রাজনীতি

সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এম এ করিম এঁর মরদেহ ৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে

প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সভাপতি এবং সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকার সম্পাদক ডাঃ এম. এ. করিম-এর প্রতি সর্বসাধারণের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ৭ নভেম্বর র‌বিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মরদেহ রাখা হবে। এনডিএফ’র সহ-সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম এক বিজ্ঞপ্তিতে তা নিশ্চিত করেন।
ডা. এম এ করিম একজন ত্রি-কালদর্শী বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি  জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে  সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।  সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিবিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আপসহীন, অকুতোভয়, দৃঢ়চেতা ও  একজন সাহসী জননেতা। তিনি মওলানা ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। গণতন্ত্রের নির্ভীক মুখপত্র আপোসহীন পত্রিকা  সাপ্তাহিক সেবা’রও তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে  সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশব্যাপী শ্রমিক কৃষক জনগণের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রগতিশীল রাজনীতিক নেতা-কর্মিদের মধ্যে অভিভাবক হারানোর শোক পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রথিতযশা এই রাজনীতিকের  মৃত্যুতে তাঁর মরদেহে  সর্বসাধারণের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের পক্ষ থেকে আগামী ৭ নভেম্বর রবিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর  ডা. এম এ করিমের মরদেহ শেষবারের মতো তাঁর প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের  গুলিস্তানস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিয়ে আসা হবে। সবশেষে প্রয়াত নেতাকে জুরাইন কবরস্তানে সমাহিত করা হবে।
উল্লেখ্য, ৪ নভেম্বর ২০২১ বৃহস্প‌তিবার দুপুর ২:২৫ মিনিটে কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৮ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়। ১৯২৩ সালের ১৫ জুলাই মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। হাজিগঞ্জ, চাঁদপুর সাদরা গ্রামের শিক্ষক হাকিম উদ্দিন ছিলেন তাঁর পিতা। মাতা মেহের নিগার ছিলেন একজন গৃহিনী। পিতা-মাতার সাথে সাথে তার নিঃসন্তান জ্যেঠা জ্যেঠির আপত্য স্নেহে বড় হয়েছেন তিনি। তাঁর পিতা চেয়েছিলেন তার সন্তানকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে। ডাঃ করিম তাঁর পিতার আকাঙক্ষাকে আত্মস্থ করে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন।
গণমানুষের চিকিৎসা সেবায় ডাঃ এম.এ করিম অদ্বিতীয় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব। তিনি আজীবন অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গিয়েছেন। শ্রমিক দিনমজুর নিম্নবিত্তদের চিকিৎসক হিসেবে তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত। তাছাড়া প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীসহ অন্যান্য রাজনীতিকদেরও তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করেছেন। অনেক দরিদ্র রোগীদেরকে তিনি বিনা ফিতে শুধু চিকিৎসা সেবা দেননি অনেককে নিজের পকেট থেকে অর্থ দিয়ে ঔষধ এমনকি পথ্য কিনার জন্যও অর্থ দিতেন। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রও ছিল অদ্বিতীয়। এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে তিনি সাম্রাজ্যবাদের মুনাফা লোটার বাজার হিসেবে দেখতেন। তাই তিনি গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি হিসেবে বুঝতেন সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলা-মুৎসুদ্দিপুঁজি তথা সকল প্রকার শোষণ-শাসনমুক্ত স্বাস্থ্য ও সমাজ ব্যবস্থাকে। আর তাই চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাসের অগ্রসেনা ও ইতিহাসের কালপঞ্জী। প্রায় ৮ দশক জুড়ে রয়েছে তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সুদূর প্রসারী কর্মতৎপরতা ও সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ১৯৮৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন ডাঃ এম. এ. করিম। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।

55 thoughts on “সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এম এ করিম এঁর মরদেহ ৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *