নান্দাইলে ভাই-বোনের পুকুরের গর্ভে বিলীন হচ্ছে আবাসনের ঘর

নান্দাইল প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের ভাটি চারিয়া আবাসন প্রকল্পের ২০টি পরিবারের বসতঘর আজ ভাঙ্গনের মুখে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদির ও সহোদর বোন জেসমিন আক্তারের ব্যক্তিগত পুকুরের গর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে আবাসনের ঘরগুলো। তবে উক্ত পুকুরের মালিকগণ স্থানীয় বর্তমান ইউপি সদস্য বাবুল মিয়ার নিকট আত্মীয় হওয়ায় এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ করেও এর কোন সুরাহা হয় নি। দিন দিন পুকুরের পাড় ভাঙ্গনের ফলে স্থাপনাগুলো আজ হুমকীর মুখে। পাশাপাশি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা নানাবিধ সমস্যায় দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, প্রায় বিশ বছর আগে সরকারিভাবে ভাটি চারিয়া গ্রামে খাস জমিতে এই আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। বাস্তহারা ও হতদরিদ্র ২০টি পরিবার এই আশ্রয়ন প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাই পায়। আশ্রিত হয়ে ভালোই দিন কাটছিল আবাসনের বাসিন্দাদের। কিন্তুু দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই আবাসনের বাসিন্দাদের সাথে প্রতারণা সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে যাচ্ছে। আশ্রয়ণের উত্তরদিকে রয়েছে ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য বাবুল মিয়ার চাচাত ভাই আব্দুল কাদির ও সহোদর বোন জেসমিন আক্তারের দুটি ব্যক্তিগত বড় পুকুর রয়েছে। মাছ চাষ দেখাশুনা করাসহ মালামাল রাখার একটি গুদামঘরও তৈরী করেন আবাসনের জায়গায়। সেসব পুকুরের পাড় ভেঙ্গে আবাসনের বসতঘর পর্যন্ত চলে গেছে। অনেকের ঘরের ভিটি পুকুরে বিলীন হবার পথে। কেউ কেউ বাঁশের খুঁটি পুঁতে ভিতরে বালির বস্তা ফেলে নিজেদের মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বনকে রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বর্ষায় তাদের ঘর ভেঙ্গে পুকুরে বিলীন হয়ে যাবার ভয়ে আশ্রিতরা আতঙ্কিত। অন্যদিকে প্রকল্পের পানি নিস্কাসনের কালভার্টে মাটি ফেলে তা বন্ধ করে দেওয়ায় আবাসনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন জনের কাছে গিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা।

আশ্রয়ণের সভাপতি ও এখানকার বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন (৫০) জানান,এখানের প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে ছয় সাতজন করে সদস্য। বসবাসকারি প্রতিটি পুরুষ ছোটখাট ব্যবসা, দিনমুজরি, ইজিবাইক চালনা ইত্যাদি নানাধরনের কাজ করে সংসার চালান। এ কারণেই বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেবার কথা বলে প্রায়ই ছবি তুলে নিয়ে যাবার পাশাপাশি টাকাও হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে ইউএনও বরাবর অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

বাসিন্দারা আরও জানান, প্রতিবেশি কৃষক নুরুজ্জামান কালভার্টের দুই পাশের মুখ মাটি ফেলে বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এ কারণে ইতিমধ্যে প্রকল্পের বেশ কয়েকটি সুপারি গাছ মারা গেছে। বাসিন্দারা বলেন, আমার কি মানুষ না? এভাবে আমাদের কষ্ট দেওয়ার কি কারণ থাকতে পারে। নির্মানের পর আবাসনের ঘরগুলোর কোন সংস্কার করা হয়নি। তাই বৃষ্টি হলেই চাল দিয়ে পানি পড়ে। উক্ত বাসিন্দাদের বিনোদনের জন্য ঘরটিও জীর্ণ হয়ে পড়েছে।

কৃষক নুরুজ্জমান বলেন, আবাসন প্রকল্পের নোংরা পানি এসে তাঁর জমিতে পড়ার কারণে তিনি কালভার্টটি বন্ধ করে দিয়েছেন। পুকুর মালিক আব্দুল কাদির ও জেসমিনের ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া জানান, আবাসন প্রকল্পের চারপাশেই তাঁদের জায়গা। পুকুরের কারণে আবাসন প্রকল্পের কোন ক্ষতি হচ্ছেনা। তারপরও আমরা আশ্রিতদের মাপামাপি করে সঠিক সীমানা বের করতে বলে দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইলের সহকারি কমিশনার(ভূমি) এটিএম আরিফ জানান, একবার লিখিত অভিযোগ পেয়ে ওইখানে সার্ভেয়ারকে পাঠানো হয়েছিল। পরে কি হয়েছে তা জানা নেই। এখন খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *