তাড়াশে যুবলীগ নেতা ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

 

সাব্বির মির্জা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে উপজেলা আওয়ামীলী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ আলী বিদ্যুত ও তাড়াশ মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিকভাবে হেয়পতিপন্ন করা ও একজন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ লেখকের সাহসী কলম থামিয়ে দিতেই এমনটা করা হয়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী ও সচেতন মহল।

ফরহাদ আলী বিদ্যুৎ বলেন, আমি ১৯ বছর ধরে তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। পৌর শহরের বাজারের হার্ট পয়েন্ট তাড়াশ প্রেসক্লাবের সামনে জনসমাগম স্থানে আমার ব্যক্তিগত দলীয় অফিস। সেখানে দীর্ঘ দেড় যুগেরও অধিক সময় ধরে দলের নেতা কর্মীরা ভীড় জমান বিভিন্ন কাজে। প্রায়ই বিকেল থেকে কখনো রাত ১১ অবধি সেখানেই নেতা-কর্মীদের সমস্যা সমাধান ও দলীয় কর্মসূচী নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়। আবার অনেক নেতৃবৃন্দ এখানে টিভি দেখেন ও চা আড্ডায় মেতে উঠেন।
গত রবিবার (২০ তারিখ) দিবাগত রাত ১০ দিকে ইটালী সাথে ওয়েলস’র ফুটবলা খেলা ছিলো। আমার সাথে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহ- সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ আরো ৬ জন নেতা-কর্মী ছিলেন। এদের চারজন তাস দিয়ে ন্যাশনাল ব্রিজ খেলছিলেন বাজি ধরে (খাওয়া-খাওয়ী)।
তিনি আরো বলেন, আমি শুধু যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নই, আগামী পৌর নির্বাচনের একজন হেবি ওয়েট প্রার্থী। মূলত আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয়পতিপন্ন ও সাধারণ মানুষের মনে আমার সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা তৈরির জন্য র‌্যাবে খবর দিয়ে আমার সামাজিক সন্মান নষ্ট করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তাড়াশ মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদদাতা দুর্ভাগ্যক্রমে সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা, কয়েকদিন আগে আমার নানা’র মুক্তিযোদ্ধা হওয়া না হওয়ার বিষয় নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। গতকাল সোমবার (২১ জুন) ছিলো মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই। যে কারণে আমি আবারো তাকে আমার অফিসে ডেকে আনি। তখন তার জন্য চা অর্ডার করে আমি দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছিলাম। এরই মধ্যে র‌্যাব তাদের আটক করেন। ঐ সময় কোনো রকমের জুয়া খেলা হচ্ছিলো না। র‌্যাব আটজনের মানিব্যাগ থেকে সর্বসাকুল্যে মাত্র ১৬ হাজার টাকা পান। সেখানে অতিরিক্ত কোনো কিছু পাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা।

এদিকে সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা বলেন, একটি সংবাদ প্রকাশ করা নিয়ে আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদ্যুত আমাকে তার অফিসে ডেকে নেন। আমি সেখানে কয়েক মিনিটি বসেছিলাম। আমিসহ আটজনের চারজন সেখানে বসেছিলেন। অথচ র‌্যাব সবার সাথে আমাকেও আটক করেন। তবে পরিচয় পাওয়ার পর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে শেষ পর্যন্ত আর ছাড়েননি।
সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা আরো বলেন, ঘটনা রাত সাড়ে দশটার দিকের। কিন্তু কয়েকটি সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে ভোর রাতের ঘটনা। তাছাড়া, র‌্যাব সেখানে সবার মানিব্যাগের ১৬ হাজার টাকা ছাড়া আর কিছুই পাননি। অথচ সংবাদে প্রকাশ করা হয়েছে, আমার কাছ থেকে একটি মদের বতলও পাওয়া গেছে। যা শতভাগ মিথ্যা। এর আগেও আমাকে ফাঁসানোর জন্য কতিপয় লোকজন এহেন ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু তা থেকে ফায়দা লুটতে পারেননি।
তাড়াশ দক্ষিণ পুস্তীগাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইকলাস হোসেন পিন্টু বলেন, ঘটনাস্থলে তার কোনো উপস্থিতিই ছিলোনা। কেবলমাত্র যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদুতের অনুসারী হওয়ায় তাকেও আটক করার মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

তাড়াশ মডেল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি, দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার চলনবিল প্রতিনিধি এম এ মাজিদ ও সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক নয়াদিগন্তের লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের সংগঠনের সভাপতি কখনো জুয়া খেলেন না। তার কাছে কোনো মদের বতল পাওয়া যায়নি। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার মাত্র। আমরা এমন মিথ্যাচার ঘৃনাভরে প্রত্যখ্যান করছি।

র‌্যাব-১২’র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া অফিসার) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদ্যুতের দলীয় অফিসে যাদের পাওয়া গেছে সকলকেই আটক করা হয়েছে। কে তাস খেলছেন আর খেলেননি সেটা বিবেচ্য বিষয় না। তাদের আট জনের মানিব্যাগ থেকে ১৬ হাজার টাকা ও তাস পাওয়া গেছে। রাত পৌনে ১১ টার দিকে তাদের র‌্যাব অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাড়াশ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলে আশিক বলেন, র‌্যাব যুবলীগ নেতা ও সাংবাদিকসহ আটজনকে থানায় হস্তান্তর করেন। তাদের আদালতে পাঠালে তৎক্ষনাৎ জামিন দেন বিজ্ঞ আদালত।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি, ভাইস চেয়ারম্যান ও তাড়াশ বাজার কমিটির সেক্রেটারী মো. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদ্যুতের দলীয় অফিস একদম জনসমাগম স্থলে। রাতে সেখানে থানা পুলিশ ও নাইট গার্ড পাহারায় থাকেন। সেখানে জুয়া খেলা কোনোভাবেই সম্ভব না। তার সাথে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *