বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সারোয়ার চৌধুরীর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

Staff Reorter: জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলার সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের জেলা সহ-সভাপতি সারোয়ার চৌধুরীর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা কার্যালয় পাটগুদাম র‌্যালীর মোড়ে বিকাল ৫ ঘটিকায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ ময়মনসিংহ জেলা কমিটি কর্তৃক আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভাপতি বিমান সরকার এবং সঞ্চালনা করেন ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের নেতা রবিদাস।

এছাড়া স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সভাপতি এডভোকেট হারুন- হারুন-অর-রশিদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ’ র জেলা সভাপতি মাহতাব হোসেন আরজু, সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন, নারী সাংবাদিক সংঘের আহবায়ক বাবলী আকন্দ, সমাজ রুপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ তানসেন, জাতীয় ছাত্রদলের আহবায়ক সুমাইয়া আক্তার শাপলা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, লেখক ও শিল্পীরা জীবনের দৈনন্দিন ঘটনাকে কেন্দ্রীভূত করেন, সেগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও সংগ্রামকে প্রতিনিধিত্বশীল রূপ দেন এবং এমন ধরনের শিল্প সৃষ্টি করেন-যা জনগণকে জাগ্রত করে। জনগণের মধ্যে উৎসাহের আগুন জ্বালায় এবং পরিবেশকে বদলানোর জন্যই একতাবদ্ধ হতে ও সংগ্রাম করতে বাধ্য করে। বিভিন্ন দুর্বলতা সত্ত্বেও সাররোয়ার চৌধুরী এ কাজটি নিপুণভাবে করার চেষ্টা করেছেন। তিনি গ্রামে গ্রামে বা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে যেমন বিভিন্ন লোকজ ও সমকালীন সাংস্কৃতিক উপাদান গুলিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন, তেমনি খেটে খাওয়া মানুষের বাস্তব জীবন উপলব্ধিতে নিয়ে ও শিল্পের দায় থেকে তৈরি করেছেন বিভিন্ন শিল্পকর্ম। ময়মনসিংহ চরাঞ্চলের মানুষদের ভূমি অধিগ্রহণের নামে বসতভিটা ও জমি থেকে উচ্ছেদের প্রেক্ষাপটে তিনি প্রতিবাদী গান ও পথনাটক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন চরাঞ্চলের হাজার হাজার অসহায় মানুষের পাশে। আবার রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিপীড়নের সময় রোহিঙ্গা জাতিসত্বা সহ সকল জাতিসত্বা তথা জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের অংশ হিসেবে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত করেছেন প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ, গান ও কবিতা।
উল্লেখ্য যে, গত শতাব্দীর ৪০-এর দশকের শেষের দিকে ময়মনসিংহের একটি সাংস্কৃতিক পরিবারে সারোয়ার চৌধুরীর জন্ম। তাঁর পিতা প্রয়াত বজলুর রহমান চৌধুরী ময়মনসিংহ মূক-বধির স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। মাতা ইজামন নেছা। তাঁর অন্যান্য ভাইবোনেরাও সংস্কৃতি ও ক্রীড়া জগতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। সারওয়ারচৌধুরী বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘদিন লোকজ সাহিত্য সঙ্গীত সংগ্রাহকের কাজ করেছেন। তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সঙ্গীত পরিচালক ও স্ক্রিপ্ট রাইটারের কাজ করেছেন। নজরুল ও লোক গবেষক হিসেবে তিনি সৃজনশীল প্রতিভার পরিচয় দেন। বহু নৃত্যনাট্য, নাটক রচনা ও পরিচালনা করেছেন। কখনো সুরকার, কখনো যন্ত্রশিল্পী, কখনো প্রাবন্ধিক, কখনো বা গীতিকার, কবি, নাট্যকার -এরকম বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী সারোয়ার চৌধুরী। সাহিত্য সংগীতের বিভিন্ন শাখায় অনায়াসে বিচরণ করেছেন নিজের মতো করে। ময়মনসিংহের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত বছর পূর্তিতে এবং বড় বড় খেলার আসরে তার রচনা ও সুরারোপ করা থিম সং পরিবেশিত হয়েছে। বিদ্রোহী কবি নজরুল বিষয়ে তার নৃত্যনাট্যসমূহ এবং লোকজ বিষয়ে রচনা ও পরিবেশনাগুলো সুধী মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর রচিত দুখু বন্দনা “দুখু দুখু দুখুরে” গানটি এবং “ক্ষুদিরাম” নাটকটি ইউটিউব এর মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ায় দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ময়মনসিংহ বিধৌত ব্রহ্মপুত্রকে নিয়ে রয়েছে তাঁর শতাধিক “মরমি গান”। এছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য মঞ্চায়িত নাটকগুলো হচ্ছে ঃ ফেরারি জবানবন্দী, কাক-তাড়ুয়ার পালা, এখনো মীরজাফর (পুরস্কারপ্রাপ্ত), লিলি পাগলি-হান্টার ওয়ালি, খুশি বিবি, ঘর-শত্রু, শিকার, চলো স্কুলে যাই, গাইনের গীত (লোকনাটক)। মঞ্চায়িত নৃত্যনাট্য হচ্ছে ঃ যদি আর বাঁশী না বাজে, উড়া পঙ্খির দ্যাশে, জহর বেদের পালা, মধুমালা, জননী-বর্ণমালা এবং মিউজিক্যাল ড্রামাঃ বনের জলসায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *