীন নেতা। ব্রিটিশ থেকে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। এসব আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, ৭৫ এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, ৯০’র এরশাদ বিরোধী আন্দোলন বা ২০০৭ সালে দেশে কারফিউ জারিসহ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের তৎপরতার স্বরুপ তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান। তাঁর সহযোদ্ধা প্রথিতযশা অনেক রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদারে পরিণত হলেও তিনি তাঁর নীতিতে অটল থাকেন। আর্থসামাজিক ব্যবস্থার বিকাশের প্রতিবন্ধক সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দালাল শক্তির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য তিনি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যান। প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতার স্বরুপ উন্মোচন করে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। দেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের চেতনার মান উন্নত করা এবং তাদের সংকট সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষন তুলে ধরার জন্য তিনি গণতন্ত্রের মুখপত্র হিসেবে সাপ্তাহিক সেবা প্রতিষ্ঠা করেন।

স্মরণ সভায় নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিশ্বের ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব-বলয়-আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে ‘আমেরিকাকে আবার প্রথম করে তোলো’ স্লোগানে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, আগ্রাসন ও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চীন-রাশিয়া পুঁজি ও শক্তির অনুপাতে তার কৌশলগত তৎপরতার মাধ্যমে আন্ত: সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববাজার দখল ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চীন মধ্য এশিয়া থেকে ইউরোপ-আফ্রিকার দেশগুলোতে বাণিজ্য বিস্তৃতির লক্ষ্যে বেল্ট এন্ড রোড (বিআরআই) ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচি এবং মুক্তার মালা (স্ট্রিং অব পার্ল) নামে অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। চীনের এ পরিকল্পনা ঠেকাতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তার নৌশক্তির বৃহৎ অংশ দক্ষিণ চীন সাগরে মোতায়েনের লক্ষ্যে ‘পিভট টু এশিয়া’ কৌশল গ্রহণ করে। এ প্রেক্ষিতে ‘চীন ঘেরাও’ কৌশল বাস্তবায়নে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অগ্রসর করছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনীতি-রণনীতি তথা সামগ্রিক লক্ষ্যের প্রেক্ষিতে বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অতি বিশ্বস্ত দালাল ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীণ অন্তবর্তীকালীন সরকার মার্কিন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম বন্দর ও করিডর প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করা করছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং আন্ত: সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।