মানবাধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব

মানবাধিকার শব্দটি ছোট হলেও এর অর্থের ব্যপ্তি অনেক বিস্তার। নারী-পুরষ ও শিশু নির্বিশেষে সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মানবাধিকারের প্রভাব অনস্বীকার্য। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার স্মরণে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস উদযাপিত হয়। ঐ ঘোষণাপত্রটিই ছিল মানবজাতির অবিচ্ছেদ্য অধিকারের প্রথম বৈশ্বিক ঘোষণা। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবস পালিত হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক মানবাধিকার সংগঠন দিবসটি পালন করে থাকে। জাতীয় স্থানীয় প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব বহন করে দিবস সম্পর্কে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। দিবসের গুরুত্ব সমস্যা সম্ভাবনা এবং মানবাধিকারের বাস্তবায়ন দাবি করে সভা সমাবেশ, র‌্যালি সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গুরত্বের সাথে আলোচিত ও অবহেলিত প্রসঙ্গটির নাম মানবাধিকার। ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালনে যতটা থাকে আনুষ্ঠানিকতা তার সামান্যতম অংশ বাস্তবায়িত হলে বিশ্ব থেকে নির্বাসিত হত বিচার বহিভূত হত্যা, শিশু ও নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস, ছিনতাই, রাহাজানীসহ হাজারো অপরাধ। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ পুরো বিশ্ব। এই শুভদিনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মানুষ আশা করে যে আজ থেকে পৃথিবীর কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না এবং জাতি-বর্ণ-লিঙ্গ বা ধর্মীয় বিশ্বাস ইত্যাদি পার্থক্য বিবেচনা না করে সব মানুষকে সমান মর্যাদায় গণ্য করা হবে। এমনকি আমাদের সাংস্কৃতিক পরিম-লে মানবাধিকারের চেতনা তুলে ধরতে পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রে মানবাধিকার উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাশাপাশি জনবল-সংকট ও আইনগত দুর্বলতা রয়েছে। যদিও জনবলের অভাবের কারণে, মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে দেশের সর্বস্তরে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বিদ্যমান বিচারব্যবস্থায় সাধারণ নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। কিন্তু তারপরও আদালত ছাড়া উপায় নেই। এতে করে জনবহুল একটি দেশের জন্য আনুষ্ঠানিক বিচারালয়ে শুধু মামলার জটই বাড়ছে না। বিলম্বিত হচ্ছে ন্যায়বিচার। তাই কাজেই, কমিশনকে সদিচ্ছা ও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। আলোচনা-র‌্যালি-বক্তৃতা-পথসভার মাধ্যমে ঘটা করে মানবাধিকার দিবস পালন না করে, আশপাশের মানুষজনকে তাঁদের প্রাপ্য ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা যেতে পারে। মানবাধিকার মানবকল্যাণ এবং শান্তিময় পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব নেতাদের একযুগে কাজ করার মাধ্যমে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপন সফল হোক। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *