“৯ অক্টোবরের মধ্যে মজুরি ঘোষণা না হলে শ্রমিক অসন্তোষের দায় নিতে হবে মজুরি বোর্ডকে”

স্টাফ রিপোর্টার: ৯ অক্টোবর মজুরিবোর্ডের মেয়াদকালের মধ্যে মজুরি ঘোষণা না হলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়াতে পারে। এই অসন্তোষের দায় নিতে হবে মজুরি বোর্ডকে। গতকাল ১ অক্টোবর ২০২৩ রবিবার মজুরি বোর্ডের ৩য় সভা উপলক্ষে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ হুঁশিয়ারী দেন‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন এর নেতৃবৃন্দ। সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১১টি গার্মেন্ট সংগঠনের জোট ‘মজুরি বৃদ্ধিতে গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন’এর সমাবেশে এ আহবান জানান নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাব থেকে বিক্ষোভ মিছিলসহ মজুরি বোর্ডের সামনে ২৫ হাজার টাকা মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। ‘‘মালিক স্বার্থে ইচ্ছে মতো মজুরি না, ৪০ লাখ শ্রমিকের খেয়ে পরে বাঁচতে ২৫ হাজার মজুরি চাই’’- এই দাবিসহ ৬৫% বেসিক, ১০% ইনক্রিমেন্ট এবং ৫ গ্রেডসহ ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়্। পরবর্তীতে বোর্ড এর ৩য় সভাতেও মজুরির প্রস্তাব না আসার খবর জানতে পেরে নেতৃবৃন্দ তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জোটের সমন্বয়ক এবং গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার। সমাবেশ পরিচালনা করেন জোটের সদস্য সচিব ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রর সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম। বক্তব্য রাখেন,গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শামীম ইমাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক রাজু আহমেদ, ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম মানিক ও সাধারন সম্পাদক প্রকাশ দত্ত ,গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ , বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা প্রদীপ রায় প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী মজুরি বোর্ডের ৬ মাস মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ অক্টোবর। অথচ আজ ৩য় সভায়ও মজুরি বিষয়ক কোন প্রস্তাবনা না করে শ্রমিকদের প্রতি মালিকপক্ষ ও বোর্ড চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বর্তমান বাজারে শ্রমিকদের জীবন যেখানে বেঁচে থাকা দায় সেখানে এই বিলম্ব শ্রমিককে আরো বেশী বিপদে নিক্ষেপ করবে। শ্রমিকের জীবনে দুর্দশা দূর করার বিষয়ে মালিকপক্ষের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই । আজকের কোন প্রস্তাবনা ছাড়া বোর্ড মিটিং সেটাই প্রমাণ করে। শ্রমিকদের জীবনের মূল্যর চেয়ে মালিকরা কেবল তাদের পুজি ও মুনাফা বৃদ্ধিতে ব্যস্ত বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ৪০ লাখ শ্রমিক আজ মজুরি বোর্ডের প্রস্তাবনা পাবার আশায় ছিলো। লাখো শ্রমিককে নিরাশ করেছে বোর্ড। গত বৈঠকে মালিকও শ্রমিক প্রতিনিধি উভয়ই ৩য় বৈঠকে মজুরি প্রস্তাবের আশ্বাস দিয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত আজ তারা কথা রাখেনি। দীর্ঘসূত্রিতার মাঝে শ্রমিকদের নতুন বেতন যত দেরী করে দেওয়া যায়, যত বঞ্চিত করা যায় সেটাই মালিকদের লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।

তারা বলেন, গত ১ বছরেরও বেশী সময় ধরে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবি করে আসছে শ্রমিকরা। কিন্তু ৯ এপ্রিল মজুরি বোর্ড গঠিত হলেও বোর্ড কোন কার্যকর ভূমিকা এখন পর্যন্ত নেয়নি। অতীতের মতো তারা শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণ নির্বাচন কেন্দ্রিক জটিল অবস্থায় ঠেলে দিয়ে সুবিধা পেতে চেষ্টা করছে। গত ২০১৮ সালেও মজুরি ঘোষণা করতে দেরী হওয়ায় তা ২০১৯ এ গিয়ে কার্যকর হয়। ২০১৮ এর ঘটনার পূণরাবৃত্তির মতো কোন ষড়যন্ত্র শ্রমিকরা কখনো মেনে নিবে না।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরের মজুরি নিয়ে বিদেশী লগ্নি পুঁজির মালিকরা এবং তাদের সাপ্লায়ার নামে এদেশীয় গার্মেন্টস মালিকরা সরকারকে ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম ষড়যন্ত্র কার্যকর রাখছে। পশ্চিমা লগ্নিপুঁজির মালিকদের সৃষ্ট শ্রমিক অঙ্গণে ক্রিয়াশীল তাদের দালালদের দিয়ে মজুরির আন্দোলন বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করার তৎপরতা চালাচ্ছে। মালিকদের স্বার্থের অনুকূলে তাদের মজুরির প্রস্তাব প্রচার করছে। এর বিপরীতে বাজারদরের সাথে সঙ্গতিরেখে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরির দাবি তুলে ধরে মালিক ও তাদের দালালদের স্বরুপ শ্রমিকদের কাছে তুলে ধরতে হবে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, ৯ অক্টোবর মজুরি বোর্ডের মেয়াদকালে মজুরি ঘোষণা না হলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে। ফলে যেকোন পরিস্থিতি সৃষ্টির শংকা রয়েছে। তাই লামছাম মজুরি ধরিয়ে দেবার নানা অপচেষ্টা থেকে বেরিয়ে দ্রুত ২৫ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ। একইসাথে ৬৫% বেসিক, ১০% ইনক্রিমেন্ট এবং ৭ গ্রেডের বদলে ৫ গ্রেডর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। এসব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *