কিশোরগঞ্জে রোপা আমনের ধান সংগ্রহে ব্যস্ত কৃষকরা

আমনিুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জে আমনের নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের বাড়ি বাড়ি যেন সুবাস ছড়াচ্ছে। পুরো জেলায় ১০ হাজার ১৬ হেক্টর জমি সম্প্রতি অতি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকের মনে আনন্দ না থাকলেও চলছে রোপা আমন কাটার ধুম। এরই মধ্যে জেলায় আবাদকৃত নব্বই ভাগ জমির ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো: আব্দুস সাত্তার।

বোরো মৌসুমে প্রখর রোদে কৃষকের গা পুড়লেও হেমন্তের এই মৃদু উষ্ণ সৌরতাপে দল বেঁধে কৃষকরা ক্লান্তিহীনভাবে কেটে যাচ্ছেন মাঠের সোনার ধান। কৃষকরা জমির পুরো ধান কেটে জমিতে কয়েকদিন বিছিয়ে রাখেন। ধান শোকানোর পর সেগুলো জমিতে বা বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করে গোলায় তোলেন।

কিশোরগঞ্জের প্রধান ফসল বোরো হলেও দ্বিতীয় সর্বাধিক ধান উৎপাদন হয় রোপা আমন। ১৩ উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এবং নিকলী- এই চারটি উপজেলা পুরোপুরি হাওর অধ্যুষিত। তারপরও হাওরের কিছু জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এবার সারা জেলায় মোট ৮৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৮৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪৩০হেক্টর বেশি।

এরই মধ্যে সম্প্রতি জেলায় অতি বৃষ্টিতে ১০ হাজার ১৬ জমির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা ক্ষতির দুশ্চিন্তা নিয়েই শতকরা নব্বই ভাগ ৬৬ হাজার ৯ শত ৭৩ হেক্টর জমির ধান কেটেছেন বলে জানা গেছে।

কিশোরগঞ্জ একটি ‘খাদ্য উদ্বৃত্ত’ জেলা। এখানে সারাবছর দানা জাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ মেট্রিকটন। স্থানীয় চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিকটন। ফলে বছরে উদ্বৃত্ত থাকে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিকটন। এসব উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য সারাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে বিশাল ভূমিকা রাখে। কিন্ত এবারে অতি বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় সে ঘাটতি পুরণের সম্ভাবনা খুবই কম।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, এবছর তাদের জমিন ভালো হয়েছিলো। ফসলের তোর আশার সময়ে অতি বৃষ্টিতে ধানী জমি তলিয়ে যাওয়ায় ফলন আশানুরূপ হয়নি। কারণ এবছর দফায় দফায় বৃষ্টি হবার কারণে কারো জমিতেই সম্পূরক সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়নি। যে কারণে জমি সবসময়ই রসালো ছিল। আমন ফসল এবার অনুকূল পরিবেশ পেয়েছিলো । আর সেই কারণেই ভাল ফলনের আশাবাদী ছিলেন তারা। কিন্ত অকাল অতি বৃষ্টি সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়। তবে তারা সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বোরো চাষাবাদে মনোযোগী হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *