হাওড় অঞ্চলের কৃষক অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে , দায়ভার কার ?

সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্র জয় সরকার বলছেন, ‘ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর বাবার কান্না দেখে, নিজেই কাঁচি হাতে ধান কাটতে এসেছি। কিছু ধান এখনও পাকেনি। এরপরও তলিয়ে যাওয়ার চেয়ে কিছু ধান ঘরে নিতে পারলে দুয়েক দিনের খাবার হবে।’ উপজেলার বাঘার হাওরে পানি ঢুকে কয়েক হেক্টর জমির ধান ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে পড়ায় বুক ভেঙ্গে কান্না আসছে জেলার এরকম হাজার হাজার কৃষকের। লাখ লাখ হেক্টর জমির ধান অসহায় কৃষকের সামনেই তলিয়ে যাচ্ছে।
ফসল রক্ষার জন্য ১৯৬৫ সাল থেকে সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে বাজেট প্রদান করে যাচ্ছে সরকার । এই বাজেটের পরিমাণ্ও কম নয়। প্রতিবছরই শত শত কোটি টাকার বাজেট হয়। ২০১৭ সালেও ১৫১ কোটি ৬৬ লাখ ১৫ হাজার টাকার বাজেট হয়েছিল। ফলাফল কিছু হয়নি। কৃষকের প্রায় ৮০-৯০% ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এবছরও ফসল রক্ষার জন্য ৭২৪ কোটি টাকার বাজেট হয়েছে। বাজেট অনুযায়ী টাকাও বণ্টন হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। এসব পিআইসি-তে কারা, কিভাবে কাজ করেছে? এগুলো নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং এর দায়িত্ব কার? এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে- এগুলোতে চেয়ারম্যান, এমপিসহ ডিসি, ইউএনও, পাউবো-কর্মকর্তারা জড়িত থাকেন। প্রথমত: যখন বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয় তখন কি তারা কোন সংশয়ে থাকেন যে, বাঁধ দিয়ে পানির ঢল আটকানো যাবে না?
যদি তারা মনে করেনযে পারা যাবে না- তাহলে বাঁধ নির্মাণের জন্য শত শত কোটি টাকা খরচ কেন? বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া অথবা কৃষকদের বলতে হবে আমরা পানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না , তেমারা ঠিক করে নাও কি করবা ? সংগ্রামী ও সৃজনশীল কৃষকরা নিশ্চয়ই প্রাকৃতিক উপায়ে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বিকল্প কিছু করে নিতে পারবে। নাহলে চাষাবাদের বিকল্প অন্য কিছু করবে তারা। কিন্তু সরকার প্রতিবছর কৃষকদের ফসল রক্ষার আশ্বাস দিয়ে যখন তার ফসল ক্ষতি করে, তখন এর দায়ভার সরকার নেয় না। কৃষকদের সরকার তার কোন ক্ষতিপূরণ দেয় না। হাওড় অঞ্চলের কৃষকরা ঋণ করে , এনজিও থেকে টাকা তোলে জমি চাষ করে। ফসল তুলে কিছু খোরাকের জন্য রেখে বাকিটা বিক্রি করে ঋণ শোধ করে । যখন সমস্ত ফসল মার যায় তখন কৃষকের কি অবস্থাটা দাঁড়ায়, বলুন তো? তখন যদি কোন কৃষক আত্মহত্যা করে এর দায়ভার কার, বলুন তো ? রাজশাহীর দুইজন কৃষক যেমন আত্মহত্যা করেছেন , কিন্তু দায়ভার কেউ নিলো না। হাওড়ের কৃষকরা আত্মহত্যা ছাড়াই এমনিতেই যখন অস্তিত্বহীন হচ্ছে , প্রতি বছরই কৃষক কৃষি ছেড়ে , বাড়িঘর ছেড়ে , হাওড় অঞ্চল ছাড়ছেন তখন তার দায়ভার কার বলুন তো?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *