অন্যান্য

সাতক্ষীরায় টেকসই বাঁধ ও জলবায়ু সুশাসনের দাবি

ফিরোজ মোস্তফা ঃ জলবায়ু সংকটজনিত ঝুঁকিতে থাকা মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করতে সাতক্ষীরা জেলা পরিদর্শন করছেন ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্যরা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দুর্যোগ প্রবণ এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এসে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্যরা মিলিত হলে উপস্থিত বক্তারা প্রকৃতি বান্ধব টেকসই বেরিবাঁধের দাবি জানিয়েছেন।  তবে জলবায়ু অর্থায়নসহ সকল সরকারি প্রকল্পের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, জনঅংশগ্রহণ ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছে জেলা প্রশাসক।

 শনিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে  ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারপার্সন ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়’র সভাপতিত্বে  ‘ক্লাইমেট টক’ সভায়  বক্তব্য রাখেন  ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের এক প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ –  শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, সংসদ সদস্য রূমানা আলি ও সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি প্রমুখ ।
ডুবে যাওয়ার হাত থেকে সাতক্ষীরাবাসীকে রক্ষা করতে টেকসই বেরিবাঁধের কোন বিকল্প নেই বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। এসময় প্রকৃতিবান্ধব সমাধান হিসেবে বাঁধে ম্যানগ্রোভ বনায়ানের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আলোচনায় উঠে অাসে পানি সংকট,  স্বাস্থ্য ঝুঁকি, ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপণ ও পরিবেশ বিধ্বংসী ইট-ভাটার কথা।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রকাশ কর্মসূচির আওতায় এই পরিদর্শন ও ক্লাইমেট টক কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করছে প্রতীকি যুব সংসদ, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং আর্থ সোসাইটি।
মতবিনিময়ে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন  সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি, কৃষি সম্পাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, আর্থ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন মিয়া ।
সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতি বলেন, জলবায়ু সংক্রান্ত প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে এই সংকট অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব। এজন্য দরকার শক্তিশালী মনিটরিং, স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়া এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনা। স্থানীয় পর্যায়ের মতামত গ্রহণ করে পরিকল্পনা হতে নিলে তা বাস্তবায়ন উপযোগী হবে বলে তিনি মনে করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম  বলেন, ‘জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় নানা প্রকল্প ও উদ্যোগ হাতে নেয়া হচ্ছে। তবে অনেক প্রকল্পের গুনগত মান দেখে কষ্ট পাই। এসব যায়গায় শুদ্ধাচার অবর্তমান’। উদাহরণ হিসেবে তিনি শহরের প্রাণসায়র খাল খনন প্রকল্পের কথা তিনি উল্লেখ করেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জলবায়ু অর্থায়নসহ সরকারি সকল প্রকল্পেরই শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব। এ বিষয়ে আরো গুরুত্ব দেয়া হবে’। জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় স্থানীয় ও সমন্বিত অভিযোজন পরিকল্পনার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন।
এর আগে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন  গোলাখালী গ্রাম পরিদর্শনে যান। এসময় তারা গোলাখালী গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের জীবনযাত্রার বিভিন্ন বিষয়ে  খোঁজখবর নেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- শ্যামনগরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শহিদুজ্জামান, রমজাননগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল-মামুন, প্রতীকি যুব সংসদের চেয়ারপার্সন আমিনুল ইসলাম, নির্বাহী প্রধান ও ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান, আর্থ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন মিয়া প্রমুখ।
ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের কনভেনার নাহিম রাজ্জাক এমপি বলেছেন, জলবায়ু ঝুঁকির পাশাপাশি মানুষজন নানাভাবে অভিযোজন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সাতক্ষীরা এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা প্রতিবেদন আকারে আসন্ন জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৬) তুলে ধরা হবে। এছাড়া মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও এলাকার উন্নয়নে জাতীয় নীতি-নির্ধারণ পর্যায়ে কাজ করবে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *