ময়মনসিংহ এনডিএফ’র উদ্যোগে ফ্রিডরিখ এঙ্গেলসের মহাপ্রয়াণ দিবস উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার:  মার্কসবাদের ক্ষেত্রে কার্ল মার্কসের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের ১২৬তম মহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ ময়মনসিংহ জেলার উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির জেলা সভাপতি মাহতাব হোসেন আরজুর সভাপতিত্বে ৫ আগস্ট বিকাল ৫ ঘটিকায় জেলা কার্যালয় পাটগুদাম র‌্যালীর মোড়ে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সভাপতি এডভোকেট হারুন-অর-রশিদ, ট্রেড ইউনিয়ন সংংঘের সহ-সভাপতি হযরত আলী, সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, প্রচার সম্পাদক সারোয়ার হোসেন সুমন, অর্থ-সম্পাদক গৌরাঙ্গ সরকার, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী মির্জা আরাফাত জাহান , জাতীয় ছাত্রদলের আহবায়ক সুমাইয়া আক্তার শাপলা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, মার্কস ও এঙ্গেলসের দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমানে আত্মমুক্তি-সংগ্রামী সমস্ত প্রলেতারিয়েত আয়ত্ত করেছে, কিন্তু ৪০- এর দশকে যখন দুই বন্ধু তৎকালের সমাজতান্ত্রিক সাহিত্য ও সামাজিক আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলেন তখন এ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একেবারেই অভিনব।

নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রুশীয় রাজ্যের রাইন প্রদেশের বার্মের শহরে ১৮২০ সালে এঙ্গেলস জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন কারখানা মালিক।১৮৩৮ সালে সাংসারিক কারণে এঙ্গেলস উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ না করেই ব্রেমনের সওদাগরী হৌসে কর্মচারী হিসেবে ঢুকতে বাধ্য হন। বাণিজ্যের কাজের মধ্যেও নিজের বৈজ্ঞানিক ও রাজনৈতিক শিক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে এঙ্গেলসের বাধা হয়না। ছাত্র হিসাবেই তিনি স্বৈরাচার ও আমলাদের স্বেচ্ছাচারিতা ঘৃণা করতে শুরু করেন।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মার্কসের দিক থেকে ‘পুঁজি’ আমাদের যুগের মহত্তম অর্থশাস্ত্রীয় রচনা, আর এঙ্গেলসের দিক থেকে ছোট বড় একসারি বই। পুঁজিবাদী অর্থনীতির জটিল ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করেন মার্কস। আর অতি সহজ ভাষায়, প্রায়ই বিতর্কমূলক রচনায় সাধারণ বৈজ্ঞানিক সমস্যা এবং অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে ইতিহাসের বস্তুবাদী বোধ ও মার্কসের অর্থনৈতিক তত্ত্বের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখেন এঙ্গেলস। এঙ্গেলসের এইসব রসনার মধ্যে উল্লেখ করব: দুরিং এর বিরুদ্ধে বিতর্কমূলক রচনা (এখানে দর্শন, প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের বড় বড় প্রশ্ন আলোচিত হয়েছে)** ‘পরিবার, ব্যক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি'( রুশ ভাষায় অনুবাদ,সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে প্রকাশিত,৩য় সংস্করণ,১৮৯৫), ‘লুদভিগ ফয়েরবাখ'(প্লেখানভের টীকা সহ রুশ অনুবাদ, জেনেভা,১৮৯২), রুশ সরকারের বৈদেশিক নীতির উপর প্রবন্ধ (জেনেভার ‘সোশ্যাল-ডেমোক্র্যাট’ পত্রিকার ১ম ও ২য় সংখ্যায় রুশ ভাষায় অনূদিত), বাসস্থান সমস্যা নিয়ে চমৎকার প্রবন্ধাবলী, এবং পরিশেষে, রাশিয়ার অর্থনৈতিক বিকাশ সম্পর্কে ছোট হলেও দুটি অতি মূল্যবান নিবন্ধ (‘রাশিয়া প্রসঙ্গে ফ্রেডারিক এঙ্গেলস’ ভ ই জাগুলিচ কর্তৃক রুশ ভাষায় অনূদিত, জেনেভা,১৮৯৪)। মার্কস মারা যান, পুঁজি বিষয়ে তাঁর বৃহৎ রচনা সম্পূর্ণরূপে গুছিয়ে যেতে পারেননি।খসড়া হিসেবে তা অবশ্যই তৈরী হয়ে গিয়েছিল। বন্ধুর মৃত্যুর পর ‘পুঁজির’ দ্বিতীয় ও তৃতীয় খন্ড গুছিয়ে তোলা ও প্রকাশনের গুরুভার শ্রমে আত্মনিয়োগ করলেন এঙ্গেলস। ১৮৮৫ সালে তিনি প্রকাশ করেন দ্বিতীয় এবং ১৮৯৪ সালে তৃতীয় খন্ড (চতুর্থ খন্ড গুছিয়ে যেতে পারেননি তিনি)। এই দুই খন্ড নিয়ে খাটতে হয়েছে অনেক।অষ্ট্রীয় সোশ্যাল ডেমোক্রেট আদলের সঠিকভাবেই বলেছেন যে, ‘পুঁজির’ ২য় ও ৩য় খন্ড প্রকাশ করে এঙ্গেলস তাঁর প্রতিভাবান বন্ধুর যে মহনীয় স্মৃতিস্তম্ভ গড়েছেন তাতে তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও অক্ষয় অক্ষরে তাঁর নিজের নামটাও খোদিত হয়ে গেছে।সত্যই ‘পুঁজির’ এই দুই খন্ড হল মার্কস ও এঙ্গেলস এই দুই জনের রচনা।পুরাকথায় বন্ধুত্বের অনেক মর্মস্পর্শী দৃষ্টান্তের কাহিনী শোনা যায়। ইউরোপীয় প্রলেতারিয়েত এ কথা বলতে পারে যে, তাদের বিজ্ঞান গড়ে দিয়ে গেছেন এমন দুই মনীষী ও যোদ্ধা যাদের পরস্পর সম্পর্ক মানবিক বন্ধুত্বের সর্বাধিক মর্মস্পর্শী সমস্ত প্রাচীন কাহিনীকেও ছাড়িয়ে যায়। এঙ্গেলস সর্বদাই, এবং সাধারণত অতি সঙ্গতভাবেই নিজেকে রেখেছেন মার্কসের পেছনে। তাঁর এক পুরনো বন্ধুর কাছে তিনি লেখেন, ‘মার্কস থাকলে আমি দোহারের কাজ করেছি’। জীবিত মার্কসের প্রতি ভালোবাসায় এবং মৃতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধায় তাঁর সীমা ছিল না। রুক্ষ যোদ্ধা ও কঠোর এই মনীষীর ছিল এক গভীর স্নেহশীল হৃদয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *