নান্দাইলে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত কৃষক
শামছ ই তাবরীজ রায়হান
ময়মনসিংহের নান্দাইলে পাট ধোয়া ও শুকানোর কাজ পুরুদমে শুরু হয়েছে উপজেলার সর্বত্র।পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষি।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন তারা। সোনালী আঁশের সোনালী রঙে ভরে গেছে কৃষকের ঘর।এলাকার কৃষক- কৃষাণি রাস্তাঘাট, মাঠ, ক্ষেতের আল, ডোবায়, নদীর তীরে ও বাড়ির আঙিনায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন।
চলতি মৌসুমে নান্দাইলে বিভিন্ন গ্রাম ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ব্যাপকভাবে সোনালী আঁশের আবাদ হয়েছে। দেশে সার,বীজ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ কম ও অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সোনালী আঁশের ফলন অধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের হাট-বাজারে পাটের দাম অধিক ও কম খরচে পাটের অধিক ফলন হওয়ায় সোনালী আঁশের সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করেন স্থানীয় পাট চাষীরা এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চলের সমতল ও অসমতল জমিতে এ বছর পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৯৫ হেক্টর জমিতে। তন্মধ্যে দেশীয়, তোষা, মেশতা ও অন্যান্য জাতের পাট রয়েছে।
মৌসুমের শুরুতে পাট বিক্রি করে ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকেরা। ফলনও হয়েছে ভালো। উপজেলার হাট বাজার গুলোতে প্রতি মন পাট ৩০০০ টাকা থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাইকাররা বাড়ি বাড়ি গিয়েও পাট কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। তাই ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পেয়ে বিগত বছর গুলোতে লোকসানে পড়া কৃষকদের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটে উঠেছে।
উপজেলার বীরকামট খালী,লোহিতপুর, চরকামট খালী,চরকোমরভাঙ্গা,হাটশিরার চরাঞ্চল,কালিবাড়ির চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,রাস্তার দুই পাশে পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত কৃষক। তবে এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরই পাটের আঁশ ছাড়াতে দেখা যায়।
হাটশিরা চরাঞ্চলে পাটের আঁশ ছাড়ানোয় ব্যস্ত খাদিজা,রাহিমা,রোখেয়া বলেন, আমরা এখানে কাজ করছি পাটখড়ির জন্য। পাটের আঁশ ছাড়ালে পাটখড়ি আমি পাব। দিনে ৫০ থেকে ৬০ আঁটি পাটের আঁশ ছাড়াতে পারি। এতে মালিকের লাভ, আমরারও লাভ।
পাট চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বিঘা জমিতে চাষ,সেচ,রাসায়নিক সার প্রয়োগ,পাট কাটা, শুকানোসহ খরচ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় লাভ হবে ৫/৬ গুণ। গত বছর বিঘাপ্রতি ৭/৮ মণ পাট পাওয়া গেছে। কিন্তু এবার ফলন ভালো হওয়ায় বিঘাপ্রতি১০/১২ মণ পাট পাওয়া যাবে। পাট চাষী জুম্মর ব্যাপারী,শহীদ উল্লাহ, কাশেম,রুহুল, কামরুলসহ আরো অনেকেই জানান,৩২০০ টাকায় বিক্রি করেছি প্রতি মন পাট। এর আগে কখনো এত দামে পাট বিক্রি করিনি। এইবার পাটের বাম্পার ফলন অইছে। পাটের এ দাম ঠিক থাকলে আগামীতে পাটের চাষ আরো বাড়বো।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে দেখাশোনা করায় ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকী কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ায় তারা আরও বেশী উদ্বুদ্ধ হয়েছে।বর্তমানে বাজারে পাটের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে পাট চাষ দিন দিন বাড়ছে।