বৃষ্টি বাধা হওয়ায় ঈদের ছুটিতে পর্যটক কম গারো পাহাড়ে

শেরপুর জেলা প্রতিনিধি : ঈদে সারাদেশ থেকে শেরপুরের উত্তরে বিস্তৃত গারো পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে গজনী অবকাশ ও মধুটিলা ইকোপার্কে দলে দলে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহায় টানা এক সপ্তাহের ছুটি। পর্যটক বরণের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল গারো পাহাড়ের এ পর্যটন কেন্দ্র‍গুলো। কিন্তু চলতি ঈদে টানা বন্ধ থাকলেও বৃষ্টি বাধায় পর্যটকদের খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। এতে হতাশ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

গারো পাহাড়ের জেলা প্রশাসকের গজনী অবকাশ কেন্দ্রে দৃষ্টিনন্দন গারো মা ভিলেজ, জিপ লাইনার, ভাসমান সেতু, ওয়াটার পার্ক, ওয়াটার কিংডম, প্যারাডোবা, ঝুলন্ত ব্রীজ, রুফওয়ে, জিপলাইনার, ক্যাবলকার, প্যাডেল বোর্ড, সাম্পান নৌকা, ঝর্ণাধারাসহ আকর্ষনীয় রাইডস মন কাড়ছে ভ্রমণ পিপাসুদের। এছাড়া সীমান্তের এপার ও ওপারের পাহাড়গুলোর লুকুচুরি খেলাতো আছেই।

পাশাপাশি বন বিভাগ গড়ে তুলেছে মধুটিলা ইকোপার্ক নামে পর্যটন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে ওয়াচ টাউয়ার, পেডেল বোর্ড, মিনি চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন রাইডস।

সোমবার ঈদের ৪র্থদিনে গিয়ে দেখা যায়, গত ঈদের মত দর্শনার্থীদের ভিড় নেই পর্যটন কেন্দ্রে। বাস, লেগুনা, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের ভীড় দেখা যায়নি। তবে আশেপাশের কিছু লোককে দেখা গেছে। বৃষ্টি বাধায় পর্যটকরা আসতে পারেনি পাহাড়ে সবুজের হাতছানি পেতে।

গারো মা ভিলেজ, জিপ লাইনার, বোর্ট ক্লাবের ইজারাদার হাসান বলেন, গারো মা ভিলেজে প্রবেশ করে পর্যটকরা নৃ গোষ্ঠীদের জীবনমান, ভারতীয় পাহাড়, সীমান্ত, দোলনায় দোল খাওয়া, মাশরুম সিট, বিভিন্ন ভাস্কর্য দেখতে পায়। আর বোর্টেও ওঠে অনেক পর্যটক। তাই এসব কিছু নতুন করে সাজিয়েছিলাম। ঈদের জন্য প্রস্তুতি ছিলো বেশ। কিন্তু ঈদে বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি। এ বৃষ্টির কারণে বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটেনি। লোকসান গুনতে হবে আমাদের এবার। এতে আমার প্রায় ২ লাখ টাকার মত লোকসান হবে। আর জিপ লাইনারে কয়েকদিনে একজন পর্যটকও ওঠেনি। আমাদের সকল কিছুর খরচ তো করতেই হয়েছে। আমরা খুব লোকসানে পরে গেলাম।

গজনী পর্যটন কেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহম্মেদ বলেন, গত তিন মাস ধরে তেমন একটা আয় হয়নি। এবার ঈদে ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। নতুন করে সাজিয়েছিলাম মিনি চিড়িয়াখানা, ক্যাবলকার, লেকসহ অন্যান্য রাইডগুলো। এক চিড়িয়াখানাতেই অনেক খরচ করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছিলাম ঈদের ব্যবসার জন্য। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বেশি পর্যটক মেলেনি ঈদে। এতে আমরা ব্যপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়লাম।

গজনী অবকাশ কেন্দ্রের আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। অন্যান্যবার ঈদে এ সেতুর টিকেট কাউন্টারে বাড়তি লোক নিতে হয়। আর এবার এখানে দর্শনার্থী নেই বললেই চলে। আমরা খুব হতাশায় আছি। ঈদ উপলক্ষে আমাদের একটা ব্যবসার টার্গেট থাকে, কিন্তু বৃষ্টির কারণে মানুষ বের হতে পারছে না আর ঘুরতে আসবে কিভাবে। কথাগুলো বলছিলেন ইজারাদার ছানুয়ার হোসেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেক ব্যবসায়ী ঈদ উপলক্ষে ঋণ করে দোকানে মালামাল তুলেছিলেন। কিন্তু লোকজন না আসায় তারা এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে।

এদিকে পর্যটক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘শেরপুর ট্যুরিজম’র পরিচালক নাঈম ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক মাস তেমন পর্যটক পাইনি। চলতি ঈদে বেশ কয়েকদিন ছুটি থাকলেও বাইরের পর্যটক নেই বললেই চলে। যারা আসছেন তারা ঝিনাইগাতী ও আশেপাশের এলাকার পর্যটক। দূর দূরান্তের পর্যটকরা বৃষ্টির কারণে আসতে পারেনি। তাই এ খাতের ব্যবসায়ীরা এবার লোকসানে পড়বে৷’

এছাড়া শেরপুর সদরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন রিসোর্ট ও ক্যাফে। এসবের মধ্যে শ্যামলী শিশু পার্ক, গুল্ডেনভেলী পার্ক, অর্কিড, দারোগ আলী পৌর পার্ক। এসকল জায়গা শহরের কাছাকাছি হওয়ায় সেখানে দর্শনার্থীরা ছুটে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *