মহাকাশ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনা: ভর ও শক্তি

ভর নিয়ে দু’টা পর্ব রয়েছে। এই পর্বে ভর ও শক্তির পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে সুস্পষ্ট ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমার লেখাটি হয়তো ভর সম্পর্কে অনেকের চিরাচরিত ধারনাকে খন্ডন করতে পারে। আশা করি লেখাটি আপনাদের ভাল লাগবে।
একটি মৌলিক প্রশ্ন: ভর (Mass) কি? ভর পদার্থ বিজ্ঞানে একটি মৌলিক ধারনা। উইকিপিডিয়ায় ভর সম্পর্কে বলা হয়েছে, “ভর পদার্থ বিজ্ঞানে একটি মৌলিক তত্ত্বগত ধারণা। ভর হল বস্তুর একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য যা বল প্রয়োগে বস্তুতে সৃষ্ট ত্বরণের বাধার পরিমাপক। নিউটনীয় বলবিদ্যায় ভর বস্তুর বল ও ত্বরণের সাথে সম্পর্কিত। ভরের প্রায়োগিক ধারণা হচ্ছে বস্তুর ওজন। ভরের পরিমাপ সম্ভব নয়। তবে অভিন্ন অবস্থায় বা পরিবেশে ওজন দ্বারা বিভিন্ন বস্তুর তুলনামূলক ভরের ধারণা পাওয়া যায়।”
আমরা সহজাত জ্ঞানেই বুঝতে পারি যে ভর হচ্ছে এমন একটি রাশি যা পদার্থের জড়তা এবং ওজন প্রদান করে। নিউটনের দ্বিতীয় সুত্র F=ma অনুসারে পদার্থের জড়তা নির্দেশ করা হয়। আবার মহাকর্ষ সুত্র F=GmM/d² অনুযায়ী দু’টি ভর সম্পন্ন জিনিসের মধ্যে আকর্ষন বর্ণনা করা হয়।
তবে যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন ভর সম্পর্কে আমরা যেভাবে ধারনা করি তা অনেকখানি ভুল। আমরা যেভাবে ধারনা করি যে ভর হচ্ছে পদার্থের পরিমানের নির্দেশক, আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী আসলে তা ঠিক নয়। বর্তমানে পদার্থ বিজ্ঞানীরা ‘ভর’ বলতে স্থির ভরকেই (rest mass) বুঝান। স্থির ভর হচ্ছে সেই ভর যা পদার্থকে জড়তা প্রদান করে এবং মহাকর্ষ বল সৃষ্টি করে। কিন্তু আসলে ভর জিনিসটা আসছে কোথা থেকে। একটু গভীরে প্রবেশ করে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি। আমরা জানি হাইড্রোজেন পরমানু একটি ইলেকট্রন ও একটি প্রোটনের সমন্বয়ে গঠিত। অথচ হাইড্রোজেন পরমানুর ভর একটি ইলেকট্রন এবং প্রোটনের ভরের যোগফলের কম। কিভাবে সম্ভব। এর কারন রয়েছে আইনস্টাইনের বিখ্যাত E= mc²( Mass-energy equivalence ) সমীকরনের মধ্যে। কিভাবে সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
আমরা জেনেছি, বিশেষ আপেক্ষিকতা অনুসারে সকল জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর (inertial frame of reference) জন্য একই বাস্তবতা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। স্থির বস্তুর তুলনায় গতিশীল বস্তুর সময়ের প্রসারন এবং দৈর্ঘ সঙ্কোচন ঘটে। এছাড়া আরো একটা ব্যাপার ঘটে- ভর বৃদ্ধি। আইনস্টাইন তার ‘বিষ্ময়ের বছর’ ১৯০৫ সালের নভেম্বরে “Does the inertia of a body depend upon its energy-content?” শীর্ষক গবেষনাপত্র প্রকাশ করেন। এই গবেষনাপত্রে তিনি ভর-শক্তির সমতুল্যতা প্রমান করে তার তথা পদার্থ বিজ্ঞানের সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরন E= mc² এর দ্বারা। আইনস্টাইন বিশেষ আপেক্ষিকতা সংক্রান্ত তার দুই মূলনীতির থেকে যেভাবে জটিল গনিতের সাহায্যে এই সমীকরন আহরন করেছেন সেটাতে না গিয়ে আমরা মূল ধারনাটা বোঝার চেষ্টা করি। একটা সময়ে বিজ্ঞানে ভরের সংরক্ষনশীলতা ছিল অন্যতম মৌলিক স্বীকার্য। সমস্যা হলো যদি সংরক্ষনশীলতা বলতে জড় ভরের সংরক্ষনশীলতা বুঝায় তবে বিশেষ আপেক্ষিকতায় সেটি টিকে না। কোন গতিশীল বস্তুর মোট শক্তি সকল প্রসঙ্গ কাঠামোয় এক থাকে না।
E= mc² সমীকরন আইনস্টাইনের সমীকরনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিশেষ তত্ত্বের অনুষঙ্গ হিসাবেই তার সবচেয়ে জনপ্রিয় সমীকরন E= mc² এসেছিল। কিন্তু আইনস্টাইন তার ১৯০৫ সালে প্রকাশিত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বে (special theory of relativity) সমীকরনটি লিখেছিলেন এভাবে m = E/c²। এই সমীকরন দিয়ে আমরা জানতে পারি পদার্থ বিজ্ঞানের মূলে ভর শব্দটির অর্থ। ভর সম্পর্কে এ ধরনের কথা প্রায় সময়ে শোনা যায় যেমন, ‘ভর হচ্ছে শক্তির অন্য আরেক রুপ, ‘ভর হলো জমাট বাঁধা শক্তি’ কিংবা, ‘ভরকে শক্তিতে রুপান্তরিত করা যায়’। অথচ বাস্তবে এগুলোর কোনটিই সত্য নয়। আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিষয়টা বুঝতে চেষ্টা করি।
কোন একটা জিনিসের ভর তার ভিতর অবস্থিত কম্পোনেন্ট গুলির শুধু ভর নয়, বিন্যাস এবং গতির উপরও নির্ভরশীল। মনে করা যাক দুইটা স্প্রীং চালিত ঘড়ি আছে যাদের গঠন হুবহু একই। তারা একই পরিমান পদার্থ এমনকি পরমানুর পরিমানও ভর এক। শুধু একটা পার্থক্য রয়েছে। একটা ঘড়ি সচল এবং অন্যটি অচল। আইনস্টাইনের সমীকরন অনুযায়ী সচল ঘড়িটির ভর বেশী। কেন? কারন সচল ঘড়ির কাঁটা, গিয়ার প্রভৃতি ভিতরের পার্টস গুলো অবিরাম ঘুরছে। সুতরাং তাদের মধ্যে কিছু গতি শক্তি (kinetic energy) রয়েছে। দম দেয়া স্প্রীং এর স্থিতি শক্তি (potential energy) রয়েছে। আবার বিভিন্ন পার্টসের চলার ফলে যে ঘর্ষন হচ্ছে তার কারনে তাপ শক্তি (heat energy) উৎপন্ন হচ্ছে। এই তিন ধরনের শক্তি ঘড়িটিকে অতিরিক্ত ভর প্রদান করবে। সুতরাং (চালু ঘড়ির ভর) = (স্থির অবস্থায় ভর) + (শক্তি থেকে প্রাপ্ত অতিরিক্ত ভর)। তাহলে আমরা এই অতিরিক্ত ভর অনুভব করিনা কেন? কারন এর ‘ c’ এর বিশাল মান। হিসাব করলে দেখা যাবে শক্তি থেকে প্রাপ্ত ভর স্থির ঘড়ির প্রায় ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০১%। আরো দু’একটা উদাহারন দিয়ে বোঝান যাক। আপনি একটা টর্চ লাইট অন করলেন। সাথে সাথে সেটার ভর কমা শুরু হবে। কিভাবে হবে? টর্চের ব্যাটারীর মধ্যে বিদ্যুত-রাসায়নিক শক্তি রয়েছে। যে মুহূর্তে টর্চ জ্বালানো হলো সে মুহূর্ত থেকে সেই শক্তি আলোক শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে টর্চ থেকে বেরিয়ে যাবে। টর্চের ভর মাপলে যে আলো বেরিয়ে গেল সেই পরিমান ভর কম পাওয়া যাবে। আমাদের সূর্য্যও এভাবে আলো বিকিরন করে প্রতি সেকেন্ডে চারশ কোটি কিলোগ্রাম ভর হারাচ্ছে। (ভয় পাবেন না। এই হারে সূর্য্যের ভর কমলেও সূর্য্যের জীবনকাল এক হাজার কোটি বৎসরে তার মোট ভরের মাত্র ০.০৭% হারাবে)। তার মানে সূর্য্যের ভর শক্তিতে রুপান্তর হচ্ছে? না তা নয়। এই বিকিরন শক্তি আসছে সূর্য্যের অন্য শক্তি থেকে। সূর্য্যের ভিতরে যে গতি শক্তি এবং স্থিতি শক্তি রয়েছে সেগুলোই আলো শক্তিতে পরিবর্তীত হচ্ছে। সূর্য্য প্রতি সেকেন্ডে যে চারশ কোটি কিলোগ্রাম ভর হারাচ্ছে তা আসছে তার গতি শক্তি এবং স্থিতি শক্তি থেকে। আর একটা উদাহারন দেয়া যাক। একটা বাক্স আছে যার ভিতরের দেয়াল মসৃন আয়না দিয়ে তৈরী। ভিতরে টর্চ লাইটটিকে ভিতরে রেখে বন্ধ করে দেয়া যাক। এবার ওজন নেয়ার পর টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দেই। কিছুক্ষন পর আবার টর্চ সহ বাক্সের ভর মাপলে কি পাবো। ভর পূর্বের মত একই পাওয়া যাবে। কারন আলো বাক্স থেকে বার হতে পারছে না। বাক্সের ভিতরে অবস্থিত টর্চের বিদ্যুত-রাসায়নিক শক্তি (electro-chemical energy) আলোয় পরিবর্তীত হয়েছে কিন্তু তা বাক্সের মধ্যেই রয়ে গেছে। আবার টর্চকে আলাদা মাপলে আমরা ভর কম পাবো। কারন সেটা ইতিমধ্যে তার কিছু শক্তি হারিয়েছে।
লেখার শুরুতে বলা হয়েছিল হাইড্রোজেন পরমানুর ভর ইলেকট্রন এবং প্রোটনের আলাদা আলাদা ভরের চেয়ে কম হবে। কিভাবে? ধরা যাক একটা ইলেকট্রন আর একটা প্রোটন অসীম দুরত্বে অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে স্থিতি শক্তি সেক্ষেত্রে শুন্য হবে। তারা যেহেতু পরস্পরকে আকর্ষন করে, তাদের কে যদি পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসা হয় তাহলে স্থিতি শক্তি কমে যাবে। অন্য কথায় স্থিতি শক্তি ঋণাত্মক হবে। যেমন কোন বস্তু মাধ্যাকর্ষন শক্তির বলে পৃথিবীর দিকে আসতে থাকলে তার স্থিতি শক্তি কমতে থাকবে। তাহলে হাইড্রোজেন পরমানুতে অবস্থিত ইলেকট্রন-প্রোটনের মাঝের স্থিতি শক্তি ঋণাত্মক হবে। ইলেকট্রন প্রোটনের চারিদিকে ঘোরার ফলে গতি শক্তি অর্জন করবে যা ধনাত্মক। কিন্তু দুই শক্তির নিট যোগফল ঋণাত্মকই থাকবে। E (স্থিতি)+ E (গতি) <0। তাহলে হাইড্রোজেন পরমানুর ভর ইলেকট্রন ও প্রোটনের আলাদা ভরের যোগফলের চেয়ে কম হবে। পিরিয়ডিক টেবিলের অন্যান্য মৌলিক পদার্থের বেলাতেও এরকমটি হবে। হাইড্রোজেনের দুই পরমানু যখন একত্রে একটি অনু গঠন করবে তখন সেই হাইড্রোজেন অনুর ভর দুটি আলাদা হাইড্রোজেন পরমানুর ভরের যোগফলের চেয়ে কম হবে। কারন সেই দুটি হাইড্রোজেন পরমানু মিলিত হয়ে একটি অনু সৃষ্টি করলে তাদের মধ্যে ঋণাত্মক স্থিতি শক্তি তৈরী হবে। এখন প্রোটন এবং নিউট্রনের কথায় আসি। প্রতিটি প্রোটন এবং নিউট্রন তিনটি কোয়ার্কর সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু প্রতিটি নিউট্রন কিংবা প্রোটনের ভর তারা যে কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত তাদের ভরের চেয়ে শতগুন বেশী। তাহলে প্রোটন বা নিউট্রনের এই অতিরিক্ত ভরের উৎস কি। এক, প্রতিটি কোয়ার্ক প্রচন্ড রকমের অস্থির। প্রতিটি প্রোটন এবং নিউট্রনের কোয়ার্কগুলি প্রচন্ড প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি বেগে পরস্পররের চারিদিকে ঘোরে। ফলে কোয়ার্কগুলি প্রচন্ড রকম গতিশক্তি প্রাপ্ত হয়। দুই, স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্স থেকে উদ্ভুত বিপুল স্থিতিশক্তি কোয়ার্কগুলো পরস্পরের কাছ থেকে ছিটকে পড়া রোধ করে। গ্লুয়ন (Gluon) নামক ভরবিহীন কণা দ্বারা তৈরী ক্ষেত্র (gluon field) এই স্ট্রং নিউক্লিয়ার ফোর্সের উদ্ভব ঘটায়। স্ট্রং ফোর্স পজিটিভ চার্জ বিশিষ্ট প্রোটনগুলোকেও ধরে রাখে। এই দুই রকম শক্তিই মূলত পরমানুর ৯৯% ভর প্রদান করে আইনস্টাইনের বিখ্যাত m=E/c² সুত্র অনুসারে। ইলেকট্রন এবং কোয়ার্ক মৌলিক কনা। তাদের নিজস্ব ভর আছে। তাহলে এটাই কি পদার্থের মৌলিক ভর। সেটা একটা প্রশ্ন বটে। তবে এই ভর আসছে কেমন করে। ইলেকট্রন এবং কোয়ার্ক হিগস ফিল্ডের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া এই ভর প্রদান করে। হিগস ফিল্ডের সাথে ক্রিয়া করার জন্য ইলেকট্রন এবং কোয়ার্কের স্থিতি শক্তি দায়ী। সুতরাং যাকে আমরা মৌলিক ভর বলতে পারি তাও কিন্তু আসলে শক্তি। তাহলে বোঝা যাচ্ছে যাকে আমরা পদার্থের ভর বলি সেটা আসলে পদার্থের অন্তর্গত শক্তির পরিমান। ভর হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শক্তিরই ধর্ম বিশেষ (a property that all energy exhibits) ।
ভর ও শক্তির উপরোক্ত সম্পর্কের কারনে আমরা আমাদের সাধারন জ্ঞানের অতীত অদ্ভুত কিছু ব্যাপার সম্পর্কে আমরা ধারনা লাভ করি।
১। স্বর্ণ গোলক
দুটি সোনার গোলক আছে। গোলক দুটির এমন সুক্ষ্ণ ভাবে তৈরী করা হয়েছে যে তাদের ব্যাস, ভর, তাপমাত্রা এমন কি তাদের পরমানুর সংখ্যাও সমান। তাদের অভিন্ন তাপমাত্রা ১০° সেলসিয়াস। এখন একটিকে গরম করে তাপমাত্র ১০০° সেলসিয়াসে উন্নিত করা হলো। তাহলে গোলক দুটির মধ্যে ভরে কি আর কোন পার্থক্য হবে? আপনারা হয়তো বলবেন হবে না। না, তা ঠিক নয়। তুলনা মূলক ভাবে গরম গোলকটির ভর বেড়ে যাবে। কারন তাপশক্তি গোলকটির ভর সামান্য বাড়িয়ে দিবে যার পরিমান আমরা আইনস্টাইনের ভর-শক্তি সমীকরন থেকে হিসাব করে বের করতে পারবো।
একই ভাবে স্থির অবস্থার চেয়ে ঘুর্ণনশীল অবস্থায় একটি লাটিমের ভর বেশী। আবার দম দেয়া অবস্থায় ঘড়ির ভর দম না দেয়া অবস্থার চেয়ে বেশী।
২। সৌর পাল
সোলার সেইল বা সৌর পাল হলো একটি অভিনব ধারনা যার সাহায্যে একটি মহাকাশ যানকে গতি প্রদান করা সম্ভব। সেজন্য মহাকাশ যানে একটি বিশাল প্রতিফলন সক্ষম পাল সংযুক্ত করার প্রয়োজন হয়। এই বিশাল পাল আলোর ভরবেগ (momentum) কাজে লাগিয়ে মহাকাশ যানকে সম্মুখে ধাক্কা দিয়ে গতিবৃদ্ধি করে। সূর্য থেকে বিকিরন প্রাপ্ত আলোক রশ্মি সৌর পালে প্রতিফলিত হয়। ফলে পালের উপর চাপ তৈরী হয়।
ফোটন যেহেতু ভরবেগ সম্পন্ন আলোক কনিকা, তাই সৌর আলোক কনিকা গুলি সৌর পালের উপর প্রতিফলিত হওয়ার সময় সেগুলির গতিশক্তি পালের উপর স্থানান্তরিত করে চাপ সৃষ্টি করে। একটি আদর্শ সৌর পাল ৯০% পর্যন্ত আলো প্রতিফলিত করতে পারে। সামান্য পরিমান আলোক রশ্মি পালে শোষিত হতে পারে।
এভাবেই খুব কম খরচে একটি মহাকাশ যানের জ্বালানী সমস্যার সমাধান সম্ভব। জাপানী মহাকাশ গবেষনা সংস্থা ২০১০ সালে IKAROS (Interplanetary Kite-craft Accelerated by Radiation Of the Sun) নামক গবেষনা মহাকাশ যান শুক্র গ্রহে প্রেরন করে। এর প্রোপালশন সম্পূর্ণ সূর্যের ফোটনের ভরবেগ থেকে তৈরী করা হয়েছি। এটা নাম থে্কেই হয়তো বুঝতে পারছেন। প্ল্যানেটারী সোসাইটির তৈরী Lightsail 2 এধরনের একটি উপগ্রহ যেটি সৌর পাল ব্যবহার করে পৃথিবীর কক্ষপথে গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আন্তগ্রহ পরিভ্রমনের জন্য তৈরী মহাকাশ যানগুলি হয়তো সূর্যের আলো ব্যবহার করে সৌর পালের সাহায্যেই যাতায়াত করবে।
৩। ফোটন বাক্স
মনে করা যাক একটি ভরহীন বাক্স রয়েছে যার ভিতরের দেয়ালগুলি নিঃখুত ভাবে ১০০% আলো প্রতিফলনে সক্ষম। সেই বাক্সের ভিতর কিছু ফোটন ঢুকিয়ে দেয়া হলো। ফোটনগুলি দুই দেয়ালের মধ্যে অনবরত প্রতিফলিত হতে থাকবে। এখন যদি জিজ্ঞেস করা হয় বাক্সটির এই অবস্থায় ভর কত। আপনি হয়তো মনে করছেন বাক্সটি এবং ফোটন কণাগুলি ভর বিহীন। তাই এই অবস্থায় বাক্সটির কোন ভর থাকার কথা না। না, আপনি ভুল করছেন। বাক্সটির এখন ভর সম্পন্ন হবে। এবং সে ভর হবে E/C^2 যেখানে E হচ্ছে বাক্সে অবস্থিত ফোটনগুলির সম্মিলিত শক্তি। কারন এখন বাক্সটি একটি বন্ধ ব্যবস্থা (closed system)। এর ভিতরের ফোটন গুলির সম্মিলিত শক্তি এর ভর তৈরী করবে। মনে হয় আপনাদের বিশ্বাস হচ্ছে না। এটাই পদার্থ বিজ্ঞান।
৪। Kugelblitz
এটি একটি তাত্ত্বিক ধারনা। মহাশুন্যে একটা এক ঘন মিলিমিটার আয়তনের একটা ফোটন বক্স তৈরী করা হলো। এর মধ্যে পৃথিবীর ৩৫০ আলোক বর্ষ ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত সকল নক্ষত্রের দশ বৎসরে উৎপন্ন আলোক ফোটন জমা করা হলো। তাহলে কি হবে জানেন? এই ফোটন বাক্সের যে ভর হবে তাতে একটি পৃথিবীর সমান ব্ল্যাক হোল তৈরী হবে যা সম্পূর্ণ আলো দিয়ে তৈরী। এ রকম তাত্ত্বিক ব্ল্যাক হোলের কেতাবী নাম হলো Kugelblitz।
বিজ্ঞানীরা Schwarzschild Kugelblitz নামক এক ধরনের কল্পিত কৃত্রিম অতি ক্ষুদ্রাকৃতির Kugelblitz এর ধারনা তৈরী করেছেন যার সাহায্যে ভবিষ্যতে আন্ত নাক্ষত্র ভ্রমন সম্ভবপর হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *