বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব হাতের লেখা ও হাতের ছাপ সম্বলিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হবে

বাবলী আকন্দ ঃ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, চেয়ার ক্ষমতার নয়, দায়িত্বশীলতার জায়গা। যেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা কাজ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন বলেই আজকে দায়িত্বশীলতার চেয়ারে বসে আছেন কর্মকর্তাগণ। তাই দাম্ভিকতা না দেখানোর আহবান জানান। ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস ও মহান বিজয় দিবস ২০২৩ উপলক্ষে ময়মনসিংহের ছোট বাজারে আয়োজিত ১ম দিনের আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। তিনি আরও বলেন যে দেশের মানুষের রাজনীতির সাথে সংস্কৃতির সম্পৃক্ততা থাকে না সেখানে উত্তর প্রজন্ম সঠিকতা পায় না। এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণায় সোনালী স্বপ্নের বীজ বপন করতে হবে। বক্তব্য রাখার সময় বিভাগীয় কমিশনার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি ময়মনসিংহের ৪ টি জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব হাতের লেখা ও হাতের ছাপ সম্বলিত গ্রন্থের মোড়ক আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে উন্মোচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস ও মহান বিজয় দিবস ২০২৩ উপলক্ষে ময়মনসিংহের ছোট বাজারে আয়োজিত ১ম দিনের আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাছির উদ্দীন ইউসুফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ ভুঁইয়া, পিপিএম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন। আলোচকবৃন্দ হিসেবে ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি পরিষদের সিনিয়র সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেকুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ ৭১, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মোমেন, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ এর অধ্যক্ষ আবু তাহের, রাজনৈতিক নেতা কাজী আজাদ জাহান শামীম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এড আবুল কাশেম। আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর সাধারণ সম্পাদক এ বি এম ফজলে রানা ও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিলকিছ আক্তার রুমা।

এর আগে সকালে ময়মনসিংহ মুক্ত দিবসে জেলা প্রশাসন, ময়মনসিংহ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ময়মনসিংহের আয়োজনে পতাকা উত্তোলন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনতার বর্ণাঢ্য ‘বিজয় র‍্যালী’র আয়োজন করা হয়। বিজয় র‍্যালীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা পিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম,সহ সভাপতি এড আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউসুফ খান পাঠানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং জাতির সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও তাঁদের সন্তানগণ। দুপুরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। বিকেলে ও আলোচনা সভার পরে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো( আগামী স্বপ্ন, আনন্দ লহরী সাংস্কৃতিক সংঘ, সঙ্গিতাঞ্জলী শিল্প আসর, বীক্ষণ সাহিত্য আসর,আকুয়া সাংস্কৃতিক সংঘ, স্বরলিপি সাংস্কৃতিক একাডেমি, যাদুশিল্পী আহসান হাবীব, অনসাম্বল থিয়েটার ও ভিশন নাট্যাঙ্গন) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা করে।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন ময়মনসিংহ জেলাকে। সেই স্মৃতি আজও অম্লান ইতিহাসের পাতায়। দেশ স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া ১১ নম্বর সেক্টরের এফজে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থানরত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সম্মিলিত যুদ্ধের পরিকল্পনা করে। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঐ দিনই ক্যাপ্টেন বালজিৎ সিংয়ের অধীনে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকটি কোম্পানি জেলার সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর একের পর এক আক্রমণের পাশাপাশি আকাশপথে যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুপক্ষকে পিছু হটতে বাধ্য করে। ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পর্যায়ক্রমে ফুলপুর, তারাকান্দা, শম্ভুগঞ্জ ও ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে টাঙ্গাইল জেলার ভেতর দিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যেতে শুরু করে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১০ ডিসেম্বর ভোর রাতের মধ্যে তাদের সর্বস্ব নিয়ে ময়মনসিংহ শহর থেকে পালিয়ে যায়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মুক্তিকামী শহরবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে। সর্বস্তরের জনতা মুক্তির আনন্দ মিছিল নিয়ে একযোগে স্থানীয় সার্কিট হাউজ মাঠে জড়ো হতে থাকেন। সেখানেই ওড়ানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় লাল-সবুজ পতাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *