ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রচন্ড ক্ষতি সাধিত হয়েছে। উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের চাপে পানির উচ্চতা বাড়ছে। প্লাবিত হয়েছে বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, মোংলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অন্তত অর্ধশত গ্রাম। বাগেরহাটে দুই সহস্রাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে মাছচাষিদের কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৬৭ হাজার চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের ঘের আছে। চলতি অর্থবছরের এই জেলায় মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় ২ হাজার ৯১টি মৎস্যঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রামপালে ৯১৭টি, মোংলায় ৬৮৫, মোরেলগঞ্জে ১২৫ এবং শরণখোলা উপজেলায় ১৪৪টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। রামপাল উপজেলার হুড়কা এলাকায় পানির তোড়ে বগুড়া নদীর তীর রক্ষা বাঁধের একটি অংশ ভেঙে যায়। এলাকাটির প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের পাশেই তিন কিলোমিটার দীর্ঘ রিং বাঁধ ভেঙে পুরো নিজামপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় জোয়ারে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।েউপজেলার তমরুদ্দি, সোনাদিয়া, নলচিরা, হরণী, চানন্দি, সুখচর ও নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভোলার লক্ষাধিক মানুষ কয়েকটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে লালমোহন উপজেলায় আবু তাহের (৪৮) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।  নোয়াখালীর হাতিয়ার তুফানিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা রক্ষায় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে জোয়ারের পানিতে ওই বেড়িবাঁধ পুরোপুরি ভেঙে যায় । জোয়ারে উপজেলার তুফানিয়া গ্রামের ইরাক মেম্বারের বাড়িসংলগ্ন এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি বেড়িবাঁধের এক পাশের কমপক্ষে ৩০-৪০ ফুট জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু পাউবো কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কেউ বেড়িবাঁধটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের নিখোঁজের খবর আসছে । ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ খবর এখনো পাওয়া যায় নি।কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, আগে থেকে বাঁধ রক্ষাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমানো যেতো। অনেকটা পাউবোসহ অন্যান্য সরকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্থদের সুনির্দিষ্ট তালিকা করে তাদেরকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা জরুরি। অনেকেই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেলে আর ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই। একই সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য সরকারকে আরো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *