বাংলাদেশে মার্কিন রাজনীতির ট্রাম্পকার্ড গার্মেন্টস শিল্প: শ্রমিক আন্দোলনকে একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির দ্বন্দ্বের শিকারে পরিণত করা যাবে না
(লেখাটি সাপ্তাহিক সেবা’য় প্রকাশিত হয়েছিলো। লেখাটির গুরুত্ব বিবেচনায় আজকের বাংলাদেশ পত্রিকায় প্রকাশ করা হলো)
গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সঙ্গে চীনের যে বৈরিতা প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করার ব্যাপারে বরাবরই একটা চাপ ছিল। কারণ আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বে ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। গত মার্চ মাসে ভারত সফর করার সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা নয়াদিল্লিতে তার বক্তব্যে এই অঞ্চলের জন্য একটি নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন, যেখানে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিসহ বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতার আহবান জানিয়েছিলেন। ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে ইন্দোপ্যাসিফিক রূপরেখাটি ঘোষণা করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইন্দো-প্যাসিফিক, অর্থাৎ ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ । এই অঞ্চলকে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কী হবে, সেটাই মূলত তুলে ধরা হয়েছে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা’ নামের ওই নীতিতে। অনেকের ধারণা তৈরি হয়েছিলো যে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবেলা করতে শেখ হাসিনা এই রূপরেখা তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনে তিনি পশ্চিমাদের আনুকূল্য পেতে পারেন। তবে শেখ হাসিনা গত বেশ কিছুদিন যাবৎ আমেরিকার সমালোচনায় সরব হয়ে উঠায় অনেকের মধ্যে তা কৌতূহলের জন্ম দিচ্ছে। শেখ হাসিনা যেভাবে দৃঢ় কণ্ঠে ক্রমাগত আমেরিকার সমালোচনা করছেন, তাতে অনেকে বেশ অবাক হচ্ছেন। প্রকাশ্যে এই সমালোচনার সূত্রপাত হয়েছিল এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে ভাষণ দেবার সময় । সর্বশেষ লন্ডনে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারেও তিনি আমেরিকার সমালোচনা করতে পিছ-পা হননি। এতে বাংলাদেশ যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অংশীদার হয়েছে এবং অনেক বিশেষজ্ঞ ওই প্রকল্পকে চীনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সঙ্গে তুলনা করেন তা আবার অনেকে স্মরণ করছেন। এমনি পরিস্থিতিতে ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর)-এর প্রতিনিধিরা। ইউএসটিআরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী ব্রেনডেন লিঞ্চের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি দল, ব্যবসায়িক প্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। এসব বৈঠকের মাধ্যমে এ অধিকারের সুরক্ষা বিশেষত ডাটা প্রটেকশন আইনের ধারাগুলোর অস্পষ্টতা দূর করার তাগিদ দিয়েছেন, নাম সংগঠনগুলোর স্বাধীন, তাদের দরকষাকষির অধিকার, জোরপূর্বক শ্রম, শিশুশ্রম, কর্মস্থলের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার পথনকশা অনুযায়ি শ্রম আইন সংশোধন এবং বিধিমালা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছেন। ইউএসটিআর এর প্রতিনিধিদের তৎপরতার মধ্যে মূলত গার্মেন্টস সেক্টরকেই ফোকাস পেতে দেখা যায়। কুটনৈতিক সূত্রগুলো থেকে জানা যায় আগামীতে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নির্ভর করবে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির ওপর। হঠাৎ করে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উদ্বেগের বিষয়গুলো শুধরে নিতে বাংলাদেশকে সময় দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যেমনটি করা হয়েছিলো জিএসপি বাতিলের আগে থানা প্লাজার ভয়ানক ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের বর্বরতার দৃশ্য সারাবিশ্বের সামনে উন্মোচিত হয়ে গেলে তখন গার্মেন্টস শিল্পের ইউরোপ-আমেরিকার একচেটিয়া পুঁজির মালিকদের নির্মম শোষণকে আড়াল করতে বাংলাদেশের উপর বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স শর্ত আরোপ করা হয়। এসব আরোপিত শর্ত না মানলে বাংলাদেশকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের হুমকি এবং একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট) চুক্তি স্বাক্ষরের চাপ দেয়া হয়। অর্থাৎ গার্মেন্টস শিল্পকে ট্রাম্পকার্ড বানিয়ে বরাবরই মার্কিন রাজনীতির নিরংকুশ প্রভাব যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় তা স্পষ্ট।
অনেকের উদ্বেগের বিষয় ছিলো যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে তার গার্মেন্টসের বিশাল বাজার হারাবে। তাই এই বাজার রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অতি তাড়াতাড়ি টিকফা চুক্তি সম্পাদন করা উচিত। এ বিষয়ে প্রচারণার দিকটি এরকম যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অর্থ দেয়, খাদ্য দেয়, নানা রকম সুবিধা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এসব না দিলে বাংলাদেশ ডুবে মরবে। তাই তার কথা অমান্য করা যাবে না। আসলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যা দেয় তারচেয়ে অনেকগুণ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে গড় আমদানি, শুল্ক হার যেখানে শতকরা ১ ভাগের মতো, সেখানে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের ওপর শুল্কহার শতকরা গড়ে ১৫ ভাগ, কোনো কোনো পণ্যে আরও বেশি। আন্তর্জাতিক অর্থ ই তহবিল (আইএমএফ) এর ভাষ্য অনুযায়ী, শিল্পায়িত দেশগুলোর বেশির ভাগ আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কম থাকলেও কৃষি, শ্রমঘন পণ্য যেগুলো গরিব দেশ থেকে আসে, তার অনেকগুলোর ওপরই মার্কিন শুল্কহার অস্বাভাবিক রকম বেশি । গড় শুল্কহারের চেয়ে কখনো কখনো ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। কাপড় ও জুতার ওপর আমদানি শতকরা ১১ থেকে ৪৮ ভাগ। বাংলাদেশ থেকে মূলত যা রপ্তানি করা হয়। তারপরও বাংলাদেশের কোন সরকারই কেন মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারে না? শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনায় এত সরব হওয়ার পরও একটি প্রতিনিধি দল শ্রম শিল্পের বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে সরকারকে তুড়ি মেরে চলে গেলো, তার কিছুই করতে পারলো না কেন? বরঞ্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নতজানু হয়ে প্রার্থনা শুরু করলেন, মার্কিনীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক বলে। আসলে উপরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট। উপরে উপরে যত হম্বিতম্বি দেখানোই হোক তলে তলে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। উন্নয়নের নামে যত মেগা প্রজেক্ট দেখানোই হোক না কেন, আসলে দেশে কোন টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি নেই। মূলত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে বিদেশী লগ্নীপুঁজির উপর ভর করে। দেশীয় শিল্প অর্থনীতির কোন ভিতই এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা পায়নি । যার উপর ভিত্তি করে এদেশের সরকার বিদেশী লগ্নিপুঁজির প্রতিনিধিদের সাথে বার্গেইনিং করতে পারবে। বরং বিদেশী লগ্নিপুঁজি এদেশকে শোষণের মূগয়াক্ষেত্রে পরিণত করে লুটপাট করে যা নিয়ে যাচ্ছে তার এদেশীয় খাদেমদার হিসেবে শাসকগোষ্ঠী লুটপাটের কিছু অংশ ভোগ করছে। ফলে একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দক্ষিণা নিয়ে এদেশে টিকে আছে যে শাসকগোষ্ঠী তাকে মার্কিন একচেটিয়া পুঁজির প্রতিনিধিরা যত চোখ রাঙ্গানিই দিক কাচুমাচু ভঙ্গিতে তাদের হজম করা ছাড়া আর বিকল্প নেই । তবে উপমহাদেশের আশপাশের অন্যদেশগুলিও এরকম একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির উপর নির্ভর নয়া-ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা কায়েন থেকেও তারা একটি নির্দিষ্ট সেক্টরের কাছে জিম্মি না হয়ে একাধিক পথ খোলা রাখছে, যাতে বাইরের চাপ এড়ানো যায়। যেমন ভারত, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের মত দেশগুলোর রপ্তানি আয়ের জন্য একক সেক্টরের উপর নির্ভর নয়। ইউএন কমট্রেডের ২০১৮ সালের এক তথ্য অনুসারে ইন্ডিয়ার মোট রপ্তানি আয়ের প্রধান তিনটি পণ্য এবং অবদান হল জ্বালানি ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ, কেমিক্যালস ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, মূল্যবান পাথর গ্লাস ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। থাইল্যান্ডের মোট রফতানি আয়ের প্রধান তিনটি পণ্য এবং তাদের অবদান হল মেশিন ও ইলেকট্রনিক্স ৩০ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ভেহিকেল ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ, প্লাস্টিক এবং রাবার ১২ শতাংশ ০৭ শতাংশ, ফিলিপিনসের মোট রফতানি আয়ের প্রধান তিনটি পণ্য এবং তাদের অবদান হল- মেশিন অ্যান্ড ইলেক্ট্রোনিক্স ৬৩ শতাংশ, ভেজিটেবল ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ, ভেহিকলস ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গার্মেন্টস ও টেক্সটাইলস ৮৭ শতাংশ, ফুটওয়্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ, এর মধ্যে শুধু গার্মেন্টস পণ্যের হিসেবে এই অংশ ৮৪ শতাংশ এর বেশি। অর্থাৎ অন্যান্য দেশের মোট রপ্তানি আয়ে তাদের প্রধান তিনটি রপ্তানি পণ্যের মিলিত অবদানও বাংলাশের মোট রপ্তানি আয়ে তার প্রধানতম পণ্যটির অবদানের ধারে কাছেও নেই। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাংলাদেশে প্রধান রফতানি পণ্যের তালিকার অন্য কোন পণ্যের অবদান ৫ শতাংশও নয়। এই তথ্যগুলি এটাই নির্দেশ করে যে, বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রায় সম্পূর্ণটাই আসে গার্মেন্টস সেক্টর থেকে। শিল্পজাত পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে একটি পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা কোন দেশেরই নেই। তারপরও বাংলাদেশের শিল্প খাতের নিয়োজিত শ্রমশক্তির সংখ্যা কৃষি এবং সেবা খাতের তুলনায় বেশ কম। বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের যে অংশ অবস্থিত তাতে বাংলাদেশ মূলত এই খাতের ম্যানুফাকচারিং-এর সাথে জড়িত। আর এই পণ্যগুলোর ডিজাইন এবং মার্কেটিং এর কাজটি সাধারণত পশ্চিমা ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা তাদের প্রতিনিধি কোন প্রতিষ্ঠান করে থাকে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশে তাদের পণ্যের বৈচিত্রতা থেকে শুরু করে প্রোডাকশান আপগ্রেডিং-এর মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছুটা আধুনিক করেছে মাত্র। গার্মেন্টস সেক্টরে রপ্তানির আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির কথা বলা হলেও এই রফতানি আয়ের কত টাকা এই খাতের কাঁচামাল বা মেশিনারি আমদানি করতে ব্যয় হচ্ছে সরকার এই খাতে কত সহায়তা দিচ্ছে, কর্মীদের জীবনমানের উন্নয়ন কেমন হচ্ছে সে হিসেব সামনে আনা হয় না। তাছাড়া এই সেক্টরের স্পিলওভার ইফেক্ট কি তৈরি হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। তবুও হারাধনের একমাত্র পুতের জীবন রক্ষায় যখন তখন শাসানি হজম করতে হচ্ছে সরকারকে। কারণ বাংলাদেশের আরএমজি’র প্রায় ৯০ ভাগ পণ্য রপ্তানি করতে হয় ইউরোপ-আমেরিকায়। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই গার্মেন্টস সেক্টরকেই গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চায় পশ্চিমা শক্তি।
তবে লক্ষণীয় বিষয় – শ্রম অধিকার-সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম রোধে শ্রমিকদের আরও সংগঠিত ও সোচ্চার হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যায় ইউএসটিআরের প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধি দল ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি বিশেষত তাদের অধিকারের পক্ষে সরব ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা করে শ্রমিকদের প্রতি এই আহ্বান জানান তারা। শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে ইউএসটিআর কার্যালয়ের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রিয়ান লুটি, ইউএসটিআরের উপসহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেনডন এলভিনচ, দক্ষিণ এশিয়ায় ইউএসটিআরের পরিচালক মাহনাজ খান, রিজিওনাল আইপি অ্যাটাচে জন ক্যাবেকা, দক্ষিণ এশিয়ায় সিনিয়র লিগ্যাল আইপি কাউন্সেল শিল্পি ঝা, ইউএস প্যাটেন্ট অ্যান্ড ট্রেডমার্ক অফিসের প্যাটেন্ট বিশেষজ্ঞ রাহুল দাস, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ইকোনমিক ইউনিটের প্রধান যোসেফ গিবলিন, অর্থনৈতিক/বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ শীলা আহমেদ এবং পলিটিক্যাল/ইকোনমিক সামার অ্যাসিস্ট্যান্ট এমা ফেহরম্যান । আর বাংলাদেশের শ্রমিক নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রাশেদুল আলম রাজু, বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সালাহউদ্দিন স্বপন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ওয়াকার্স ফেডারেশনের সভাপতি কল্পনা আক্তার। জনাব রাজেকুজ্জামান ছাড়া অনারা সবাই পূর্ব থেকে পশ্চিমা লাইনের ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ডের সাথে সম্পর্কিত বলে পরিচিতি রয়েছে। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ডব্লিউএফটিইউ’র সাথে সম্পর্কিত বলে জানা যায়। সংগঠনটির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও অতিথি হিসেবে ডাব্লিউএফটি-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত থাকেন। তাছাড়া স্কপের উদ্যোগে দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের জুটমিলের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ও পরবর্তীতে চায়না গণমাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে জনাব রাজেকুজ্জামান রতন চীনা সরকারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। ফলে ইউএসটিআরের প্রতিনিধিদের সাথে তাঁর উপস্থিতি শ্রমিক অঙ্গনে কৌতূহলের জন্ম দেয়। গার্মেন্টস সেক্টরে মজুরি ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন দিক দিয়ে বিভিন্ন সরব তৎপরতা রয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিদের বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে সরকারের সাথে আপসরফা না হলে গার্মেন্টস মুভমেন্টের উপর প্রভাব তৈরি করবে। সে কারণে আগাম বার্তায় শ্রমিকদের সংগঠিত ও সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রতিনিধিদল। মজুরির ইস্যুই তাদের এক টার্গেট হতে পারে। প্রশ্ন হলো মজুরির ইস্যুসহ কর্মপরিবেশ গার্মেন্টস সেক্টরের একটি জীবন্ত সমস্যা। এ বিরুদ্ধে শ্রমিকরা বিভিন্ন রূপের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু এই আন্দোলনে একচেটিয়া লগ্নিপুঁজির যে কোন পক্ষের প্রভাব তৈরি হওয়া শ্রমিক আন্দোলনকে তার লক্ষ্য অর্জনে বিপদগামী করবে। আরাএমজি সেক্টর নিয়ে বাংলাদেশ সরকার পশ্চিমা প্রভাব হওয়ার মুক্ত হওয়ার জন্য চীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু শ্রমিক আন্দোলনে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আইটিইউসি, রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ডব্লিউএফটিইউ বা চীনা ট্রেড ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে উঠলে তা প্রকৃত শ্রমিক আন্দোলনকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এ ব্যাপারে দেশের শ্রমিক নেতা বা ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে অধিকতর সতর্ক থেকে তৎপরতা চালানোর বিকল্প নেই। কেবল শ্রমিক শ্রেণির নিজস্ব শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলনই একমাত্র শ্রমিকদের প্রকৃত স্বার্থ প্রতিষ্ঠা ও সার্বিক মুক্তি দিতে পারে।
(সূত্র: সেবা- ৪৩ বর্ষ ॥ সংখ্যা ০২ | রবিবার ৷ ০৪ আষাঢ় ১৪৩০ বাংলা, ১৮ জুন ২০২৩)