থার্টিফাস্ট নাইট: অপসংস্কৃতির দানব -পরশ মির্জা

ইংরেজি বৎসর। সারাবিশ্বে সর্বাধিক প্রয়োগকৃত আন্তর্জাতিক বৎসর। ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক, দাপ্তরিক, সরকারী, বেসরকারী সকলস্তরেই ইংরেজি বৎসরের দিন তারিখ সময় ব্যবহার করা হয়। চলছে ডিসেম্বর মাস। আর ক’দিন পরেই গত হবে চলমান ইংরেজি বছর।

কোনকিছু শুরু হলে তার শেষও হয়। পরবর্তিতে আবার শুরু হয়। এটাই নিয়ম। তেমনি জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ইংরেজি বৎসর শুরু হয় এবং ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। আর এই ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতই হলো ‘থার্টিফাস্ট নাইট’। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট শেষে ০০:০০ সময়ে নতুন ইংরেজি বছরকে স্বাগত জানানো হয়। এই স্বাগত জানানোকে ঘিরে উম্মাদনাও শুরু হয়। আয়োজন করা হয় থার্টিফাস্ট নাইটের।

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে বাহ্যিকভাবে ধীরে ধীরে উঁচুশ্রেণী কর্তৃক থার্টিফাস্ট নাইট পালন শুরু হয়। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বড় বড় শহরকেন্দ্রিক টাকাওয়ালারা থার্টিফাস্ট নাইট পালন করতে শুরু করে। তথ্যপ্রবাহের অবাধ বিচরনে এখন তা ভাইরাসের মত ছেয়ে গিয়েছে সারাদেশে এবং তা সকলস্তরে।

অন্ধকারের যে কোন আয়োজনে উম্মাদনা থাকে। আর এই উম্মাদনার প্রতি মানুষের আকর্ষনও লক্ষনীয় মাত্রার। কারণ, অন্ধকারে অনেককিছুর আয়োজন করা যায়, অনেককিছু করা যায়। যা সচরাচর দিনের আলোতে করা সম্ভব নয়। থার্টিফাস্ট নাইটের আঁধারিতে সেসব করা যায় বলে আয়োজনও চলে রগরগে।

অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ভয়ানক। যা মানুষের মানসিকতাকে নেতিবাচকভাবে চরম পরিবর্তন করে। নিজের অজান্তেই পরিবর্তন ঘটে মানসিকতার। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সকলক্ষেত্রেই। পাশ্চাত্যের থার্টিফাস্ট নাইট সেভাবেই প্রভাব ফেলছে আমাদের সংস্কৃতিতে সমাজে সর্বোপরি মানসিকতায়। আমরা না বুঝেই তা গিলছি।

প্রশ্ন হলো, আমরা কেন অন্ধকারের উম্মাদনার থার্টিফাস্ট নাইট পালন করব? বাঙালী জাতির জীবনবোধের সাথে কি এর আদৌ আত্মিক ও মানসিক সম্পর্ক রয়েছে? এটা কি আমাদের সংস্কৃতির অংশ? কখনও নয়। আমরা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোন থেকে ইংরেজি দিন তারিখ সময় ব্যবহার করলেও এর সাথে আমাদের আত্মিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক কোন সম্পর্ক নেই। যার সাথে এ ধরণের সম্পর্ক নেই তা কখনোই আমাদের সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না।

থার্টিফাস্ট নাইট শতভাগ আমদানী করা অপসংস্কৃতি। এর আয়োজন শুধু উম্মাদনা সৃষ্টিতেই পারঙ্গম। নিজেদের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা বাঙালী সংস্কৃতিকে বাঁচানোর স্বার্থে থার্টিফাস্ট নামক অপসংস্কৃতির দানব থেকে সচেতনভাবেই দূরে থাকা একান্ত প্রয়োজন। অপসংস্কৃতি গ্রহণ নয় বর্জন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। জাতীয় স্বকীয়তার সাথে এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা অতীব জরুরী।
(পরশ মির্জা)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *