মচিমহার সুচিকিৎসা পেতে সমস্যা তৈরি করে নিচু শ্রেণী; মচিমহা কর্মকর্তা
স্টাফ রিপোর্টার ঃ মচিমহা’র সুচিকিৎসা পেতে সমস্যা তৈরি করছে নিচু শ্রেণী অর্থাৎ ৩য় ও ৪ র্থ শ্রেণির কর্মচারী,ওয়ার্ড বয়, আয়া, ট্রলি বয়সহ অন্যান্য কর্মচারীরা৷ ঠিক এমনটাই দাবি করে ১৪ অক্টোবর নাগরিক আন্দোলনের নেতাদের সাথে এক বৈঠকে তা তুলে ধরেন মচিমহার প্রথম সারির এক কর্মকর্তা । এ কথার কোন প্রতিবাদ না জানিয়ে তা মেনে নিয়েই নাগরিক নেতৃবৃন্দ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ গোলাম ফেরদৌস এর সাথে মেডিকেলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আলোচনা চালিয়ে যান। সেখানে সমস্যার মূল আলোচনায় না গিয়ে ট্রলিম্যানের বকশিশ নেয়া,ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুকরণ, রোগিদের সাথে কর্মচারীদের সহনশীল এবং শোভন আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। ইমারজেন্সিতে সব সময় শিশু,মেডিসিন, গাইনি, সার্জারী ও অর্থপেডিকস বিষয়ে আলাদা আলাদা চিকিৎসক থাকবেন। ওয়ার্ডে ভর্তির পর ওয়ার্ডবয়, আয়া এবং সিকিউরিটি গার্ডদের সিন্ডিকেট থেকে রোগী এবং স্বজনদের হয়রানি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়। সাজাপ্রাপ্ত চিহ্নিত দালালদের ছবি হাসপাতাল ক্যাম্পাসে টানানোর দাবী জানানো হয়। বৈঠকে আলোচনা করেন উপ-পরিচালক ডা: মো জাকিউল ইসলাম, নাগরিক নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী নূরুল আমিন কালাম, আ্যড. এমদাদুল হক মিল্লাত, আ্যড শিব্বির আহমেদ লিটন, ইয়াজদানী কোরায়শী, কাজী আজাদ জাহান আজাদ, নিয়ামুল কবির সজল, আব্দুল কাদের চৌধুরী মুন্না, মো: নজরুল ইসলাম, শহিদুর রহমান শহিদ,মোস্তফা মো: খাইরুল আলম (তুহিন), ডা. শেখ আলী রেজা সিদ্দিকী(সহকারী পরিচালক), ডা. মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন খান (সহকারী পরিচালক) প্রশাসন, ডা: খালেদ মোশারফ হোসেন, ডা: তারিকুল ইসলাম খান,ডা: খন্দকার আনোয়ার হোসেন, মো আব্দুছ সামাদ,মুহাম্মদ রবিদুল হাসান, মো: আবুল মনসুর আলী ইউসুফ। উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক বাবলী আকন্দ।
যে ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে নাগরিক নেতৃবৃন্দের বৈঠক ছিল শুধুমাত্র সে ঘটনাটির সমস্যা ও সমস্যার উপরিভাগেই আলোচনা হয়। টলিম্যান নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা হচ্ছে ট্রলিম্যান টাকা ছাড়া ট্রলি বহন করে না এবং টাকা ছাড়া হলে তারা অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের স্বজনদের ট্রলি দিয়ে দেয়, রোগীর স্বজনরা ট্রলি বহন করে নিজ নিজ দায়িত্বে রোগী নিয়ে যান। ট্রলিম্যান কেন এমন করে তা অনুসন্ধানে করে দেখেন নি জেলার নাগরিক নেতৃবৃন্দ।
একজন ট্রলি ম্যান এর বেতন ১৬২২০/-(ষোল হাজার দুইশত বিশ টাকা) হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা পায় ৭০০০/–৮০০০/-( সাত হাজার থেকে আট হাজার) টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ৬ জনের একটি পরিবারের মাসিক খরচ ৩০০০০/–৩৫০০০/-(ত্রিশ হাজার থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার) টাকা। সেখানে একজন ট্রলিম্যান এই অল্প টাকায় কিভাবে তার পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করে। শুধু ট্রলিম্যানই নয় সেখানে থাকা আয়া,ওয়ার্ড বয়,সিকিউরিটি তারাও তাদের বেতনের ৫০% এর কম বেতন পায়। এর কারণ কি, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। যেখানে সরকার ৪০০ জন লোকবল দিয়ে কাজ করার কথা বলছে সেখানে মেডিকেল প্রশাসন ৭০০ এর অধিক লোককে সেই বেতনের অর্ধেক দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। অথচ জনবল বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে কিন্তু টাকা / বেতন বাড়ানো হচ্ছে না। বরং একজনের বেতন কর্তন করে ২ জনের বেতন দেয়া হচ্ছে। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আনা অতীব জরুরী। তা না করে শৃঙ্খলার নামে তাদের উপর দায় চাপিয়ে দেয়ার মতো ঘটনার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে শৃঙ্খলা যতই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হোক না কেন মূল সমস্যা সমাধান না হলে তা অনেক কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে জেলার নাগরিক নেতৃবৃন্দের এবং মচিমহার কর্তৃপক্ষের।
গতকাল বৈঠকে পরিচালক জেলার নাগরিক নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে ১৫ দিনের সময় নিয়ে সিষ্টেম পরিবর্তনে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও জানান। তবে সব ক্ষেত্রে আচরণগত সমস্যা বেতন কাঠামোর জন্য দায়ী নয়। যেমন কতিপয় ডাক্তার- নার্সদের খারাপ আচরণ, সেবা না দেয়ার মানসিকতা, দায়িত্বে অবহেলা, রোগীর ক্ষেত্রে অনেক সময় ডাক্তার, নার্স ও ইন্টার্নদের হুমকি, দৃষ্টিভঙ্গীগত আচরণ ইত্যাদি । এদিকে জেলার নাগরিক নেতৃবৃন্দ মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমাতে কিছু ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন, তন্মধ্যে অন্যান্য জেলা,উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষকে যার যার অঞ্চলে চিকিৎসা নেয়ার কথা বলা হয়, যেখানে শুধুমাত্র রেফার্ড হলেই ভর্তি নেয়া হবে এমন ব্যবস্থার কথা বলা হয়। যদিও জেলার নাগরিক নেতৃবৃন্দের দুজন এর প্রতিবাদ জানান কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা চাইলে তারা সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
এছাড়া টোকেন সিষ্টেম চালু করা, সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা,তথ্য অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে ভলান্টিয়ার দিয়ে মনিটরিং করার প্রস্তাব রাখা হয়। হাসপাতাল পরিচালক জানান, ৪ তলা ভবনগুলো ১০ তলা ভবন করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া দীঘারকান্দা বাইপাসে ১৫০০ শয্যা বিশিষ্ট ময়মনসিংহ মেডিক্যালের ২য় ইউনিটের কাজ দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন হলে রোগীর চাপ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। গত ৯ মাসে প্রায় এক লক্ষ রোগীর চাপ বেড়েছে মচিমহায়।