আওয়ামী রাজনীতির এক নীরব কান্ডারী: বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক

স্টাফ রিপোর্টার ঃ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি পরিপূরক নাম। তৎকালীন স্বৈরতান্ত্রিক পাকিস্তান সরকারের নির্মম নিপীড়নের বিরুদ্ধে
স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র-যুবকদের এক মিলনমেলা তৈরি হয় দলটিতে। যার কান্ডারী হোন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সংগ্রামী দৃঢ়তার অনুসারী হয়ে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে তৎকালীন সময়ে ছাত্র-তরুণ-যুবকরা এ মিলন মেলায় যুক্ত হয়ে ত্যাগ-তিতিায় উত্তীর্ণ আর কণ্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া গ্রাম নিবাসী বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী এরকম একজন যুবক ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক।

১৯৬৮ সালে পূর্বপাকিস্তানে তীব্র ছাত্র আন্দোলন সংঘটিত হলে স্কুলে পড়াকালীন অবস্থায় ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত হোন আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৬৯ সালে তিনি ফুলবাড়ীয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হোন। এ সময় উত্তাল গণআন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বকারী ভূমিকা পালনের জন্য স্বৈরতান্ত্রিক পাকিস্তান সরকার তাঁকে আটক করে। সামরিক আইনে তিনি ১ বছর কারাগার ভোগ করেন। ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৭০ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং নাসিরাবাদ কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস নির্বাচিত হোন। ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত থাকার মাধ্যমে ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে ময়মনসিংহে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তান সরকার জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে স্বীকৃতি না দিয়ে
পূর্ব পাকিস্তান জনগণের উপর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ
কালোরাত্রিতে নির্মম হত্যাকান্ড শুরু করে। শুরু হয়ে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধ। ছাত্রনেতা আব্দুর রাজ্জাক কোন দ্বিধাগ্রস্তে না ভোগে মহান মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মুজিব বাহিনীর সাব সেক্টর কুরিয়ার ইনচার্জ হিসেবে
তিনি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। ফুলবাড়ীয়ার লীপুর এম্বোস নামীয় সন্মুখ যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব প্রদান করেন, যা ময়মনসিংহ সেনানিবাসের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরতি রয়েছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুর একান্ত অনুসারী হিসেবে পুনগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের সাধারণ
সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ , সাবেক মাননীয় মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং সাবেক মাননীয় মন্ত্রী অধ্য মতিউর রহমানসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি ২ বছর কারা বরণ করেন। কারাগার থেকে বের হয়ে ১৯৭৯ সনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫১ ময়মনসিংহ-৬ ফুলবাড়ীয়া আসনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত নৌকার প্রার্থী হোন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের সাথে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বিভিন্ন সামাজিক কাজে ও পেশাগত কাজে অনুস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৯-১৯৯০ সাল পর্যন্ত ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রি কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেন। ১৯৮০ সনে তিনি
ফুলবাড়ীয়া থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি দুইবার গ্রেপ্তার হোন ও কারাবরণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সনে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ
আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হোন। ১৯৯১ সনে ময়মনসিংহ জেলা বারে আইনজীবি হিসেবে যোগদান করেন এবং আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির
কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৯৯০ সন থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত
বহুল প্রচারিত দৈনিক আজকের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে মুক্তিযুদ্ধের পরে শক্তির পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে পত্রিকাটি। বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের ধারাবাহিক প্রচার প্রোপাগান্ডায়
নিরবিচ্ছিন্ন ভূমিকা রাখছে আজকের বাংলাদেশ। এছাড়াও তিনি ফুলবাড়ীয়া সদরে অবস্থিত একমাত্র ফুলবাড়ীয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ময়মনসিংহ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাংগঠনিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জেলা কমিটির উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হওয়ার আকাঙ্খা পোষণ
করছেন আওয়ামী রাজনীতির নিরব এই কান্ডারী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *