বেইলী ব্রীজ ভেঙ্গে লরি ও প্রাইভেটকার নদীতে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ মামলা, উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন

এইচ এম জোবায়ের হোসাইন, ত্রিশাল প্রায় ১২০টন ওজনের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বাহি লরির ভার বহন করতে না পেরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট নামক এলাকায় খিরু নদীর উপরের বেইলী ব্রীজটি ভেঙে যায়। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারটির ওজন ছিল ৮০টন। এসময় লরি ও প্রাইভেটকার নিচে পড়ে যায়। এ ঘটনায় চারজন আহত হয়।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন সড়ক ও সেতু বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ হয়েছে মর্মে ত্রিশাল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভাঙ্গা সেতুটি যেন জনসাধারনের জন্য ঝুকিপূর্ণ না হয় এবং জনসাধারন যেন দুর্ঘটনাকবলিত স্থানে যাতায়ত না করে তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালনের জন্য আনসার মোতায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জানাযায়, ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট নামকস্থানে একটি ৪২ চাকার লরি গাড়ি ১২০টন লোডের ওজনের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার নিয়ে গত বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহে যাচ্ছিল। লরিটি মহাসড়কের চেলেরঘাট বেইলি ব্রিজের মাঝখানে গেলে ব্রিজটি ভেঙে খিরু নদীতে পড়ে যায়। এ ঘটনায় পাঁচজন আহত ছাড়া বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মহা সড়কের আইন অনুযায়ী লরি গাড়িটি সর্বোচ্চ ৪০টন ওজন পরিবহন কথা থাকলেও ওই লরিটির চালক অনেক বেশি ওজনের ট্রান্সফর্মার বহন করার কারণে ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ে যায়। এ ঘটনায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ভালুকা সড়ক উপ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল হালিম বাদী হয়ে অজ্ঞাত লরি চালকের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে মর্মে ত্রিশাল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মহাসড়ক আইন অনুযায়ী লরিদ্বারা সর্বোচ্চ ৪০টন ওজন পরিবহন করার কথা থাকলেও ওই লরি চালক অনেক বেশি ওজনের ট্রান্সফরমার বহন করায় ব্রিজটি ভেঙে যায়। অধিক ওজনের মালামাল বহন করে সরকারী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধান হওয়ায় এবং জন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে বলেও মামলায় বাদী আব্দুল হালিম উল্লেখ করেন।

অপরদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সড়ক ও সেতু বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ঘনটাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তারা দুর্ঘটনার কারনগুলো চিন্থিত করার চেষ্টা করেন। একই সাথে কোন প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রিজটি মেরামত করে সড়কটি চালু করা যায় সে বিষয়েও পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

পরিদর্শন প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ শাহাদাত হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী এমডি মোঃ গোলাম মোস্তফা, ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন প্রমূখ। এসময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, ভেঙে যাওয়া সেতুতে ও আশপাশে উৎসুক জনতা ভীর করছে। আবার কেউ ভাঙা ওই ব্রিজের মাঝেও যাচ্ছে বা যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ সমস্যা সমাধানে উপজেলা আনসার ভিডিপির মাধ্যমে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আনসার চাওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই আনসার মোতায়েন করা হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.বি.এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, ব্রীজটি ঝুকিপূর্ন ছিলনা তাই ঝুকিপূর্ন বিলবোর্ড লাগানোর প্রশ্নই আসেনা। মহাসড়কের মধ্যে যে কয়টি ব্রীজ রয়েছে সবগুলো ৪০ টন পর্যন্ত পরিবহনের সক্ষম। এর বেশী কেউ পরিবহন করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয় তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতে ও গাফিলতির কারনে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যে এক্সপার্ট টিম সরজমিনে কাজ করছে, যদি মেরামত যোগ্য হয় তাহলে তাই করা হবে নতুবা নতুন ব্রিজ নির্মান করতে হবে বলে তিনি জানান।

পিজিটিপি ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল হক বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী আমাদের কাছে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে তা চালু করে দেয়ার দায়িত্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি ট্রানফরমার বিকল হয়ে যাওয়ায় ৮০ এমবিএর এই ট্রান্সফরমারটি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।

ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দিন জানান, ব্রীজ ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বাদী হয়ে গাড়ি চালককে আসামী করে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতি স্বাধনের একটি অভিযোগ দিয়েছে। যা আমরা প্রাথমিকভাবে এফআইআর হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করেছি। আমরা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবো। তবে মহাসড়কের বিকল্প লেন দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ হাফেজ মাওলনা রুহুল আমিন মাদানী বলেন, মহাসড়কটি ফোরলেন হওয়ায় আর ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও একমাত্র ব্রিজটিও ঝুকির মধ্যে পরতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত সংস্কার বা মেরামত করতে না পারে বা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করতে হয় তাহলে নদীর মাঝখানে বড় উন্নত মানের রিং দিয়ে মাটি ভরাট করে আপাতত যান চলাচলের উপযোগী করা যেতে পারে। তাতে করে অপর ব্রিজটি আর ঝুকির মধ্যে পড়বে না।

উল্লেখ্য; ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট নামকস্থানে ১৯৮৯ সালে খিরু নদের ওপর নির্মাণ করা হয় ওই বেইলী ব্রিজটি। চারলেনের মহাসড়কের দুইলেন ওই বেইলী ব্রিজ দিয়ে অপর দুইলেনের জন্য নতুন একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *