মৃত্যুঞ্জয়ী বিপ্লবী সাহিত্যিক সোমেন চন্দ

অঞ্জন আচার্য:  সোমেন চন্দ- এক অনন্য নাম। ‘তরুণের প্রেরণা’, ‘গল্পকার’, ‘সাহিত্যিক’ কিংবা ‘বিপ্লবী’, যে নামেই তাঁকে ডাকা হোক না কেন, খুব অল্প বয়সের সব কিশোর ও তরুণের জন্য আদর্শ তিনি। বড় স্বল্পায়ু নিয়ে তিনি এসেছিলেন এই পৃথিবীর বুকে। তাঁর জন্ম ১৯২০ সালের ২৪ মে ঢাকার পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গার পশ্চিম পাড়ে শুভাড্ডা ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে, মামার বাড়িতে (তথ্য ভেদে নরসিংদী জেলার আশুলিয়া গ্রামে)। তবে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সোমেন চন্দ (জীবনী গ্রন্থমালা) বইয়ে হায়াৎ মামুদ লিখেছেন, ‘সোমেন চন্দের জন্ম কেরানীগঞ্জ থানার অধীনস্থ পারজুয়ার এলাকায় অবস্থিত ধিতপুর গ্রামে।’ তাঁর বাবার নাম নরেন্দ্রকুমার চন্দ, আর মায়ের নাম হিরণবালা। সোমেন চন্দের পিতামহের নাম রামকুমার। নরেন্দ্রকুমার চন্দের আদিনিবাস ছিল তৎকালীন ঢাকার অন্তর্ভুক্ত নরসিংদী জেলার বালিয়া গ্রামে।

ঢাকার মিডফোর্ড মেডিকেল স্কুল ও হাসপাতালের স্টোর্স বিভাগে চাকরি করতেন নরেন্দ্রকুমার চন্দ। মা হিরণবালা ছিলেন কেরানীগঞ্জের মেয়ে। মাত্র চার বছর বয়সে সোমেন চন্দ তাঁর মাকে হারান। হিরণবালার মৃত্যুর পর নরেন্দ্রকুমার শিশু ছেলে সোমেনকে লালন-পালনের জন্য দ্বিতীয় বিয়ে করার সিদান্ত নেন। অবশেষে ঢাকার অদূরে টঙ্গীর তিন মাইল পশ্চিমে ধউর গ্রামের ডা. শরৎচন্দ্র বসুর মেয়ে সরযূদেবীকে বিয়ে করেন। সোমেন এই সৎমা সরযূদেবীকেই মা বলে জানতেন। আর সরযূদেবীও সোমেনকে নিজের সন্তানের মতো  আদর-স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন। বাবার চাকরির কারণে ঢাকাতেই সোমেনের বেড়ে ওঠা। এখানেই তাঁর শৈশব-কৈশোর ও মানস চেতনা গড়ে ওঠে। সোমেন চন্দ শহরের বাইরে অর্থাৎ গ্রামে একনাগাড়ে কখনো বসবাস করেননি। তবে মাঝে মাঝে তিনি মামাবাড়ি ধউর গ্রামে বেড়াতে যেতেন। তাঁর শৈশব-কৈশোর বেশ খানিকটা সময় কাটে পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে।

সোমেন চন্দের পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারে। বিশেষ করে বাবার কাছে। তারপর পড়েন অশ্বিনীকুমার দত্ত মহাশয়ের কাছে। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষে ১৯৩০ সালে তাঁকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে দেওয়া হয় পুরান ঢাকার পোগোজ হাই স্কুলে। এই স্কুল থেকে ১৯৩৬ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ডাক্তারি পড়ার জন্য ভর্তি হন ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে। কিন্তু খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে অর্থাৎ ডাবল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই পড়াশোনায় ইস্তফা দেন।

বই খোঁজার আগ্রহ থেকেই সোমেন চন্দ পাঠাগারমুখী হন শিশুকাল থেকে। ঢাকার জোড়পুল লেনের প্রগতি পাঠাগার ছিল সাম্যবাদে বিশ্বাসী মানুষদের পরিচালিত। পাঠাগারে পড়তে পড়তে সোমেন বাংলা সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং অনুরক্ত হয়ে পড়েন কার্ল মার্কসের তত্ত্বে। ১৯৩৭ সালে সোমেন প্রত্যক্ষভাবে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই সময় তিনি কমিউনিস্ট পাঠচক্রের সম্মুখ প্রতিষ্ঠান প্রগতি পাঠাগারের পরিচালকের দায়িত্ব নেন। এ সময় তিনি ও তাঁর পরিবার পুরান ঢাকার দক্ষিণ মৈশণ্ডিতে থাকতেন। প্রগতি পাঠাগারের পরিচালক হন তিনি ১৯৩৮ সালে। এ সময় তিনি বিপ্লবী সতীশ পাকড়াশীর মতো আজীবন বিপ্লবী শিক্ষকের রাজনীতি ও দর্শনের পাঠ নেন। রণেশ দাশগুপ্তের সান্নিধ্যে থেকে বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, ম্যাক্সিম গোর্কি, মোপাঁসা, রঁলা, বারবুস, জিদ, মারলোসহ আরো অনেকের লেখা বই পড়েন।

স্কুলজীবন থেকেই গল্প লিখতেন সোমেন। তখন তাঁর প্রকাশিত লেখা বা নতুন লেখার কথা পরিবারের কেউ জানতেন না। ১৯৩৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশ পায় সোমেনের প্রথম গল্প ‘শিশু তপন’। এরপর আরো উল্লেখযোগ্য কিছু লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ওই বছরেই প্রকাশিত হয়। এই ১৭ বছরেই বাংলাদেশে বন্যার যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ভোগ, তা নিয়ে সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে প্রথম উপন্যাস ‘বন্যা’ লেখেন সোমেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় নবশক্তি পত্রিকায়।

সোমেন ‘প্রগতি লেখক সংঘ’-তে যোগ দেন এবং যুক্ত হোন মার্কসবাদী রাজনীতি ও সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে। বাংলা সাহিত্যে প্রথম গণসাহিত্যের ওপর কাজ করেন তিনি। ১৯৪১ সালে সোমেন চন্দ প্রগতি লেখক সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। অনন্য মেধাবী সোমেন চন্দের লেখা সাধারণত প্রগতি লেখক সংঘের সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক সভাসমূহে পাঠ করা হতো। ১৯৪০ সালে তাঁর ‘বনস্পতি’ গল্পটি ‘ক্রান্তি’ পত্রিকায় ছাপা হয়। ১৯৪১ সালের দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে সোমেন গল্প লেখেন দাঙ্গা। মৃত্যুর পর বিভিন্ন গল্প সংকলন ছাপা হয় তাঁর। ১৯৭৩ সালে রণেশ দাশগুপ্ত তাঁর গল্পসমূহের একটি সংকলন সম্পাদনা করেন। তাঁর ‘ইঁদুর’ গল্পটি অনূদিত হয় বিভিন্ন ভাষায়। সোমেন চন্দ পুরস্কারের প্রবর্তন করে কলকাতার বাংলা একাডেমি।

তারুণ্যের গান, সৃষ্টির উন্মাদনা ও বিদ্রোহের অগ্নি জ্বেলে সাহিত্যে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন সোমেন চন্দ। তাঁর সম্পর্কে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘নিজস্ব একটি জীবনদর্শন না থাকলে সাহিত্যিক হওয়া যায় না। সোমেন চন্দ ছিল কমিউনিস্ট। সাহিত্যিক হিসেবেও তার রচনায় নানাভাবে ফুটে উঠেছে কমিউনিজমের জয়ধ্বনি।’

অন্যায়, অত্যাচার, অসঙ্গতি ও অসহায়ত্বের কাছে কখনো মাথা নত করেননি সোমেন। সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। রাজপথে শোষিত মানুষের অধিকার আদায় ও শ্রেণি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার সংগ্রাম আর লেখালেখির মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে আনার অবিচল প্রত্যয়ে তিনি ছিলেন ইস্পাতদৃঢ়। সোমেন চন্দের সাহিত্যে ছিল কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষকে ঘিরে। শোষণ-বৈষম্য থেকে মানুষকে মুক্ত করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য ও স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন সেই শৈশব থেকে। ইস্পাতদৃঢ় সংকল্প নিয়ে শোষণমুক্তির লড়াই-সংগ্রামের পাশাপাশি তিনি সাহিত্যে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন। সোমেন চন্দ এমন একটি মানুষ, যার সৃষ্টি হতাশাগ্রস্ত প্রতিটি মানুষকে জাগ্রত করে নতুন উদ্যমে পথ চলতে সহয়তা করে।

বিপ্লবী রোমান্টিসিজম বা প্রথাগত কমিউনিজমের ফ্যাশনের মোড়কে নয়, সত্যিকারার্থে কমিউনিজম ছিল তাঁর প্রেরণা। কমিউনিজমের দর্শনের আলোয় চেতনাকে শান দিতেন প্রতিনিয়ত। কমিউনিজমই ছিল তাঁর মূল জীবনদর্শন। কলম ছিল তাঁর সংগ্রামের পাথেয়। আর খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ ছিল তাঁর বেঁচে থাকার প্রেরণা ও সৃষ্টির মৌলিক কাঁচামাল। খাঁটি কমিউনিস্ট বলতে যা বোঝায়, সোমেন চন্দ ছিলেন তাই।

নির্মল ঘোষকে লেখা এক পত্রে সোমেন জানিয়েছিলেন, “…আর এই বিপ্লবের অনুভূতি কেবল আমার নয়। আরো অনেক সাহিত্য-সেবকের মনেই জেগেছে মনে হয়, তার মধ্যে অনেকেই প্রকাশ করতে পারছেন, বা অনেকেরই কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে গেছে তথাকথিত সাহিত্য ডিক্টেটরদের গোলমালে। কিন্তু সেই অনুভূতির অস্তিত্ব আছে অনেকের মনেই। এসব দেখে মনে হয়, আগামী ১০ বছরে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হবে একটা উজ্জ্বল অধ্যায়, এটা একটা বৈপ্লবিক অপূর্ব সৃষ্টি।’ সোমেন চন্দের অনবদ্য সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে- শিশু তপন, ইঁদুর, সংকেত, বনস্পতি, দাঙ্গা, সত্যবতীর বিদায়, ভালো না লাগার শেষ, উৎসব, মুখোশ ইত্যাদি গল্প। এ পর্যন্ত তাঁর একটি উপন্যাস, ২৮টি গল্প, তিনটি কবিতা, দুটি নাটকসহ তাঁর লেখা চিঠির সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৩৫ সালের নভেম্বরে লন্ডনে ভারতীয় ও ব্রিটিশ লেখকদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ই এম ফরস্টার, হ্যারল্ড লাস্কি, হার্বাট রিড, রজনী পাম দত্ত, সাজ্জাদ জহির, মূলক রাজ আনন্দ, ভবানী ভট্টাচার্য প্রমুখ। নানা আলোচনার পর তারা একটি ইশতেহার প্রকাশ করেন ডিসেম্বরে। এরই সূত্র ধরে ভারতে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ গঠিত হয়। চার বছর পর ঢাকায় স্থাপিত হয় এর শাখা। লন্ডন বৈঠকে সাহিত্যিকরা এ সংগঠনের নাম ‘প্রগতি সাহিত্য সংঘ’ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যখন ইশতেহার প্রকাশিত হয় তখন প্রস্তাবিত নাম রাখা হয় ‘প্রগতি লেখক সংঘ’। ১৯৩৬ সালের ১০ এপ্রিলের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিখ্যাত হিন্দি লেখক মুন্সী প্রেমচাঁদ। সভায় সংগঠনের নামকরণ করা হয় ‘নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘ’। এর সভাপতি নির্বাচিত হন প্রেমচাঁদ, সম্পাদক সাজ্জাদ জহির।

১৯৪১ সালের ২২ জুন। হিটলার সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করে। বিশ্বযুদ্ধ নতুন দিকে মোড় নেয়। এ সময় ভারত উপমহাদেশের প্রগতিবাদী জনতা ফ্যাসিস্ট হিটলারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং স্তালিনের নেতৃত্বে সংগ্রামরত দেশপ্রেমিক সোভিয়েত যোদ্ধাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে জনযুদ্ধ ঘোষণা করে। এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শান্তির লক্ষ্যে হীরেন মুখোপাধ্যায় ও স্নেহাংশু আচার্যকে আহ্বায়ক করে কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে বঙ্গদেশে গড়ে ওঠে ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় প্রগতি লেখক সংঘের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’। এর যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত ও দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এই সমিতির প্রধান প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটা অন্যতম কাজ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার অগ্রগতি প্রসঙ্গে চিত্রপ্রদর্শনী করা। এই প্রদর্শনীতে প্রগতি লেখক সঙ্ঘের সোমেন চন্দের ভূমিকা ছিল অনন্য। তাঁর অবিরত শ্রমের কারণে ঢাকায় অল্পদিনের মধ্যে প্রগতি লেখক সঙ্ঘ ও সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম  হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ লিখেছেন, ‘সোমেন হত্যার ব্যাপারটি, বিশেষ করে তখনকার পটভূমিতে এবং প্রেক্ষিতে এই হত্যাকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী। সোমেন ছিলেন সে সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন, সোভিয়েত সুহ্রদ সমিত, আর প্রগতি লেখক সঙ্ঘের অনেকখানি।’ ১৯৪২ সালে সোমেন চন্দের মৃত্যুর পর কলকাতায় সম্মেলনের সময় প্রগতি ‘লেখক সঙ্ঘের’ নামকরণ হয় ‘ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘ’। ১৯৪৫ সালে কলকাতায় আবার এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ’।

সোমেন চন্দের মৃত্যু সম্বন্ধে সরদার ফজলুল করিমের স্মৃতিচারণা : ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন বাংলার সব জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ে যার মধ্যে ঢাকা শহর ছিল অন্যতম শক্তিশালী কেন্দ্র। ১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকার বুদ্ধিজীবী, লেখক প্রভৃতি শহরে এক ফ্যাসিবাদবিরোধী সম্মেলন আহ্বান করেন। স্থানীয় জেলা পার্টির অনুরোধে কমরেড বঙ্কিম মুখার্জি ও জ্যোতি বসু সেখানে বক্তা হিসেবে যান। সম্মেলন উপলক্ষে শহরে খুবই উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং রাজনৈতিক মহল প্রায় তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রথম যারা সম্মেলনের পক্ষে, দ্বিতীয় যারা সরাসরি বিপক্ষে, তৃতীয় যারা মোটামুটিভাবে তুষ্ণীভাব অবলম্বন করে নিরপেক্ষতার আবরণ নিয়েছিলেন। শেষোক্তদের মধ্যে প্রধানত কংগ্রেস মতবাদের অনুসারীরা ও দ্বিতীয় দলে ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী, বিশেষত শ্রীসংঘ ও বিভির লোকেরা। যাই হোক, সম্মেলনের দিন সকালে উদ্যোক্তাদের অন্যতম তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দ আততায়ীর হাতে নিহত হন। তিনিই বাংলার ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পরও যথারীতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং আমাদের প্রতি আরো লোক আকৃষ্ট হয়।’

১৯৪২ সালের ৮ মার্চ ঢাকায় এক সর্বভারতীয় ফ্যাসিবিরোধী সম্মেলন আহ্বান করে। তথাকথিত জাতীয়তাবাদী কিছু দল এ সম্মেলন বিঘ্নিত করার চেষ্টা করে। রেল শ্রমিক সাধারণ সম্পাদক সোমেন চন্দ রেল শ্রমিকদের মিছিল নিয়ে যখন সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ওই দিন ঢাকার সূত্রাপুরে সেবাশ্রম ও লক্ষ্মীবাজারের হৃষিকেশ দাস লেনের কাছে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক পার্টির (আরআরপি) গুন্ডারা তাঁর ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। শহীদ হন সোমেন চন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *