নিরবে বিপন্ন দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়  জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর                                    

সাইফুল আলম (ছদরুল)ঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিশাল জায়গা জুড়ে টাঙ্গুয়ার হাওর৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ হাওর পরিযায়ী পাখি আর মাছের অভয়ারণ্য৷ বর্ষা মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরের পুরোটাই পানিতে তলিয়ে থাকে৷ শীত এলে পানি কমতে শুরু করে৷ ভরা শীতে হাওরের পানি তলানিতে ঠেকে৷ তখন হাওরের বড় একটা অংশই শুকিয়ে যায়৷

টাঙ্গুয়ার হাওরের বিস্তৃতি ধর্মপাশা ও তাহিরপুরের দশটি মৌজা নিয়ে৷ ছোট-বড় ১২০ টি বিল নিয়ে এ হাওর৷ দুই উপজেলার ৮৮টি গ্রামসহ পুরো টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার আয়তন প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ২৩৬ হেক্টরই জলাভূমি৷

টাঙ্গুয়ার হাওরে আছে ১৫০ প্রজাতিরও বেশি স্বাদু পানির মাছ৷ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রুই, কালি বাউশ, কাতল, আইড়, বোয়াল, গাং মাগুর, বাইম, তারা বাইম, গুলশা, গুতুম, টেংরা, তিতনা, গজার, গরিয়া, বেতি, কাকিয়া ইত্যাদি৷ টাঙ্গুয়ার হাওরের রুই ও কাল বাউশ মাছের স্বাদ অতুলনীয়৷

প্রায় ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১৫০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ, ৩৪ প্রজাতির সরিসৃপ ও ১১ প্রজাতির উভয়চর প্রাণীর আবাসস্থল এই টাঙ্গুয়ার হাওরে৷ প্রতি বছর শুধু শীতকালেই পৃথিবীর বিভিন্ন শীত প্রধান দেশ থেকে আরো প্রায় ২০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা এ হাওরকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নেয়৷

সকলের জানা প্রয়োজন- মাছ, গাছ আর পাখির  সাথে মিলে  মিশে টাঙ্গুয়ার হাওরের   ৮৮টি গ্রামের মানুষের ছিল  বসবাস  ।টাঙ্গুয়ার হাওর ঘিরে ছিল তাদের জীবন ও জীবিকা । প্রকৃতির নিয়মের সাথে ছিল তাদের পরিচয় । তাঁদের তত্বাবধানে লাগানো হয় সারি সারি করচ গাছ । মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রধান ভুমিকা ছিল এই হাওরবাসীর ।এঁদের আশ্রয়ে পরিযায়ী পাখিরা ছিল নিরাপদ ।

১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে সরকার। এরপরই হাওরে দীর্ঘ ৬০ বছরের ইজারাদারির অবসান হয়। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি টাঙ্গুয়ার হাওরকে রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়।

সরকারি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০০৬ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কাজ শুরু করে।

ধারাবহিক ভাবে উন্নয়নের সম্মিলিত সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মৌমাচির মত টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশকরে ,এফআইবিডিবি,আশা, সানক্রেড, সিএনআরএস,ইরা, আরও কত বাহারি নামের এনজিও সংস্থা ।হাওর পাড়ের ৮৮টি গ্রামের মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার হয়,জীববৈচিত্র রক্ষা হবে,তাঁদের জীবন মানের উন্নতি হবে, বিকল্প আয়ের পথ হবে । এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হয়, তথা কথিত দাতা সংস্থা,উন্নয়ন সহযোগী নামের দেশী- বিদেশী  বেসরকারী সেচ্ছাসেবী  সংগঠনের জীববৈচিত্র সংরক্ষন,জেলে- কৃষক পরিবারের জীবনমান উন্নয়নের মহরা। আর উন্নয়ন সহযোগীদের উন্নয়নের জোয়ারে টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছ ,পখি ও জলজ উদ্ভিদ এখন বিপন্ন !! সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনার শ্লোগানের বৈপরিত্যই বর্তমানে দৃশ্যমান । টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছ, গাছ আর পাখির  বিবরণ মিথ বা পৌরানিক কাহিনীর মত এখন মনে হয় । জীববৈচিত্র রক্ষা,টাঙ্গুয়ার হাওরে সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা  শুধুই যে চাতুর্যপূর্ণ কথা ও শব্দের ব্যবহার বুঝতে সময় লাগেনি এলাকার মানুষের ।

হাঁ, টাঙ্গুয়ার মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান হয়েছে, তবে হাওরে নয়, জীবিকার তাগিদে গাজীপুর, টঙ্গী, গাজীপুর, চট্রগ্রাম, নারায়নগঞ্জের গার্মেন্টসে অথবা হোটেলে কিংবা শপিংমলে ওঁদের বিকল্প কর্মসংস্থান হয়েছে । টাঙ্গুয়ার লোকজন জানিয়েছেন ,এনজিওর মাধ্যমে এলাকার কিছু চতুর, দুষ্ট, অসৎ চরিত্রের মানুষকে সংগঠিক করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে । যাদের সার্বিক তত্বাবধানে বর্তমানে মাছ-পাখি নিধনের চলছে নির্বিচার  মহোৎসব । উন্নয়নের আরও একটি রুপ সবার নজরে আসে । হাওর পাড়ের শিশুরা পর্যটকদের নিকট চা –বিস্কুট, পান সিগারেট বিক্রি করে। যাদের বয়স এখন স্কুলে যাবার। মাছের স্বর্গরাজ্যখ্যাত টাঙ্গুয়ার লোকজন এখন পুকুরের মাছ কিনে খায় ।ই সি এ এলাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলে,উচ্চসুরে গান-বাজনা হরদম ! হাওরে প্লাষ্টিকের বোতল,পলিথিন ব্যাগ ফেলা হচ্ছে নিত্য। সবই সম্ভব হয়েছে এনজিও নামের সংগঠনের বদৌলতে ! এলাকার মানুষের মুখে শোনা যায়, টাঙ্গুয়ার দায়িত্বে কর্মরত আনসাররা ঘুষ বাণিজ্যে লিপ্ত। তারা চাকুরীর ভয়ে সরাসরি ঘুষ গ্রহন করেন না । তাদের বিশ্বস্ত এজেন্ট আছে হাওরে প্রচুর ।

জেনে রাখা দরকার,এই দাতাগোষ্ঠী ও উন্নয়ন সহযোগীরা বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ এবং জাতিসংঘের গর্ভজাত সন্তান ।দারিদ্র বিমোচনের নামে উন্নয়নের এই শ্লোগান প্রথম ধ্বনিত হয় ১৯৭৩সালে। তৎকালীন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব ভিয়েতনাম যুদ্ধে গণহত্যার মূলহোতা ম্যাকনামার বক্তৃতা থেকে। ম্যাকনামারা অর্থনীতির ছাত্র তিনি বহুজাতিক কোম্পনীর স্বার্থ সংরক্ষনে পুঁজিবাদি অর্থ শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান রাখেন । দাতা সংস্থা ও উন্নয়নসহযোগীর ছদ্মাবরণের মাধ্যমে অনুন্নত দেশের সম্পদ দখল -লুন্ঠন এবং অনুন্নত দেশের জাতীয় পুঁজির বিকাশ রুদ্ধ করে বহুজাতিক কোম্পানীর স্বার্থ সংরক্ষণে উন্নত কৌশল তাঁরই অবিস্কার ।

পূর্বের টাঙ্গুয়ার চিত্র বনাম আইইউসিএনর কিছু তূলনা  থেকে এনজিওদের টেকসইউন্নয়নের ফাঁকা বুলির চিত্র পাওয়া যায় ।২০০২ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখী সমাবেশ ঘটে ২,২৪,৯৮০ টি, ২০০৩ সালে ২,০১,১০৬ টি ২০০৪ সালে ২,৭০,৭৬১টি ৷২০১২ সালে আইইউসিএন আমলে পাখী সমাবেশ ঘটে ১৪,৮৭৬ টি, ২০১৩ সালে ২৭,২০৪টি, ২০১৪ সালে ৫২,২৯৯টি ৷

২০০২ সালে  মাছ উৎপাদন হয় ১০ কোটি টাকার ২০০৩ সালে জলমহালটি পাইল থাকে ৷২০০৪ সালে মাছে উৎপাদন হয় ৪৮ কোটি টাকার। ২০০৪ সালে মাছ উৎপাদনের পরিমান ছিল ৮০০০ মে: টন। ২০১২ সালে আইইউসিএন আমলে মাছ উৎপাদন হয় ১৬,৭৫,৩৭৪ টাকা র। ২০১৩ সালে জলমহালটিতে মাছ ধরা হয়নি ,২০১৪ সাল আইইউসিএন ৩৩,৫৬,২০৩ টাকার মাছ উৎপাদন করে।

২০০২ সালে হিজল করচ গাছ লাগানো হয় ৬০,০০০টি ২০০৩ সালে হিজল করচ লাগানো হয় ৮০,০০০টি। ৪৮৮৩ হেঃ কান্দা এবং নীচু জমিতে নিবিড় নল খাগড়া ছিল। কড়া পাহারা ব্যবস্থার ফলে কেউ বন কাটতে সাহস পেত না।

কাঠা বাঁশ দিয়ে মাছের আবাস স্থল গড়ে তোলা মুক্ত জলাশয় অঞ্চলে একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। ইজারা ব্যবস্থায় ২০০২ সালে ৯০হাজার বাঁশ এবং ২৭০ জুড়িন্দা কাঠা বিভিন্ন বিলে স্থাপন করা হয়। বিল নার্সিং এর মাধ্যমে ১০ কোটি কার্প জাতীয় পোনা অবমুক্ত করা হয়।

আইইউসিএন ২০১৪ সাল ৪৭৫৯টি বাশ স্থাপন করা হয় এবং ৫৭২টি হিজলের ডাল কাঠা হিসেবে বিলে ফেলা হয়। ৬২৫০৪টি পোনা বিলে অবমুক্ত করা হয়। ৮৪৮২ হিজল করচের চারা রোপন করা হয় । টাঙ্গুয়ার হাওরের লোকজনের ভাষ্যমতে, মাছ-পাখি-বন এখন উজার ।টাঙ্গুয়ার হাওর জুড়ে এখন শুধু দীর্ঘশ্বাস। পূর্বে টাঙ্গুয়ার রক্ষায় পাহারাদার ছিল ৭০০ এর অধিক কিন্তু বর্তমানে ১জন মেজিষ্ট্রেট ও ২৪ জন আনসার আছেন এতবড় এলাকা নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে ।টেকসই ব্যব্স্থাপনার কি চমৎকার নিদর্শন !

২২ এপ্রিল ২০১৮ইং সালেই “দৈনিক প্রথম আলো”  এর প্রতিবেদনে বলা হয়-‘‘টাঙ্গুয়ার হাওরের কারণে সুনামগঞ্জকে বলা হয় ‘হাওরকন্যা’। এটি আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত দেশের দ্বিতীয় ‘রামসার সাইট’। প্রথমটি সুন্দরবন। হাওরের সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণে কাজ করছে প্রশাসন। পাশাপাশি রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগও। তবে উদ্যোগে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি।“ শুধু টাঙ্গুয়ার হাওরে নয়, দাতা সংস্হা বা উন্নয়ন সহযোগীদের প্রনীত প্রকল্পে বিশ্বের অনুন্নত দেশের কোথাও কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি ।

উন্নয়ন সহযোগীরা শুধু টাঙ্গুয়ার হাওরে নয়,টেকসই উন্নয়নের কাজ তারা দেশের অন্যান্য জায়গায়ও করেন , শুধু বাংলাদেশেই নয় তাদের কাজের বিস্তৃতি বিশ্বের সকল অনুন্নত দেশেই ।তাদের উদ্ভব ও বিকাশের মূলে, ব্শ্বি ব্যাংক, আইএমএফ,ও জাতিসংঘের মত প্রতিষ্ঠান । এই দাতাগোষ্ঠীরা কখনও দারিদ্র বিমোচন প্রকল্পের নাম দিয়েছেন:  পিআরএসপি,অথবা টেকসইউন্নয়ন (এসডিজি),মিলেনিয়াম ডেভেলাপমেন্ট গ্রোথ(এমডিজি )।

তাঁদের  কর্মযজ্ঞের  প্রান- প্রকৃতি বিনাশী স্বরুপ যখন উন্মোচিত হয়ে যায়,  বিশ্বজুরে তখনই  শুরু হয়  প্রতিবাদ- প্রতিরোধ । আর তখনই পরিবর্তন হয় নামের কিন্তু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিবর্তন হয় না, শুধু  খোলসটা পাল্টে ফেলেন উন্নয়ন সহযোগীরা । এঁদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সরল বিবরণ পাওয়া যাবে নিচের উদ্ধৃতি থেকে –‘‘বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ১৯৯৮ সালে বোর্ড অব গভর্নরসের সভায় বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি প্রবাহ স্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন, এরকম সভায় সাধারণত বিশ্ব ব্যংকের এক বছরের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয় । কিন্তু “যখন পুরো গ্রামপুড়ে যাচ্ছে তখন ঘরের হিসাব নিকাশ অর্থহীন“ । তিনি এক বছর আগের ‘তুলনামূলক ভাল ‘‘আশাবাদী‘ অবস্থার উল্লেখ করে বলেছেন,সবগুলো ক্ষেত্রেই অবস্থার অবনতি হয়েছে । এশিয়ার ২ কোটিরও বেশী  মানুষ নতুন করে দারিদ্রে্র মধ্যে পতিত হয়েছে ।রাশিয়ার শতকরা ৪০জন এখন দারিদ্র্যের মধ্যে পতিত হয়েছে । ১০লক্ষেরও বেশী শিশু,পূর্ব এশিয়ায় স্কুল পরিত্যাগ করেছে অর্থনৈতিক কারনে । নতুন নতুন এলাকা পারমাণবিক তৎপরতার আওতায় এসেছে । পুরো বিশ্বের ১৩০ কোটি মানুষ দিন প্রতি ১ ডলারের কম আয় করেন ,৩০০ কোটি মানুষ আয় করেন ২ ডলারেরও কম । “(বিশ্বায়নের বৈপরিত্ব ;আনুমুহাম্মদ পৃষ্ঠা-৪০) ।

সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে সমাজ ভিত্তিক টেকসই উন্নয়ন সংগঠন ও সরকারী বেসরকারী দায়িত্ব প্রাপ্তদের কারোরই  বিপন্ন টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে জনগণের নিকট  জবাবদিহি করতে হয়না! টাঙ্গুয়ার পাড়ের মানুষকেই রক্ষা করতে হবে হাওরে জীববৈচিত্র, মাছ পাখি বন ।বিশাল এই প্রাকৃতিক সম্পদ শুধু টাঙ্গুয়ার মানষের সম্পদ নয়, ইহা জাতীয় সম্পদ ।টাংগুয়ার হাওড় শুধু একটা ইউনিক ইকো সিস্টেমই নয় একটা বিশেষ অর্থনৈতিক জোনও বটে ৷ টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ উৎপাদন,পাখি সংরক্ষন ও জীববৈচিত্র রক্ষার ইতিহাস ও ঐতিতহ্য আছে, আর সেই ইতিহাস সমৃদ্ধির ইতিহাস ।এই ইতিহাসের স্রষ্টা  টাঙ্গুয়র মানুষ ।টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রতিষ্ঠিত করতে  হবে  প্রকৃতির প্রকৃত রক্ষকদের  অধিকার ।২০০০ সাল হতে ২০২১ইং পর্যন্ত ইতিহাস হল মাছ,পাখি বন উজাড়ের ইতিহাস ।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে হবে টাঙ্গুয়ার সমস্যার কারণ । বাস্তব অভিজ্ঞতা হল দাতা সংস্থা,উন্নয়ন সহযোগীদের ধারনাপত্রে কিংবা সমাজ ভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনার মন্ত্রে টাঙ্গুয়ার হাওরে ধ্বংস ব্যতিত উন্নতি হয়না ।প্রকল্প-বাস্তবায়নজনিত দুর্বলতাকে পুঁজি করে জলসর্দার কিংবা প্রভাবশালী একটি পক্ষ ইজারাপ্রথার পক্ষে সাফাই গাইতে পারেন। সেই প্রচেষ্টা সবসময়ই চালু ছিলো, আছে ও থাকবে। কিন্ত নতুন করে কোন এনজিও সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া যাবেনা ।দ্বায়িত্ব নিতে হবে এলাকার প্রকৃত রক্ষক ও সরকারের যৌথভাবে ।আমদের দেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে যারা মৎস্য বিষয়ক ডিগ্রি নিয়ে  মৎস্য বিভাগে কর্মরত গবেষক তাদের দ্বারাই সম্ভব টাঙ্গুয়ার হাওরে উৎপাদন বৃদ্ধি করা ।অভিজ্ঞ মৎস কর্মকর্তাকে দিতে হবে দায়িত্ব । প্রয়োজন সরকারী উদ্যোগ ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা । দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে বেগবান করার ক্ষেত্রে এ অর্থনীতির পরিচর্যা করা জরুরি। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের এ সম্পদের সংরক্ষণ, আহরণ ও বিপণন ব্যবস্থায় প্রাণ সঞ্চার করতে হবে।টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রান-প্রকৃতি রক্ষায় নতুন কোন সংস্কার নয়,প্রয়োজন নতুন মেগা প্রকল্প ।

বাংলাদেশে সত্তরের দশকে যেখানে মৎস্য উৎপাদন ছিল ৬৫ হাজার মে: টন,সেখানে সরকারী উদ্যোগ এবং মৎস বিশেষজ্ঞদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ৪৫ লক্ষ মে: টন উৎপাদন সম্ভব হয়েছে । সঠিক পরিকল্পনা ও আমাদের দেশীয় মৎস্য বিশেষজ্ঞ দের দায়িত্ব দিলে টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছের উৎপাদন দ্বিগুন করা সম্ভব ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *